মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : ৭ জানুয়ারি দেশ-বিদেশের আলোচিত হত্যাকা- কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার ছয় বছর পূর্ণ হলো আজ। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হত্যাকা-ের মধ্যে বিএসএফের গুলিতে নিহত একমাত্র ফেলানী হত্যার বিচার শুরু করে ভারতের বিএসএফ। মামলাটি এখন বিএসএফের বিশেষ আদালত গড়িয়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে। নির্মম এ হত্যাকা-ের বিচার দীর্ঘ ছয় বছর ধরে চললেও এখনো ন্যায়বিচার পায়নি তার পরিবার। উপরন্তু আত্মস্বীকৃত খুনী অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে দু’দুবার নির্দোষ সাব্যস্ত করে বিএসএফের বিশেষ আদালত। ন্যায়বিচার না হওয়ায় ফেলানীর পিতা নুরুল ইসলাম ভারতের মানবাধিকার সংস্থা মাসুমের সহায়তার সে দেশের সপ্রিম কোর্টে একটি রিট করায় মামলাটি বর্তমানে ভারতের উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আর এ উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচারের আশায় চেয়ে আছে ফেলানীর পরিবারসহ দেশবাসী।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাটাতারের বেড়ায় নির্মমভাবে খুন হয় কিশোরী ফেলানী। ভারতের ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত ফেলানীর মরদেহ কাটা তারেই ঝুলে থাকে দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা। ফেলানীর ঝুলে থাকা লাশের ছবি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মাঝে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এক পর্যায়ে বিজিবির দাবির মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে বিএসএফের বিশেষ আদালতের সোনারী ছাউনীতে ফেলানী হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়। ওই বছর ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় ওই আদালত।
আবারো সমালোচনার ঝড় উঠলে পরবর্তীতে বিজিবির আবেদনের প্রেক্ষিতে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মামলার পুনর্বিচার কার্যক্রম শুরু করে বিএসএফের বিশেষ আদালত। আবারো অমিয় ঘোষকে নির্দোষ সাব্যস্ত করে পূর্বের রায় বহাল রাখে বিএসএফের অধিকারী সিপি ত্রিবেদীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিচারিক প্যানেল।
সন্তানের নির্মম এ হত্যার কথা মনে হলে এখনো ডুকরে কেঁদে ওঠেন মা জাহানারা বেগম। সংসারের নানা দুঃখ-কষ্টের মাঝেও দাবি করেন অভিযুক্ত অমিয় ঘোষের সর্বোচ্চ শাস্তি। তিনি দাবি করেন, তার বুকের ধন ফেলানীকে যেভাবে পাখীর মতো গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ, তেমনি তার সর্বোচ্চ শাস্তি যেন নিশ্চিত করেন ভারতের উচ্চ আদালত। যেন অভিযুক্তের মায়েরও একই কষ্ট অনুভব হয়। সীমান্তরক্ষী সকল সদস্যদের মায়েরা যেন এই শাস্তির কথা ভেবে তাদের সন্তানদের এই শিক্ষাই দেন, বিনা অপরাধে কোনো মায়ের কোল যেন খালি করা না হয়।
ফেলানীর নির্মম হত্যাকা-ের কথা এখনো ভুলতে পারেননি তার স্বজনসহ এলাকাবাসী। সীমান্ত এলাকায় বাস করা এ মানুষগুলো সব সময় আতঙ্কে দিন কাটান। তাদের দাবি এ হত্যাকা-ের ন্যায়বিচারসহ সীমান্ত হত্যা বন্ধের।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রিটটি গ্রহণ করায় এবার ন্যায়বিচারের আশা করছেন তিনি। ইতোপূর্বে বিএসএফের বিশেষ আদালতে দু’দুবার অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু ওই আদালতের বিচারক, বিচারপ্রার্থী, আসামি এবং বিচারকাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই বিএসএফের সদস্য। ফলে সেখানে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি দুরূহ ছিল। মামলাটি ভিন্ন রাষ্ট্রের হওয়ায় এ মামলার আপিলের সুযোগ আমাদের নেই। আপিল করতে হলে বিএসএফকেই করতে হবে। তারা মামলাটির ন্যায়বিচারের স্বার্থে উচ্চ আদালতের দারস্থ না হওয়ায় ফেলানীর বাবা ও ভারতের একটি মানবাধিকার সংগঠন যৌথভাবে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। আমরা আশা করি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন। এ মামলায় ভারতের উচ্চ আদালতে ইতিবাচক রায় হলে সীমান্তে আইন বহির্ভুত হত্যাকা- বন্ধ হবে এমনটাই আশা বাংলাদেশের মানুষের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।