পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : টিকাটুলীর অভয় দাস লেনে একই সাথে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ, সরকারি কামরুন্নেছা স্কুল এবং এর বিপরীতে শহীদ নবী প্রাইমারি স্কুল। এ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝখানে বিশালকার ময়লার কন্টেইনার। এর চারপাশ ঘিরে উৎকট গন্ধ। শিক্ষার্থীরা আসতে যেতে নাকে রুমাল চেপে রাখে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর এ করুণ দশায় এতটুকু সহানুভূতি দেখায়নি ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়রা জানান, তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝখানে এভাবে ময়লার ডাস্টবিন রাখা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমন হুমকি তেমনি দৃষ্টিকটুও বটে। প্রতিষ্ঠানগুলোসহ এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ময়লা ভাগাড়টি স্থানান্তরের জন্য বহু আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। কামরুন্নেছা স্কুলের অভিভাবক মোরশেদুল ইসলাম বলেন, এই ময়লার ভাগাড়কে ঘিরে কুকুরের মেলা লেগে থাকে রাত-দিন। বাচ্চারা এ রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করতে ভয় পায়। আমরাও আতঙ্কে থাকি। তিনি বলেন, অন্তত কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর কথা বিবেচনা করে এখান থেকে ময়লার কন্টেইনারটি সরানো উচিত। শুধু টিকাটুলী নয়, রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকার একই অবস্থা। নগরীর প্রধান প্রধান রাস্তার উপরে যেন সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে রীতিমত ময়লা-আবর্জনার হাটবাজার বসানো হয়েছে। একেকটি স্থানে ৭/৮টি করে কন্টেইনার টার্মিনাল বসিয়ে অলিগলি, বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা তুলে এনে সেসব কন্টেইনার ডাস্টবিনে রাখা হচ্ছে। অনেকটা ঘরের ময়লা রাস্তায় প্রদর্শনের মতো। কুড়িল-মালিবাগ প্রগতি সরণির বারিধারা ও মধ্যবাড্ডা এলাকায় এ ধরনের দুটি ময়লার বাজার আছে ঠিক রাস্তার মধ্যখানেই। সকাল থেকে শুরু করে দিনভর ময়লাবাহী ভ্যানের গতিপথ এখানকার কন্টেইনারের দিকে। চলে ময়লা খালাসের কাজ। আবার দুপুরের পর সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি আসে কন্টেইনারগুলো নিতে। এভাবে ময়লার কারবার চলে দিনভর। এতে করে ব্যস্ত এ সড়কে যানজট লেগেই থাকে। ময়লার ভাগাড়ের সামনে গাড়ি যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে তখন যাত্রীদের কি অবস্থা হয় তা সহজেই অনুমেয়। বাড্ডা এলাকার একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, ব্যস্ত সড়কের উপ এভাবে ময়লার কন্টেইনার রাখা মোটেও উচিত নয়। এ যেনো হাজার হাজার যাত্রী ও পথচারীকে জোর করে ময়লার দুর্গন্ধ নিতে বাধ্য করানো। জনস্বাস্থ্যের জন্য এটা ভয়াবহ হুমকি। ওই কর্মকতা জানান, নিরাপত্তা নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করায় এই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল বেশি করে। অথচ রাস্তার উপরে রাখা ময়লার কেন্টেইনারে ময়লা পরিবহনের জন্য এখানে যানজট লেগে থাকে। ময়লার ভাগাড়ের সামনে যানজটে আটকে থাকায় যাত্রীদের অনেকেই প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। কেউবা বমি করে ফেলে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, ময়লার স্তূপ ও দুর্গন্ধের কারণে আশপাশে কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য চলে না। খাবারের দোকানগুলো উঠে গেছে। এখন যে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই গোডাউন হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কাস্টমার না আসায় অনেকেই ব্যবসার ধরন পাল্টে ফেলেছে বলে ওই ব্যবসায়ী জানান।
পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ তিন রাস্তার মোড়ে ব্যস্ততম সড়কের বেশিরভাগ রাস্তা দখল করে আছে ময়লার কন্টেইনার। এ রাস্তায় চলাচলে পথচারীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত হলেও সড়কের আবর্জনার ভাগাড় সরানোর বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। সরেজমিনে দেখা গেছে, দয়াগঞ্জ মোড় থেকে যাত্রাবাড়ীমুখী সড়কে যেতেই বিশাল ময়লার স্তূপ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সড়কের ওই অংশ আবর্জনার দখলে থাকে। কর্মব্যস্ত দিনে আবর্জনার ভাগাড়ের কারণে ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্গন্ধময় আবর্জনা মাড়িয়ে পথ চলতে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হয় মানুষ। মোটরসাইকেল এবং রিকশার চাকা আবর্জনায় পিছলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা জানান।
এই রাস্তার ওপর দিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল সেতু। আবর্জনার ময়লা পানিতে ওই সেতুর পিলারগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। স্থানীয়রা বলেন, সাত সকালেও এই রাস্তায় যানজট হয়। তখন ময়লার ভাগাড় সংলগ্ন অংশের পথচারীরা উৎকট দুর্গন্ধে অস্থির হয়ে পড়ে। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা মারাত্মকভাবে বর্জ্য দূষণেরও শিকার হচ্ছে।
দয়াগঞ্জ মোড়ের ময়লার ভাগাড় সংলগ্ন কয়েকটি মুদি ও চা-বিস্কুটের দোকান রয়েছে। আবর্জনার ভাগাড়ের কারণে ওইসব দোকানে ক্রেতার দেখা মেলে না বলে জানান কুদ্দুস নামে এক দোকানি। তিনি বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্রেতা খুবই কম থাকে। তবে দুপুরে আবর্জনা সরিয়ে নেয়ার পর ক্রেতা বাড়ে। রাত পর্যন্ত ভালো বেচা-বিক্রি হয়।
দয়াগঞ্জ মোড়ে ল্যাবএইড ও ইবনে সিনা দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ আসে ওই দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তার দেখাতে। শিশু থেকে শুরু করে শতবর্ষী রোগীও আসেন সেখানে। ময়লার উৎকট গন্ধে তাদের নিদারুণ ভোগান্তি পোহাতে হয়। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক ওষুধের দোকানের মালিক বলেন, দুটি মেডিকেল সেন্টারের পাশে এভাবে ময়লার ভাগাড় কোনোভাবেই কাম্য নয়। কর্তৃপক্ষের উচিত এটি সরিয়ে অন্য কোথাও স্থানান্তর করা। ভুক্তভোগীদের মতে, গ্রীন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল তার কোনো বাস্তব প্রমাণ নেই। গণমাধ্যমের মধ্যেই কর্তৃপক্ষের সফলতা সীমাবদ্ধ। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক চিকিৎসক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিটি কর্পোরেশন আমাদেরকে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দিতে না পারুক ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধমুক্ত পরিবেশ তো দিতে পারে। তা না পারলে নাগরিক হিসাবে আমরা কেন ট্যাক্স দিবো? পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এর চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। এমনও এলাকা আছে যেখানে সপ্তাহে একদিন ময়লার গাড়ি আসে। সাত দিনে ময়লা-আবর্জনার পচে গলে একাকার হয়ে যায়। রাজধানীর অন্যান্য এলাকাগুলোতেও ময়লার কন্টেইনার নিয়ে মানুষের অভিযোগের শেষ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।