Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশে পৌনে ৮ লাখ হেক্টর জমিতে তেল বীজের আবাদ হচ্ছে

ভোজ্য তেল আমদানি এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস করা সম্ভব

| প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : তেলবীজ উৎপাদনে চাহিদার তুলনায় ব্যাপক ঘাটতির পরেও চলতি মওশুমে দেশে ৭ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম, সয়াবিন, সরিষা, তিল ও তিসিসহ গর্জন তিলের আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে গর্জন তিসির তেল শিল্প কাজে ব্যবহৃত হলেও আবাদকৃত অন্যসব তেল বীজ থেকে দেশে প্রায় ৯ লাখ টনের মত ভোজ্য তেল উৎপাদনের সম্ভাবনার কথা বলছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। তবে আমাদের চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশ ভোজ্য তেল এখনো আমদানি নির্ভর।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরিষাসহ বিভিন্ন তেল বীজের বাগানে ইতোমধ্যেই ফুল এসেছে। বাসন্তী রঙের এসব তেল বীজের ফুল সবার চোখ জুড়াচ্ছে। যদিও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে ভোজ তেলের চাহিদাও ব্যাপক হারে বড়ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু আবাদ ও উৎপাদন বাড়লেও এখন চাহিদার সাথে দেশে উৎপাদিত তেল বীজের উৎপাদনে ব্যাপক ফাড়াক। পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত চিনাবাদাম ও সয়াবিন তেল বীজের সিংহভাগই অন্য কাজে অধিকমাত্রায় ব্যবহৃত হওয়ায় ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে ফাঁড়াক বাড়ছে।
দেশে চলতি রবি মওশুমে প্রায় ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন ও ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে চিনা বাদামের চাষ হচ্ছে। বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী এলাকার চরাঞ্চলে অধিকমাত্রায় সয়াবিনের আবাদ হচ্ছে। চিনাবাদামের আবাদ হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশের বেলে দোয়াশ মাটিতে। চলতি মওশুমে সারা দেশে ১ লাখ ২২ হাজার টন চিনা বাদাম ও দেড় লক্ষাধিক টন সয়াবিন উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সে লক্ষে আবাদও প্রায় সম্পন্ন। উৎপাদিত চিনাবাদামের সিংহভাগই ছোলা বাদাম হিসেবে খাবারের পাশাপাশি সয়াবিন বীজসমূহ হাঁস-মুরগীর খাবার হিসেবেই ব্যবহ্রত হচ্ছে। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলে সয়াবিনের চাষিদের আগাম অর্থ-দাদন দিয়েও তেল বীজসমূহ কিনে নিচ্ছে এক শ্রেণীর ফরিয়ারা যারা মাঠ পর্যায়ে সয়াবিন তেল বীজ সংগ্রহ করে বিভিন্ন পল্ট্রী ফিডের কারখানায় তা সরবরাহ করে থাকে। ফলে এ দুটি অতি গুরুত্বপূর্ণ তেল বীজ দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে তেমন কোন অবদান রাখছে না।
উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ঘাটতি মেটাতে উন্নত তেল বীজ আবাদের তাগিদ দিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগণ। আমাদের ‘কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারী’ ইতোমধ্যে সরিষার ১৬টি, চীনা বাদামের ৯টি, সয়াবিনের ৬টি, তিল-এর ৪টি, সূর্যমূখি’র ২টি, তিসির ১টি ও গর্জন তিলের ১টি করে ‘উচ্চ ফলনশীলÑউফশী’ জাত ও কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত সরিষার এসব বীজ থেকে ১.৪৫-২ টন পর্যন্ত তেলবীজ উৎপাদন সম্ভব। আর এসব বীজে তেলের পরিমাণ ৪০-৪৫% পর্যন্ত হয়ে থাকে। বারি উদ্ভাবিত চীনা বাদাম বীজ থেকে হেক্টর প্রতি ৩ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। এমনকি উফশী সূর্যমূখী আবাদের মাধ্যমেও হেক্টর প্রতি ১.৭-১.৯ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব বলে কৃষিবীদগণ জানিয়েছেন। কিন্তু সারা দেশে এখনো সূর্যমূখীর আবাদ কাক্সিক্ষত মাত্রায় সম্প্রসারণ হচ্ছে না। এমনকি বারি উদ্ভাবিত ৩টি উফশী জাতের সয়াবিন থেকেও হেক্টর প্রতি দেড় টন থেকে সোয়া ২ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। যার মধ্যে তেলের পরিমাণ প্রায় ২৫%। তবে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন চরগুলোতে সয়াবিন ও চীনা বাদাম চাষের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও কোন সমন্বিত উদ্যোগ নেই।
এমনকি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর চরাঞ্চলে উর্বর ও বেলে-দোআশ মাটিতে সয়াবিন এবং চীন বাদামসহ অন্যান্য তেল বীজ আবাদের মাধ্যমে এর উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষিবীদগণ। এতে করে দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদার একটি বড় অংশই মেটান সম্ভব বলেও মনে করছেন মহলটি। পাশাপাশি তিসির আবাদ সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অয়েলের চাহিদাও মেটান সম্ভব হতে পারে। তবে এজন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বারি উদ্ভাবিত উন্নতমানের বীজ ও চাষাবাদ প্রযুক্তি তাদের কাছে পৌঁছানোর কোন বিকল্প নেই।
এমনকি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এবারও সহশ্রাধিক হেক্টর জমিতে গর্জন তিলের অবাদ হয়েছে। বারি ইতোমধ্যেই ‘শোভা’ নামের একটি উচ্চ ফলনশীল গর্জন তিল-এর জাত উদ্ভাবন করেছে। যার হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় দেড় টন পর্যন্ত এবং এসব বীজ থেকে ৪২% পর্যন্ত তেল পাওয়া যায়। গর্জন তিলকে একটি উন্নতমানের ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ তেলের মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় ‘লিনোলিক ফ্যাটি এসিড’এর পরিমাণ প্রায় ৫০%।
দেশে চলতি মওশুমে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে তিসি’র তেল বীজের আবাদ হচ্ছে। যার প্রায় দু’হাজার হেক্টরই হচ্ছে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে। তিসি কোন ভোজ্য তেল নয়। এ তেলকে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল অয়েল’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশের ফরিদপুর, পাবনা, যশোর রাজশাহী, টাংগাইল ও কুমিল্লা  অঞ্চলে বছরে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে তিসি’র আবাদ হয়ে থাকে। বারি ইতোমধ্যে ‘নীলা’ নামের উচ্চ ফলনশীল তিসির জাত উদ্ভাবন করেছে। খরা সহিষ্ণু এ ফসলের উৎপাদন হেক্টর প্রতি ১.১ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
একটি সূত্রের মতে দেশে ক্রমবর্ধমান ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার ভোজ্য তেল আমদানি করতে হচ্ছে। কৃষিবীদদের মতে, উন্নত তেল বীজের আবাদসহ উৎপাদিত তেল বীজ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারলে আমদানি অন্তত এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস করা সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ