Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ইরানে রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ রইলো না

| প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লাহ আলী আকবর হাশেমি রাফসানজানির মৃত্যুতে ইরানে রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে কথা বলার কোন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর আপাতত আর থাকলো না। দেশটির রাজনীতিবিদরা তাৎক্ষণিকভাবে এটা অনুমান করতে পারছেন, ইরানে রাজনৈতিক সংস্কার বা পুনর্গঠনের সুযোগ বন্ধ হয়ে গেল। সংস্কারপন্থী এই নেতা রোবার ইন্তেকাল করেন।
রাফসানজানির শাসনামলে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে বেশকিছু পরিবর্তন এসেছিলো, যা দেশটির কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদরা মানতে পারেননি। রাফসানজানি অতি বিপ্লবী ধারা থেকে ইরানকে আরও গ্রহণযোগ্য রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কও প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন।
সাবেক এই প্রেসিডেন্ট দেশটির রক্ষণশীল কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদদের বিপরীতে একাই ছিলেন এক বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। তার মৃত্যুতে ইরানে সংস্কারপন্থী রাজনীতিতে যেন আকাল নেমে এলো। কেউ আর রইলো না রাজনৈতিক সংস্কারের পক্ষে জোরালো কথা বলার। প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ ও সাবেক প্রেসিডেন্ট গত রোববার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। সংস্কারপন্থীদের মধ্যে তার মতো প্রভাবশালী এমন আর কেউ নেই, যিনি তার অনুপস্থিতির ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারবেন।
ইরানের রাজনীতিতে রাফসানজানি আনতে চেয়েছিলেন দীর্ঘ কাক্সিক্ষত সংস্কার ও সহনশীলতা। আধুনিকতার ছোঁয়া দিতে চেয়েছিলেন রক্ষণশীল রাজনীতির এই দেশটিতে। যে কারণে তিনি বারবারই আহ্বান জানাতেন নাগরিকদের আরও ব্যক্তিস্বাধীনতার জন্য। ইরানের রাজনৈতিক এজেন্ডাকে আরও এগিয়ে নিতে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গড়ে তুলেছিলেন ভালো সম্পর্ক।
ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ছিলো রাফসানজানির শক্ত অবস্থান। রক্ষণশীলরা তার এ ধারণাকে ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ বলে নির্বাচনী প্রচারের সময় কাজে লাগাতো। তিনি উন্মুক্তভাবে পারমাণবিক সমঝোতার কথা বলতেন। রাফসানজানি বলতেন, সবাই যা বলে, তার সবই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি ভিন্ন মতামত নিয়ে রক্ষণশীল এই দেশটিতে অন্তত বিতর্কের অবতারণা ঘটানোর মতো সহনশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন।
কুম শহরের সংস্কারপন্থী ধর্মীয় নেতা  ফাজেল মেবোদি বলেন, রাফসানজানির মৃত্যুতে রক্ষণশীলরা হয়তো খুশি হবেন, কিন্তু অনেকের জন্যই এখন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের রাজনীতিতে যে একটা ভারসাম্যগত ব্যাপার ছিলো, রাফসানজানির মৃত্যুতে তা ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
সর্বমহল থেকে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাফসানজানির শূন্যস্থান পূরণের মতো ইরানে আর কেউ নেই। তার মৃত্যুতে চার দশক আগে ক্ষমতাচ্যুত রেজা শাহ পাহ্্লভির সমর্থক এ নেতৃবৃন্দকেও ভাবিয়ে তুলেছে। এদের অনেকেই এখন ৮০’র কোটায় বা তারও বেশি।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও জন হপকিন্স স্কুল অব এডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর ডিন ভালি আর নস্্র বলেন, রাফসানজানির মৃত্যু ইরানের জন্য একটি কঠোর বার্তা, আর তা হলোÑ ইরানের রাজনীতিতে খুবই মনস্তাত্ত্বিক ভূমিকা পালনকারী রাজনীতিবিদের ইন্তেকাল। নস্্র আরও বলেন, ইরিয়া ইস্যু ও পারমাণবিক চুক্তি রাফসানজানির রাজনৈতিক ভূমিকারই ফসল।
রাফসানজানির দুই ঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদের মধ্যে আছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি। এরা দু’জনই রাফসানজানির সাথে থেকে নিদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়েছেন। রুহানি এ বছরই পুনর্নির্বাচন সামনে রেখে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত এবং খাতামি বেশ কয়েক বছর ধরে রক্ষণশীলদের দ্বারা কোনঠাসা হয়ে আছেন। এপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ