Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুদক আতঙ্ক সরকারি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানে

| প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম


১৪ প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি অনুসন্ধানে নামছে বিশেষ টিম
মালেক মল্লিক : দুদক আতঙ্ক সরকারি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানে। রাষ্ট্রের সেবাধর্মী গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি অনুসন্ধানের ও নজরদারি বাড়াতে ১৪টি বিশেষ টিম নামছে। তারা সরকারি দপ্তরের সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং ও সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান করবে নবগঠিত বিশেষ টিম। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রাথমিক তথ্যের প্রমাণ  পেলে তা তদন্ত করে মামলাও করবে তারা। গতকাল বুধবার এই বিশেষ টিমের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই দিনে দুদকের একটি বিশেষ টিমও প্রবাসী কল্যাণ ভবনে যান। একের পর এক দুদকের বিভিন্ন কর্মসূচির ফলে সরকারি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের দুদক আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর আগে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সরকারি দপ্তরে দুর্নীতির ‘গ্রে এরিয়ার’  খোঁজে দুদক মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর চিঠি পাঠায় রাষ্ট্রের একমাত্র দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি মাসে ৮ তারিখে রাজধানীর ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তির  ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে চিঠি পাঠায়। সর্বশেষ হাল নাগাদ করা হলো দুর্নীতির অনুসন্ধানে বিশেষ টিম।
এ প্রসঙ্গে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল ইনকিলাবকে বলেন, ১৪ সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি উৎস অনুসন্ধানে বিশেষ টিম গঠন করেছে দুদক। তারা মূলত, দুর্নীতির উৎস, দুর্নীতি  কেন হচ্ছে সবশেষ তারা দুর্নীতি প্রতিরোধে সুপারিশ করবে। তিনি আরো বলেন, এতে করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের হরয়ানি ও দুর্নীতির মুক্ত সেবা পাবেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ১৪টি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক। গতকাল  বিকেলে কমিশনের নির্ধারিত বৈঠকে এ ১৪টি কমিটির অনুমোদন  দেয়া হয় বলেও জানা যায়। প্রতিষ্ঠান হলো, তিতাস গ্যাস, বাংলাদেশ  রেলওয়ে, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, গণপূর্ত অধিদফতর, সিভিল এভিয়েশন, বাংলাদেশ বিমান, কাস্টমস্ ভ্যাট এক্সারসাইজ, আয়কর অধিদফতর, বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসি, বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ, মহাহিসাব নিরীক্ষক অফিস (এজি অফিস), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, ওয়াসা, ঢাকার সব সাব  রেজিস্ট্রার অফিস।  একজন পরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্যের পৃথক এ টিমগুলো তৈরি করা হয়েছে। এ টিমগুলো ১৪টি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করবে। এছাড়া সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ  পেলে তা অনুসন্ধান করবে। শুধু তাই নয়, দুর্নীতির প্রাথমিক তথ্যের প্রমাণ  পেলে  সেটি তদন্ত করে মামলাও করবে এ টিম।
প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-নীতি, সেবাসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য খতিয়ে দেখবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির উৎস ও কারণ চিহ্নিত করা, দুর্নীতি বন্ধে কী কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে দুর্নীতিরোধ করা যায়, সে বিষয়েও সুপারিশ করবে এ টিম। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ পাওয়া  গেলে তবে তা অনুসন্ধানের অনুমতি, সুপারিশসহ কমিশনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।
এছাড়া টিমগুলোর টিমগুলো ওইসব প্রতিষ্ঠানের আইন, বিধি, পরিচালন পদ্ধতি, সরকারি অর্থ অপচয়ের দিকগুলো পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করবে। এসব বিষয় উল্লেখ করে ত্রিশ কার্যদিবসের মধ্যে টিমগুলোকে সুপারিশসহ সারসংক্ষেপ  পেশ করতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর ভর্তির  ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে রাজধানীর ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে চিঠি পাঠিয়েছে (দুদক)। এর আগে গত বছর শেষের দিকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ক্রয়-প্রক্রিয়া, জনবল নিয়োগ, প্রকল্প গ্রহণে অনিয়মের পথ বন্ধের নজর  দেয় (দুদক)। এদিকে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ  ঘোষণা করেছেন, যেসব দপ্তরে অধিক দুর্নীতি হয় বলে জনশ্রুত রয়েছে, সেখানে ফাঁদ পেয়ে দুর্নীতিবাজদের ধরা হবে। নতুন বছর হবে দুর্নীতিবাজদের জন্য আতঙ্কের। তার অংশ হিসেবে গতকাল দুর্নীতির বিষয়ে একটি অভিযোগের দুদকের প্রতিনিধি দল জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়ে পরির্দশনে যান। দুদকের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি টিম সরকারি ওই প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতি আছে কিনা খোঁজ-খবন নেন। এদিকে হঠাৎ করে দুদক কর্মকর্তারা বিএমইটির ডিজির রুমে থাকা অবস্থায় দ্রুত খবরটি প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। পরে দুদকের মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরীর সাংবাদিকদের বলেন, দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে বর্তমান কমিশন শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অবলম্বন করবে। উপযুক্ত প্রমাণাদি পেলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরো বলেন, বিএমইটির কাছ থেকে মানুষ যাতে ভালো সেবা পায়, মোটা দাগে প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতির কারণে মানুষ যাতে সেবাবঞ্চিত বা হয়রানির শিকার না হয়, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও  গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকালও রাজধানী  থেকে সিনফা নিটার্স লিমিটেড-এর এমডি মনসুরুল হককে গ্রেফতার করছে দুদক। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমান দুদক চেয়ারম্যান আসার পর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের দুদক আতঙ্ক বিরাজ করছে। এইভাবে একের পর এক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও  আমাদের দেশের বিভিন্ন দুর্নীতি বন্ধ হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ