Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চট্টগ্রাম নগরজুড়ে বিশৃঙ্খলা

দখলমুক্ত হচ্ছে না সড়ক ফুটপাত : চরম জনদুর্ভোগ

| প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম মহানগরীর সড়ক ও ফুটপাত হকারমুক্ত করা যাচ্ছে না। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে সড়ক ও ফুটপাত জঞ্জালমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিল পুলিশ। তবে সে ঘোষণা কার্যকর করা যাচ্ছে না। এতে করে নগরবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই। হকারদের পসরা ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়ক দখল করে নিয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় রাস্তার উপর চলছে বেচাকেনা। এতে করে নগরীর ব্যস্ততম মোড় ও পয়েন্টে তীব্র যানজট হচ্ছে। যানজটের সাথে জনজট মানুষের দুর্ভোগকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের কঠোর অবস্থানের কারণে দীর্ঘ দিন পরে হলেও বিলবোর্ডের জঞ্জালমুক্ত হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরী। ফুটে উঠেছে পাহাড় ঘেরা নগরীর দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তবে সড়ক ফুটপাত জঞ্জালম্ক্তু হয়নি। মহানগরীতে যানজট স্থায়ীরূপ নেয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে সড়ক আর ফুটপাতের জঞ্জাল। মহানগরীতে এ সমস্যা দীর্ঘ দিনের।
প্রতিবছর ফুটপাত দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কখনো বাস্তবায়ন করা যায় না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর নেপথ্যে কারণ ফুটপাতকে ঘিরে বিশাল বাণিজ্য। আর এই বাণিজ্য ধরে রাখতে নেয়া হয় রাজনৈতিক মদত। রাজনৈতিক দলের ক্যাডার মাস্তান, পুলিশ সবাই নিয়মিত চাঁদা নেয় হকারদের কাছ থেকে। ফুটপাতের ব্যবসাকে ঘিরে বিশাল এবং শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ফলে হকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়, আর তা কখনো বাস্তবায়ন হয় না। মহাগরীর সড়ক ফুটপাত জঞ্জালমুক্ত হয় না। মানুষের দুর্ভোগই শুধু বাড়ে।
শীতকালে নগরীতে হকারের সংখ্যা বাড়ে, আর সে কারণে বাড়ে জনদুর্ভোগও। নগরীর কয়েকটি ব্যস্ততম মোড়ে ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খলা নগরীর নিউ মার্কেটকে ঘিরে। মার্কেটের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের ফুটপাতসহ সড়কের একটি অংশ হকারদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়ার পরও ওই সীমানার বাইরে বসেছে অসংখ্য হকার।
এর সাথে রয়েছে অবৈধ গাড়ি পার্কিং। ফলে সড়কের বিরাট অংশ দখল হয়ে গেছে। নিউমার্কেট থেকে শুরু করে জহুর হকার্স মার্কেটের সামনের সড়ক হয়ে আমতলা পর্যন্ত সড়কের বিশাল অংশ হকারদের দখলে। তারা ফুটপাত দখলের পর সড়কের বিরাট অংশ দখল করে নিয়েছে। সড়কের বাকি অংশে বিভিন্ন রুটের বাস, মিনিবাস ও টেম্পু পার্কিং করে রাখা হয়। ফলে যানবাহন চলাচলের জন্য যে টুকু সড়ক অবশিষ্ট আছে, তাতে স্বাভাবিক যানচলাচল বিঘিœত হচ্ছে।
স্টেশন রোড থেকে শুরু করে আমতলা হয়ে রেয়াজুদ্দিন বাজার এবং জুবিলি রোডেও ফুটপাত দখল হয়ে গেছে। নিউমার্কেটকে ঘিরে আশপাশের প্রায় প্রতিটি ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখলে নিয়েছে হকাররা। আবার এসব সড়ক থেকে মহানগরীর বিভিন্ন রুটের যানবাহনও ছেড়ে যাচ্ছে, এতে করে ওই এলাকায় তীব্র যানজট লেগেই আছে। এসব এলাকা হেঁটে পার হওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে এই বিশৃঙ্খলা নগরীর বিশাল অংশে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলী থেকে শুরু করে শেখ মুজিব রোড ও আগ্রাবাদ একসেস রোডের ফুটপাত ও সড়কের একাংশ এতদিন হকারের দখলে ছিল। এখন হকারদের পসরা আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার প্রায় প্রতিটি সড়কে বিস্তৃত হয়েছে। রাস্তা দখল করে রীতিমতো দোকানপাঠ সাজিয়ে বয়েছে ব্যবসায়ীরা।
নগরীর ব্যস্তমত এলাকা জিইসি মোড়, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকাবাজার, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়ক, প্রবর্তক মোড়, ষোলশহর, অক্সিজেন, পাহাড়তলী অলঙ্কার মোড়, এ কে খান গেইট, বড়পুল মোড় এলাকার চিত্র একই রকম। নগরীর অপর ব্যস্ততম মোড় ইপিজেড ও স্টিল মিল বাজার এলাকার চিত্র আরো চরম বিশৃঙ্খল।
চট্টগ্রাম ইপিজেডে দেশি-বিদেশি দুই শতাধিক কারখানায় প্রায় সোয়া দুই লাখ শ্রমিক কাজ করে। সকালে অফিস শুরু আর বিকেলে অফিস ছুটির পর ইপিজেডমুখি সড়কে শ্রমিকের ঢল নামে। আছে হালকা ও ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ। আর এর মধ্যে বেদখল হয়ে গেছে সড়ক আর ফুটপাত। নাবিক কলোনির সামনের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করে সেখানে স্থাপনা তৈরি করে দেয়া হলেও বাকি এলাকার ফুটপাত এখন হকারমুক্ত করা যায়নি।
ইপিজেড মোড় থেকে শুরু করে বন্দরটিলা এবং ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ চৌধুরী কলেজ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের ফুটপাত বেদখল হয়ে গেছে। এতে করে ব্যস্ততম এই এলাকায় রাতে দিনে যানজট লেগেই আছে। ইপিজেড মোড়ের আগে রাস্তার বামপাশে রয়েছে শাকসবজি ও তরকারি আড়ত। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে ট্রাকে তরকারি এনে সেখানে খালাস করা হয়।
আর এসব তরকারি রিকশা ভ্যান, মিনিট্রাক ও ঠেলাগাড়িতে ভরে নগরীর বিভিন্ন বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হয়। এসব কাজ করা হয় রাস্তার উপর। এতে সকাল থেকেই ওই এলাকায় তীব্র যানজট শুরু হয়। দু’টি ইপিজেড ছাড়া ওই এলাকায় রয়েছে অসংখ্য বেরসকরি কন্টেইনার টার্মিনাল এবং অনেক শিল্প কারখানা। আছে অন্তত পাঁচটি কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ওই এলাকার বিশৃঙ্খল অবস্থার কারণে বিমানবন্দর সড়কের বিশাল অংশে যানজট হয়। ফলে ওই সড়কে চলাচলকারীদের প্রতিদিনই দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়। যানজটের কারণে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আগ্রাবাদ পৌঁছতে কখনো এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারি ও ক্রেতারা বিমানবন্দর থেকে বাণিজ্যিক রাজধানীতে প্রবেশ করতেই এই বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি হন।
এতে করে চট্টগ্রাম সম্পর্কে শুরুতেই তাদের নেতিবাচক ধারণা হয়। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম অন্তত বিমানবন্দর সড়কটি যানজটমুক্ত রাখতে হকার আর দখলদারমুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘ দিন থেকে। তবে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
মহানগরীকে নতুন বছরের শুরুতে হকারমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিল মহানগর পুলিশ। এখন পুলিশ বলছে হকারমুক্ত করতে প্রাথমিকভাবে হকারদের রাস্তা থেকে সরিয়ে ফুটপাতে পাঠানো হচ্ছে। এই লক্ষ্যে সিটি করপোরেশন অভিযানও পরিচালনা করছে কোনো কোনো এলাকায়। তবে এতে ফল মিলছে না। সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার কিছুক্ষণ পর তারা ফের আগে জায়গা রাস্তায় ফিরে যাচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হরকারদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে সিটি করপোরেশনের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে পুলিশ।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে এ বিষয়ে বৈঠক করেছেন সিএমপির কমিশনার ইকবাল বাহার। তবে বছরের শুরু থেকে সড়ক দখলমুক্ত করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। হকারদের দাবি পুনবার্সন ছাড়া হকারদের উচ্ছেদ করা যাবে না। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এত বেশি সংখ্যক হকারককে পুনর্বাসন করার মতো অবস্থা নেই। মহানগরীর কিছু কিছু এলাকায় শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে হকারদের ব্যবসা করার সুযোগ দেয়ার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করছে পুলিশ। এর পাশাপাশি নগরীর খোলা জায়গায় হকারদের বসার ব্যবস্থা করার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। তবে হকার নেতারা এসব মানতে রাজি নয়। হকার উচ্ছেদ শুরু হলে তারা রাজপথে নামারও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও ইতঃপূর্বে হকার নেতা ও শ্রমিক লীগের নেতাদের সাথে বৈঠকে হকারদের সড়ক ও ফুটপাত থেকে উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনিও দিনের একটি বিশেষ সময়ে হকার বসার পক্ষে মত দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ