Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সরকার গঠনের দাবি

প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৯:২৮ পিএম, ৭ জানুয়ারি, ২০১৭

ইনকিলাব ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের অর্থনৈতিক দুরবস্থার প্রতিকারের জন্য ভারতে জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে এখনই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। গত শুক্রবার কলকাতার টাউন হলে রাজ্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই দাবি জানান। মমতা দাবি করেন, কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎ নোট বাতিলের পর বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের ফলে ভুগছে দেশবাসী। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশে চলছে সন্ত্রাসের সরকার।
নোট বাতিল নিয়ে নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, মোদি সরকার আমাদের গলা কেটে নিলেও আন্দোলন থামবে না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। শুক্রবার কলকাতায় রাজ্যের মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মমতা এ হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ভারত আজ চরম সর্বনাশের দিকে এগিয়ে চলেছে। তাই আমি রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ রেখেছি, তিনি যেন ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলোকে বাঁচান। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নোট বাতিলের ফলে পশ্চিমবঙ্গ সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি রুপি ক্ষতির মুখে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের একাধিক শিল্পকেন্দ্র থেকে কাজ হারিয়েছেন লাখ লাখ কর্মচারী। রবি চাষের ক্ষতি হওয়ায় কৃষকরা সমস্যায় পড়েছেন। ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের দিকে এগোচ্ছে দেশ। নরেন্দ্র মোদিকে দিয়ে দেশ চলবে না মন্তব্য করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তাকে সরিয়ে কেন্দ্রে একটি জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানান। মমতা বলেছেন, সেই সরকারের নেতৃত্ব বিজেপি দিলেও তার আপত্তি নেই। তবে মোদির নেতৃত্বে গড়া যাবে না সে সরকার। বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি, রাজনাথ সিং বা অরুণ জেটলি নেতৃত্ব দিতে পারেন। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিজেপির অন্দরে মতান্তর নিয়ে এর আগেও নরেন্দ্র মোদীকে খোঁচা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, মোদীকে সরিয়ে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হোক। এবার আর এক কদম এগোলেন তৃণমূল নেত্রী। ফের প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে মমতা বললেন, মোদীকে সরিয়ে লালকৃষ্ণ আদবানি, অরুণ জেটলি বা রাজনাথ সিংহের মধ্যে কোনও এক জনকে যদি প্রধানমন্ত্রী করা হয়, তা হলে সেই সরকারকে সমর্থন দিতে তার আপত্তি নেই। কারণ, মোদীর মতো বিপজ্জনক ব্যক্তিকে দেশের প্রশাসনিক প্রধানের পদ থেকে সরানো জাতীয় স্বার্থেই আবশ্যক হয়ে উঠেছে। মমতার এই প্রস্তাব অবশ্য আজগুবি কথা বলে উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি।
মমতা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছেও আবেদন জানান যাতে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা হয়। সেই সঙ্গে বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিন¤্র আহ্বান জানিয়েছেন। এই প্রস্তাবের অন্য অর্থ বের করে তৃণমূল নেত্রীকে পাল্টা খোঁচা দিতে চেয়েছেন পশ্চিমবাংলায় তার বিরোধীরা। সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মমতাকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়লো এর মানে একজন ব্যক্তিকে নিয়ে কিছু ইগো থাকলেও বিজেপি বা সংঘের মতাদর্শ নিয়ে মমতার আপত্তি নেই। তাদের অভিযোগ, আসলে বিভিন্ন কেলেঙ্কারির তদন্ত বন্ধ করাতেই এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মমতা। শুক্রবার টাউন হলে প্রশাসনিক বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠক শেষ হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রীকে পরোক্ষে কালিদাসের সঙ্গে তুলনা করে মমতা সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে বারবার অনুরোধ করছি, রাজ্যগুলিকে বাঁচান। দেশকে বাঁচান। প্রয়োজনে জাতীয় সরকার তৈরি হোক। প্রধানমন্ত্রী পদে যিনি রয়েছেন, তিনি কিছুই পারবেন না। যে ডালে বসে রয়েছেন, সেটাই কেটে ফেলছেন। এর পরেই তিনি বলেন, বিজেপির মধ্যে থেকেই লালকৃষ্ণ আদবানি, রাজনাথ সিংহ বা অরুণ জেটলির মতো কোন প্রবীণ নেতা জাতীয় সরকারের দায়িত্ব নিলে আমার আপত্তি নেই। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অপব্যবহার করা হচ্ছে। যেভাবে দেশের মেরুদ- ভেঙে দেয়া হচ্ছে তা সন্ত্রাসের থেকেও ভয়ঙ্কর। তারা আরো বলেছেন, এর নেপথ্যে মমতার রাজনৈতিক কৌশলটা কী। রাজনীতিকদের অনেকের মতে, জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়টি কাঁঠালের আমসত্ত্বের মতো, তা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ এবং সেটা মমতাও ভাল মতোই জানেন। বাস্তবতা হল, রাহুল গান্ধী এবং মমতা দু’জনেই চাইছেন মোদীর গায়ে ‘স্বৈরাচারী শাসক’ তকমা সেঁটে দিতে। সেই কারণেই রাহুল যেমন বার বার বলছেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত মোদী একাই নিয়েছেন। এমনকী অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গেও আলোচনা করেননি। তেমনই মমতা বোঝাতে চাইছেন, মোদীর সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত নন আদবানি, রাজনাথ, জেটলিরা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিজেপি’র এই তিন নেতাই মমতা সম্পর্কে নরম মনোভাব পোষণ করেন। এনডিটিভি, এবিপি, ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ