মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : আইএস জেহাদিদের হাত থেকে ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় মসুল-কে মুক্ত করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির সরকারি বাহিনী। সেনাদের দাবি, এরইমধ্যে তারা জেহাদিদের কাছ থেকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মসুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিয়েছে। গত শুক্রবার তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি। ২০১৪ সালে ইরাকের মসুল শহরের দখল নেয় আইএস। এরপর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিজেদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে জেহাদিরা। একজন জেনারেলকে উদ্ধৃত করে ইরাকের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনী মসুল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পুরোপুরি মুক্ত করেছে। সেখানে সরকারি বাহিনী অস্ত্র বানানোর রাসায়নিক পদার্থের খোঁজ পেয়েছে। মসুলের পূর্ব অংশ এর আগেই সরকারি বাহিনী নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তবে পশ্চিমাংশ এখনো আইএসের নিয়ন্ত্রণে। সম্প্রতি আইএসের দেওয়া খবরেই বলা হচ্ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনীর বিমান হামলায় টাইগ্রিসের ওপরকার সবগুলো সেতুই ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে মসুলের বাসিন্দারা যে ব্যাপক দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন তা জানানোই ছিল এর উদ্দেশ্য। তবে উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতে মনে হচ্ছিলো যে, ক্ষতি আসলে ততটা ব্যাপক নয়। ইরাকি বাহিনী আশা করছে, এই সেতুগুলো মেরামত করে মসুল শহরের পশ্চিম অংশে তাদের অভিযানের সময় এগুলোকে কাজে লাগানো যাবে।
এদিকে, মসুলের আইএস নিয়ন্ত্রিত একটি জেলায় গত বৃহস্পতিবার বিমান হামলায় অন্তত ৩০ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার মসুলের পশ্চিমাঞ্চলে বিমান থেকে অন্তত তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। আইএসের সিনিয়র নেতা হারবি আবদেল কাদেরের বাড়িতে ওই হামলা চালানো হয়। তবে তখন আবদেল কাদের বাড়িতে ছিল না। হামলায় হতাহতদের মধ্যে তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যও রয়েছেন বলে জানা গেছে। ওই বিমান হামলাটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোট চালিয়েছে, নাকি ইরাকি বাহিনী চালিয়েছে; তা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেননি প্রত্যক্ষদর্শীরা। আইএস ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুলের দখল নেওয়ার পর সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের আওতায় নিয়ে আসে। বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার সঙ্গে মুক্ত জ্ঞানচর্চার বিষয়টি অপরিহার্যভাবে জড়িয়ে থাকলেও জেহাদিদের দখলীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়টি দাঁড়িয়ে যায় সম্পূর্ণভাবে মুক্ত জ্ঞানের বিপরীতে। সমরাস্ত্র উন্নয়ন আর জেহাদিবাদ প্রসারের হাতিয়ার হিসেবেই মসুল বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহার করতে শুরু করে জেহাদিরা। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালে মসুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি গোপন রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল আইএস। তবে এই বিদ্যাপীঠে এমন কিছু শিক্ষার্থী আর গবেষক ছিলেন, যারা আইএস কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কর্মকা- বাইরের দুনিয়ার মানুষদের জানাতে চাইতেন। এ কাজে তাদের সহায়তা করে নিউইয়র্কভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন-এর সহ-গবেষণা সংগঠন স্কলার রেসকিউ ফান্ড। বেরিয়ে আসে আইএসের ভয়াবহতার চিত্র। জেহাদিদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বর্বরতার চরম রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। প্রাণ গেছে অনেকের। ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ। তবে এসবের মধ্যেই মসুলের বিশ্ববিদ্যালয়টি ঠিকই চালু রেখেছে আইএস। দুনিয়াজুড়ে তারা যে বোমা হামলা চালায় সেই বোমা তৈরি আর এ সংক্রান্ত গবেষণাকর্ম চালানো হতো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের গবেষণাগারে বসে। মার্কিন ও ইরাকি বাহিনীর বরাত দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে এই গবেষণাগারে বসেই আইএস তাদের জেহাদিদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই গবেষণাগারের সুবাদেই তাদের পক্ষে উন্নত মানের বিস্ফোরক তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। সেখানে বহু বিদেশি জেহাদিদের প্রশিক্ষণ বোমা তৈরির দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা ফিরে গেছেন নিজ নিজ দেশে। প্যারিস আর ব্রাসেলসের হামলা থেকেই বোঝা যায় বিস্ফোরক তৈরিতে কতটা দক্ষতা অর্জন করেছে আইএস। মসুল শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরই সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাহিত্য এবং দর্শনের মতো বিষয়গুলো বন্ধ করে দেয় আইএস। তাদের আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, এমন সবকিছুই নিষিদ্ধ করা হয় সেখানে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের বই-পুস্তক পুড়িয়ে দেয়। এরপর তারা সেখানকার প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো ধ্বংস করে দেয়। যেসব গবেষকরা পশ্চিমা দুনিয়া এবং ইরাক সরকারের আস্থাভজন প্রমাণিত হন তাদের মৃত্যুদ- দেওয়া হয় সূত্র : বিবিসি, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।