Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আগামী সপ্তাহে সার্চ কমিটি

কমিটির প্রধান হচ্ছেন সাবেক সচিব মো. শহীদুল হক

| প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাবিবুর রহমান : দেশের ১২তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে হচ্ছেন? নির্বাচন কমিশনারই বা কারা হচ্ছেন? এ নিয়ে দেশের সকল রাজনীতিক দলের সংলাপ আগামী ১৮ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। প্র্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের জন্য আগামী সপ্তাহে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটি গঠন করবেন বলে বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটির প্রধান করা হচ্ছে সাবেক  লেজিসলেটিভ ও সংসদ-বিষয়ক সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হককে। বাকি চারজন কারা হচ্ছেন, তা এখনো ঠিক হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তা ঠিক করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল রোববার প্র্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেন, ১৮ জানুয়ারি ইসি পুনর্গঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে প্র্রেসিডেন্টের সংলাপ শেষ হবে। এই সংলাপ শেষ হওয়ার পরই দ্রুত সার্চ কমিটি গঠন করবেন। সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনারদের (ইসি) নাম প্র্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ করবে। কত সদস্য হবে এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, সংবিধানে যেভাবে রয়েছে, সার্চ কমিটি সেভাবেই হবে।
প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন জানান, পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সাথে আলোচনার জন্য গত ১২ জানুয়ারি আটটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রেস সচিব জানান, ১৭ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট খেলাফত মজলিস, জমিয়ত-ই-উলেমা-ই-ইসলাম বাংলাদেশ এবং ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) সাথে আলোচনা করবেন।
নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ এবং এরই অংশ হিসেবে গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি বিএনপির সাথে আলোচনা করেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ (এরশাদ) এ পর্যন্ত তিনি ২৩টি রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করেছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ২৩টি রাজনৈতিক দল আলাদাভাবে প্র্রেসিডেন্টের সঙ্গে ইসি পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা করেছে। ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে সংলাপে অংশ নিতে আটটির বেশি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্র্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপের সময় বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল সিইসি ও ইসি নিয়োগ করতে একটি আইন পাসের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু এবার এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রায়ত প্র্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে ২৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের পর চার সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাবেক সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ এবং চার কমিশনার মো. শাহ  নেওয়াজ, ব্রিগেডিয়ার  জেনারেল (অব.)  মো. জাবেদ আলী, মোহাম্মদ আবু হাফিজ এবং  মোহাম্মদ আবদুল মোবারাক ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করে। পরে আরো একজন যুক্ত হন। সংবিধান অনুযায়ী কমিশনের মেয়াদ পাঁচ বছর। এ হিসাবে আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশনের  মেয়াদ শেষ হবে। পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমাও ঘনিয়ে আসছে। আগাম নির্বাচন না হলে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হবে ২০১৯ সালে। সঙ্গত কারণে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নতুন কমিশনের অধীনে। সেই ধারাবাহিকতায় প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদও সার্চ কমিটি গঠন করতে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের  মেয়াদ ৯ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইসি পুনর্গঠন ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের উদ্দেশে তার প্রস্তাব দেন। ক্ষমতাসীন দল পরবর্তীতে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ওই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। ইসি বিষয়ক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট  রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানান। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল পৃথক পৃথক তারিখে প্রেসিডেন্টকে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত প্রস্তাব দিয়েছে। বিরোধী দল বিএনপিও তাদের প্রস্তাব প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছে।
বর্তমান কমিশনের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অংশ নেয়নি। ওই নির্বাচনে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের  নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক আছে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, এবার দলের পক্ষ থেকে ‘ক্লিন ইমেজের কাউকে  নির্বাচন কমিশনে আনার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে বেশ ক’জনের নামও আলোচনায় চলে এসেছে। সবার নাম এখনো জানা না গেলেও পরবর্তী কমিশনারের তালিকায় বেশ কয়েকজন শিক্ষাবিদ, অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও বিচারপতির নাম রয়েছে।
জানা গেছে, নির্বাহী, বিচার ও প্রতিরক্ষা বিভাগের ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা  শোনা গেলেও তালিকায় যারা রয়েছেন, তাদের অনেকেই লবিংয়ে পিছিয়ে নেই।
এ প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, অনেক দেশে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শ করে কমিশন গঠন করা হয়। এটি একটি ভালো কৌশল। আমরা কমিশনার নিয়োগ আইনের  যে খসড়া  তৈরি করে দিয়েছিলাম,  সেখানে এ কথা বলা ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর মত নিয়ে কমিশন গঠন করা হলে জনগণের আস্থা তৈরি হবে। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সুজন আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি বলেন, জনগণের আস্থা থাকলেও সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাহায্য করেছিল বলেই কিছু কিছু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সাবেক সিইসি শামসুল হুদার মতে, বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ঐতিহাসিক ভুল করেছে। সংসদ বর্জনও এক ধরনের অপসংস্কৃতি। এসবের কারণে গণতন্ত্রের ভীত নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ ও আস্থাযোগ্য কমিশন গঠন করতে হলে একটি পদ্ধতি বের করতে হবে।  সেটি করা হলে ইসির ওপর জনগণের আস্থা  তৈরি হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ