Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

যেভাবে হ্যাকারদের নিয়োগ দেয় রাশিয়া

| প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জেনারেল ভ্যালেরি ভি জেরাসিমভ মনে করেন, আজকের বিশ্বে যুদ্ধ ও শান্তির সীমারেখা ঝাপসা হয়ে গেছে এবং গোপন কৌশল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তার মতবাদ জেরাসিমভ মতবাদ বলে পরিচিত। রাশিয়ার ৩৩ বছর বয়সী কম্পিউটার প্রোগ্রামার আলেকজান্ডার বি ভিয়ারিয়া। তিনি মনে করতেন, সাইবার হামলা থেকে মানুষকে রক্ষা করাই ছিল তার কাজ। তবে তার এ ধারণার পরিবর্তন হয়, যখন সরকার তাকে এর উল্টো কাজ, অর্থাৎ সাইবার হামলা চালানোর কাজ করার অনুরোধ করে। মেধাবী এই কম্পিউটার প্রোগ্রামার বলেন, ঢেলে সাজানো রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে হঠাৎ তাকে গত বছর যোগ দিতে বলা হয়। ভিয়ারিয়া বলেন, ওই অনুরোধের জবাবে সামরিক প্রতিষ্ঠানের একজন নির্বাহীকে তিনি বলেন, দুঃখিত, আমি এটা পারব না। ভিয়ারিয়ার কাছে নীতিবিরোধী ও অবৈধ মনে হওয়ায় তিনি ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। তবে এর ফল কী হতে পারে সে ব্যাপারে তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তাই তিনি ফিনল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার পর গত বছর হঠাৎ পালিয়ে ওই দেশটিতে চলে যান। ভিয়ারিয়া ও তার সাবেক চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, এ রকম প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা বিরল।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের বাধ্যতামূলকভাবে সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করতে হয়। তাদের মধ্যে যারা সহিংস কর্মকা- এড়াতে চান, তাদের সাধারণত সায়েন্স স্কোয়াড্রনে মনোনীত করা হয়। সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও হ্যাকার হিসেবে নিয়োগ দিতে চায় রাশিয়া। সরকারি সংবাদপত্র রসিসকিয়া গেজেতায় তালিকাভুক্ত হ্যাকার শিরোনামে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিমন্ত্রী জেনারেল আলেগ ওসতাপেনকো বলেছেন, সাইবার অপরাধ জগতের সঙ্গে যাদের জড়িত থাকার ইতিহাস রয়েছে, তাদেরও সায়েন্স স্কোয়াড্রনসে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। ওসতাপেনকোর ২০১৩ সালের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, সাইবার অপরাধ জগতের ব্যক্তিদের সম্ভাবনাময় বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহারের দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। তবে বিষয়টি আলোচনা সাপেক্ষ। নতুন মতবাদ অনুযায়ী দেশটির সেনাবাহিনীর জেনারেলরা যুদ্ধকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করেছেন। নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী গোলাবারুদের প্রতিযোগিতার চেয়ে যুদ্ধ আরও বেশি কিছু। ক্রেমলিনের স্বার্থে তারা সাইবার যুদ্ধকে একটি কেন্দ্রীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। রাশিয়ার এই সাইবার যুদ্ধ কর্মসূচির বেশির ভাগই গোপনীয়তায় ঢাকা। তবে ভিয়ারিয়ার ক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা এটাই ইঙ্গিত দেয় যে ক্রেমলিন হ্যাকারদের নিয়ে একটি অত্যাধুনিক দল গড়ে তুলতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অভিযোগ করছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণার সময়ে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির তথ্য চুরি করে রাশিয়ার হ্যাকারদের একটি দল। নির্জন বাংকারে কর্মরত সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর না করে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়া সরকারের নিয়োগকারীরা বিপুলসংখ্যক কম্পিউটার প্রোগ্রামারের সন্ধান করছে। কলেজের ছাত্র ও পেশাদার প্রোগ্রামারদের চাকরির প্রস্তাব দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হচ্ছে। এমনকি সাইবার অপরাধ জগতের সম্ভাব্য প্রতিভার খোঁজেও প্রকাশ্যে তৎপরতা চলছে। দেশজুড়ে সামরিক ঘাঁটিতে স্থাপন করা সায়েন্স স্কোয়াড্রনস নামের নতুন গঠন করা ইউনিটে নতুন প্রতিভাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের শুরুর দিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্জি কে শোইগু মস্কোতে এক বৈঠকে বলেছিলেন, তিনি প্রোগ্রামারদের খুঁজছেন।
রাশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম কনতাকতে বিজ্ঞাপনের জায়গা কিনে নেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই যোগাযোগ মাধ্যমে একটি বিজ্ঞাপনী ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, একটি ল্যাপটপ কম্পিউটারের টেবিলের পাশে এক ব্যক্তি সামরিক রাইফেল পরিবর্তন করছেন। পরে দেখা যায়, তিনি ল্যাপটপে টাইপ শুরু করেছেন। পরে ওই বিজ্ঞাপনচিত্রে বলা হয়, আপনি যদি কলেজ থেকে স্নাতক পাস হন, তবে আপনি একজন কারিগরি বিশেষজ্ঞ। আপনি যদি আপনার জ্ঞান ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত থাকেন, তবে আমরা আপনাকে দিচ্ছি সেই সুযোগ। ওই ভিডিওতে একটি সুসজ্জিত অ্যাপার্টমেন্ট দেখিয়ে সায়েন্স স্কোয়াড্রনসের সদস্যদের বলতে শোনা যায়, আরামদায়ক বাসস্থানে বাস করুন। রাশিয়ার সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও মুখ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা দিমিত্রি আলপারোভিচ বলেন, এমন ঘটনা রয়েছে, যেখানে সাইবার অপরাধী গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারাজীবন কখনই শেষ হয়নি। এই ক্রাউডস্ট্রাইক কোম্পানিই ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির হ্যাকিংয়ের ঘটনায় দায়ী ফ্যান্সি বিয়ার নামের সংগঠনকে প্রথম শনাক্ত করে। ২০১২ সালে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগুকে নিয়োগ দেওয়ার সঙ্গে রাশিয়া সাইবার যুদ্ধও জোরদার করে। এর পরের বছরই জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জেনারেল ভ্যালেরি ভি জেরাসিমভের একটি লেখা প্রকাশিত হয়, যা জেরাসিমভ মতবাদ বলে পরিচিতি পায়। এতে বলা হয়, আজকের বিশ্বে যুদ্ধ ও শান্তির সীমারেখা ঝাপসা হয়ে গেছে এবং গোপন কৌশল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তিনি একে অরৈখিক যুদ্ধ বলে বর্ণনা করেন। তার সমালোচকরা একে গেরিলা ভূরাজনীতি বলে উল্লেখ করেন।
রাশিয়ার অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানি ক্যাসপারস্কাইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্টন এম শিনগারেভ বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশই আক্রমণের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে এবং অনেকেই এটা নিশ্চিতও করেছে। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে হ্যাকার নিয়োগের বিষয়টি প্রত্যাশিত বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনি অথবা আমি এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ হতে পারি। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই বাস্তবতা। অনেক দেশই এটা করছে। এটাই বাস্তবতা। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাসহ (এনএসএ) গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কয়েক দশক ধরে কলেজ ছাত্রদের হ্যাকার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আসছে। মাধ্যমিক ও হাইস্কুলের ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী নিয়ে ২০১৫ সালে বিনা মূল্যে গ্রীষ্মকালীন সামার ক্যাম্পের আয়োজন করে জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা। সেখানে ওই শিক্ষার্থীদের হ্যাকিং ও সাইবার প্রতিরক্ষা বিষয়ে মৌলিক শিক্ষা দেওয়া হয়। রাশিয়ার অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানি ক্যাসপারস্কাইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্টন এম শিনগারেভ। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশই সাইবার আক্রমণের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। ২০১৩ সালে রাশিয়ায় হ্যাকার নিয়োগপ্রক্রিয়া গতি লাভ করে। ওই বছর ই-মেইল ব্যবহারকারীদের স্প্যাম পাঠাতে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরির অভিযোগে দিমিত্রি এ আরতিমোভিচ নামের একজন পদার্থবিদ মস্কোর কারাগারে বিচারের অপেক্ষায় ছিলেন। কারাগারে আরতিমোভিচের সঙ্গে একই কক্ষে ছিলেন আরেক ব্যক্তি। নিউ ইয়র্ক টাইমস।



 

Show all comments
  • Munna ১১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৩৭ পিএম says : 0
    বিশাল ব্যাপার
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ