পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : কাদার মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে একটি দেহ। ছোট্ট হাত দু’টো দিয়ে কিছু আঁকড়ে ধরার চেষ্টা। মায়ের সযতেœ পরিয়ে দেয়া হলুদ জামাটা কাদায় মাখামাখি। তুরস্কের সমুদ্রসৈকত নয়; মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা শিশুটি সিরিয়ার শরণার্থী আয়লান কুর্দিও নয়, কিন্তু নাফ নদীর চরে পড়ে থাকা রোহিঙ্গা শিশুটির মর্মান্তিক ছবি আয়লানের স্মৃতি মনে করাবেই। নীল প্যান্ট আর লাল জামা পরা ছোট্ট আয়লানের ছবি নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরো দুনিয়াকে। সিরিয়ার শরণার্থী সমস্যার মুখ হয়ে উঠেছিল আয়লান। সেই ‘শরণার্থী’ শব্দটাই মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের নদীপাড়ে পড়ে থাকা মুহাম্মদ শোহায়েতের সঙ্গে আয়লানকে মিলিয়ে দিয়েছে। শোহায়েতের এই ছবিই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যার প্রতীক হয়ে উঠছে। ১৬ মাসের শোহায়েত মা, চাচা ও তিন বছরের ভাইয়ের সঙ্গে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসছিল বাংলাদেশে। পালানোর পথে নৌকাডুবি। শোহায়েতের তিন প্রিয়জনের লাশ মেলেনি। শোহায়েতের লাশ এভাবে নদীর পাড়ে পড়ে থাকতে দেখে মোবাইলে ছবি তুলে শোহায়েতের বাবাকে পাঠিয়েছিলেন এক পরিচিত। সেখান থেকেই প্রকাশ্যে আসে মর্মান্তিক এই ঘটনা।
শোহায়েতের বাবা জাফর আলমের গলা বুজে আসছিল, ‘ছবিটা দেখে মনে হচ্ছিল আমি মরে গেলাম না কেন! আমার এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আর কোনো অর্থ নেই’। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর মিয়ানমারের সেনার অত্যাচারের অভিযোগ বহু বছরের। বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বাসিন্দা হলেও প্রশাসন তাদের নাগরিকের মর্যাদা দেয় না। মিয়ানমার সেনা তাদের উপর যথেচ্ছ অত্যাচার চালায়। প্রশাসন অবশ্য এ কথা স্বীকার করেনি। তাদের দাবি, রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগেরই শেকড় বাংলাদেশে। অত্যাচার থেকে বাঁচতে যেন তেন প্রকারে বাংলাদেশে পাড়ি জমান রোহিঙ্গারা। সেনার চোখ এড়িয়ে পানিপথ পেরোতে গিয়ে খোয়া যায় শোহায়েতের মতোই বহু প্রাণ। আলমের কথায়, ‘আমাদের গ্রামে সেনারা হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালাত। বাড়িতে থাকলে মৃত্যু নিশ্চিত। তাই জঙ্গলে দিনের পর দিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকতাম। আমার দাদা-দাদীকে ওরা জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে। পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে’।
মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে আলম মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। আপন মনেই বলছিলেন, ‘ছয়দিন ধরে হেঁটেছি; ঘুম নেই চারদিন, ভাত জোটেনি। তার মধ্যে আবার সেনার ভয়ে বারবার ঠাঁই বদল’। এ পালানোর মাঝেই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আলমের। মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নাফ নদীতে ঝাঁপ দেন আলম। সাঁতরে ওপারে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরাই তাকে উদ্ধার করে আনেন। সেখানের ত্রাণশিবিরে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন আলম। মৎস্যজীবীদের সাথে যোগাযোগ করে স্ত্রী ও সন্তানদের আনার দায়িত্ব দেন।
‘৪ ডিসেম্বর ফোন করেছিলাম স্ত্রীকে। তখনো পাশ থেকে ছোট ছেলেটির আব্বা-আব্বা ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম’, কান্নাভেজা স্বরে বললেন আলম। সেই ফোনের পরই তল্পিতল্পা গুটিয়ে লুকিয়ে নদীর পাড়ে চলে আসেন আলমের পরিবার। কিন্তু কিভাবে যেন মিয়ানমারের সেনা টের পেয়ে যায়। নৌকা লক্ষ করে গুলি চালায়।
গুলি থেকে বাঁচতে তড়িঘড়ি সবাই নৌকায় ওঠার চেষ্টা করে। আর তখনই নৌকাডুবি। পুরো পরিবারকে হারিয়ে ফেলেন আলম। ‘ছেলেটা আমার খুব আদরের ও গ্রামের সবার প্রিয় ছিল। শুধু আমার পরিবার তো নয়, কত পরিবারকে যে খেয়েছে এই নদী! কত লাশ ভেসে গেছে!’ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে এ কথাগুলোই বলে চলেছিলেন আলম। বাংলাদেশে এসেও খুব সুখে নেই তিনি। এখানে ত্রাণশিবিরে কোনোক্রমে মাথা গুঁজে দিন গুজরান। খাবার নেই, কাজ নেই। তবে হ্যাঁ, সেনার অত্যাচার নেই, প্রাণনাশের শঙ্কা নেই। আর এটাই আলমদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক মাসে কমপক্ষে ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন।
এদিকে, বাংলাদেশও আর শরণার্থী চাপ নিতে পারছে না। ত্রাণশিবিরগুলো উপচে পড়ছে। সেনার অত্যাচারের কথা অবশ্য এখনো অস্বীকার করে চলেছে মিয়ানমার প্রশাসন। তাদের দাবি, সন্দেহভাজন জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি চালাতে গিয়েই গুলি চালাতে বাধ্য হচ্ছে সেনা। কিন্তু আধোআধো কথা বলা শোহায়েত কি জঙ্গি ছিল? কেন প্রাণ হারাতে হল তাকে? কী উত্তর দেবে প্রশাসন? সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।