সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
আ ব্দু স সা লা ম : বকুলপুরের নদীর পাড়ে সপ্তাহে একদিন হাট বসে। আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে লোকজনেরা হাটে কেনাবেচা করতে আসে। গ্রামের লোকজনেরা সপ্তাহের পুরোদিনের বাজার একদিনেই করে ফেলে। তাই বকুলপুরের হাটটি সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। দুলালপুর থেকে বকুলপুরের দূরুত্ব প্রায় ৫/৬ মাইল। মাটির রাস্তা। হাঁটার পথ। কোন ইঞ্জিনচালিত যানবাহন চলাচল করে না। তবে সাইকেল ও রিকশা চলাচল করে। রাস্তার দুই পাশে ফসলের মাঠ, ছোট ও মাঝারি আকারের গাছপালা। ঠিক মাঝামাঝি দূরুত্বে রাস্তার পাশে বড় একটি পাকুড়গাছ পড়ে। ওই গাছের নিচ দিয়েই সবাইকে চলাফেরা করতে হয়। হাটবারের দিন ছাড়া অন্য কাউকে ওই রাস্তায় চলাফেরা করতে দেখা যায় না। ফসলের মাঠে যাওয়ার জন্য চাষিদের শুধু দিনের বেলায় চলাচল করতে দেখা যায়।
বছর দুয়েক আগে পাশের গ্রামের এক কিশোরী পাকুড়গাছের ডালের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। সেই থেকে গ্রামবাসীদের মনের মধ্যে ভয় ঢুকে যায়। তারা আগের মতো ওই রাস্তায় চলাফেরা করতে সাহস পায় না। হাটে যারা যায় তারা সন্ধ্যা নামার আগে আগেই গ্রামে ফিরে আসে। দুই একজনের যদি কোন কারণে ফিরতে রাত হয় তাহলে তারা একত্রে হেঁটে আসে। অনেকের ধারণা ওই পাকুড়গাছে ভূত-পেত্মী বাস করে। গাছেরতলা দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকে তাদের পাখা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে পেয়েছে। গাছের নিকটে এলে তাদের গা ছম ছম করে। অনেকে ভয়ও পায়।
ক’দিন আগে রকু ও নজু সন্ধ্যার পর হাট থেকে ফিরছিল। চাঁদের আলোতে তারা গল্প করতে করতে পথ চলছিল। পাকুড়গাছের একটু কাছাকাছি আসতেই তারা দেখে যে চুলগুলো নিচে ফেলে কোন একটি ভূত ডালের উপর শুয়ে আছে। চুলগুলো এতটা লম্বা ছিল যে প্রায় মাটি ছুঁই ছুঁই অবস্থা। ভূতটির খুব সাহস! রকু ও নজুকে আসতে দেখেও পালায়নি। শুয়েই থাকে। কোন উপায় না পেয়ে তারা ফিরে যায়। দশগ্রাম ঘুরে শেষে দুলালপুর গ্রামে পোঁছায়। তাদের মুখ থেকে সেদিনকার ঘটনা শুনে অনেকে ভয় পেয়ে যায়। তাদের বিশ্বাস ওটা নিশ্চয় পেত্মী হবে। কারণ পেত্মীর মাথায় বড় বড় চুল থাকে। অনেকের ধারণা কিশোরী আত্মহত্যা করার পর থেকে পাকুড়গাছে পেত্মী বাস করতে শুরু করে। এর আগে কখনও মানুষকে ভয় দেখাতে শোনা যায়নি। পেত্মীদের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো তাদের চোখ জ্বল জ্বল করে। কারণ কয়দিন আগেই এর প্রমাণ দিয়েছে গ্রামের হাসু, রশিদ ও হাসেম মিয়া। তারা তিনজন একদিন রাত করে হাট থেকে গ্রামে ফিরছিল। সেই সময় তারা ওই পাকুড়গাছের নিচে কয়েকটি পেত্মীকে ঘোরা ফেরা করতে দেখেছে। যাদের চোখগুলো জ্বল জ্বল করছিল। তারা একটু নিকটে এলেই পেত্মীগুলো কুকুরের মতো রূপধরে তাদের সামনে দিয়ে মাঠের ঝোপঝাড়ের দিকে হাঁটা দেয়। এতে অনেকের ধারণা হয় ওগুলো পেত্মীই হবে।
পেত্মীর ভয়ে দুলালপুর গ্রামবাসীরা অস্থির। তারা হাটবারের দিন সকাল সকাল হাটে যায় এবং সকাল সকাল ফিরে আসে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ দিনের বেলাও পাকুড়গাছের নিকটে যেতে সাহস পায় না। অবশ্য আশেপাশের গ্রামের রাখালরা গরু চরাতে এসে পাকুড়গাছে ওঠে। ডাল ধরে ঝুল খায়। গাছের নিচে খেলা করে। তাদের কোন ভয় লাগে না। তারা পাটের আঁশ দিয়ে বা কখনও ছেঁড়া কাপড় দিয়ে রশি তৈরি করে। তারপর সেই রশি ডালের সাথে বেঁধে দোল খায়। খেলা শেষে আবার সেই রশি ডালের সাথে বেঁধে রাখে। পরের দিন এসে আবার খেলে। তাদের কোন সমস্যা হয় না। তাদেরকে কোন ভূত-পেত্মী ভয় দেখিয়েছে এমন কথা শোনা যায়নি।
দুলালপুর গ্রামবাসীরা একদিন জড় হলো। তারা আলোচনা করলো যে, পেতœীদের ভয় থেকে কীভাবে বাঁচা যায়। এর একটা বিহিত করতেই হবে। কেউ কেউ পরামর্শ দিল আমরা পাকুড়গাছটি কেটে ফেলবো। পাকুড়গাছ কাটা পড়লে নিশ্চয় পেত্মীগুলো ওখান থেকে পালিয়ে যাবে। সমস্যা হল- কার সাহস আছে যে, ওই পাকুড়গাছটি কাটতে যাবে? তাছাড়া পাকুড়গাছটি কাটার পর যদি পেত্মীগুলো আরও রেগে যায়! তখন কী হবে? অবশেষে গ্রামবাসীরা গ্রামের বৃদ্ধ হেকমত চাচার সাথে পেত্মীর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলো। হেকমপেত্মী থাকে তার কী প্রমাণ আছে? গ্রামবাসীরা হেকমত চাচার কাছে একে একে যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরলো। সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো- ক’দিন আগেই রকু ও নজু পেত্মীর চুল দেখেছে। যাহোক, সকলের কথা শুনে হেকমত চাচা তাদেরকে বললো: তোমরা যদি এরপর কোন সমস্যায় পড় বা পেত্মীর চুল দেখ তাহলে আমাকে খবর দিবা। আমি দেখবো এরপর কী করা যায়।
কোন এক হাটবারের দিন ময়রা মতিন হাটে গিয়েছিল মিষ্টি বিক্রি করতে। হাট থেকে ফিরে আসতে তার একটু রাত হয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে সে সাইকেল নিয়ে ওই পথ ধরে আসছিল। ঠিক পাকুড়গাছের কাছাকাছি আসতেই সে পেত্মীর চুল দেখতে পেল। জ্যোৎস্নার আলোতে সে স্পষ্ট দেখলো যে পেত্মীর চুলগুলো বাতাসে দুলছে। সাইকেলের শব্দ শুনেও পেত্মীটা পালাচ্ছে না। শুয়েই আছে। সে দ্রুত সাইকেলটা থামিয়ে দশগ্রাম ঘুরে দুলালপুর গ্রামে ফিরে যায়।
গ্রামে ফিরেই সে হেকমত চাচার সাথে দেখা করে ঘটনাটি খুলে বলল। হেকমত চাচার খুব সাহস। সে কখনও ভূত-পেত্মীর ভয় করে না। হেকমত চাচা তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকজন গ্রামবাসীকে নিয়ে পাকুড়গাছের উদ্দেশ্যে হাঁটা দিল। তার হাতে ছিল বড় একটি লাঠি। পাকুড়গাছের কাছাকাছি আসতেই তারা দূর থেকে সেই পেত্মীর চুল দেখতে পেল। বাতাসে দুলছে। হেকমত চাচা সাহসের সাথে সেই চুলের নিকটে চলে গেল। তার পিছনে ছিল গ্রামবাসী। তারা গিয়ে দেখে ওগুলো আসলে চুল নয়। পাটের আঁশ। রাখাল ছেলেরা দোল খাওয়ার জন্য ওগুলো গাছের ডালের সাথে বেঁধে রেখেছে। এতে পেত্মীর চুলের বিষয়ে তাদের ভুল ভাঙল। তাদের সাথে হাসু, রশিদ ও হাসেম মিয়াও ছিল। তারা চাচাকে বললো: আমরা যে কয়দিন আগে পেত্মীগুলোকে কুকুরের মতো রূপ ধরে মাঠের দিকে যেতে দেখলাম। তাহলে? উত্তরে হেকমত চাচা সকলের উদ্দেশ্যে বলল: শোন। হতে পারে তোমরা হয়তো কুকুর অথবা শিয়াল দেখেছ। কারণ অন্ধকারে তাদের চোখ অল্প আলোতে জ্বল জ্বল করে। আর পাখা ঝাপটানোর কথা যা বলেছো তা হল-পাখির পাখা ঝাপটানোর শব্দ। কারণ এই পাকুড়গাছে অনেক পাখি বাস করে। একটু দূরেই নদী। তাছাড়া শীতকালে অনেক অতিথি পাখি এখানে আসে। তারা এই পাকুড়গাছে অবস্থান করে। পেত্মীর বিষয়ে গ্রামবাসীরা মনের মধ্যে যে ধারণা পোষণ করেছিল তা মিথ্যা প্রমাণিত হলো। হেকমত চাচার কথা শুনে তাদের অনেকদিনের ভুল ভেঙে গেল। সকলের মন থেকে পেত্মীর ভয় দূর হলো। দুলালপুর-বকুলপুরের রাস্তায় চলাফেরা করতে এখন তাদের কোন ভয় লাগে না। এরপর থেকে তাদের কোন সমস্যা হয়নি। গ্রামবাসীরা আবার স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করতে শুরু করলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।