পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : ইসলামিক ফাউন্ডেশন হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন উপলক্ষে প্রতি বছরই বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলার আয়োজন করে। এ বছরও ডিসেম্বরের ১২ তারিখ থেকে মেলা বসিয়েছে তারা। মেলা এখন শেষ পর্যায়ে, তবুও গড়ে লোকসান আছে প্রায় প্রতিটি স্টলের ব্যবসায়ীরা। এছাড়া প্রথম থেকেই মেলা ত্রেুতাশূন্য। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগের অভাবে এ মহতী আয়োজন জমছে না বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, প্রচার-প্রচারণাবিহীনভাবে যদি মেলা চলতে থাকে তাহলে মেলা এমন ত্রেুতাশূন্যই থাকবে। এ কারণে আগামীতে বই মালিকদের একটি অংশ মেলায় অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলেও জানা গেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মেলা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ড. হারুন-অর-রশীদ বলেছেন, বর্তমানে ইসলামিক চিন্তাধারার বই কেনা ও পড়ার মতো পাঠকের অভাবে মেলায় ত্রেুতাদের উপস্থিতি কম। এছাড়া মেলার প্রচার-প্রচারণার জন্য ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কোনো বাজেট নেই। ব্যবসায়ীদের লোকসানের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, যদি তাদের লোকসানই হবে তাহলে তারা আবার নতুন করে ১ মাস মেলা বাড়ানোর কথা বলেছে কেন? তবে এই বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, লোকসান তুলতেই তারা আবার নতুন সময় বাড়াতে আবেদন করেছে।
জানা যায়, মেলার আগে ও শুরু থেকে কোনো প্রচার-প্রচারণার কাজ করেনি ফাউন্ডেশন। কিন্তু বাংলাদেশে প্রত্যেকটি মেলার আগেই বিভিন্নভাবে প্রচারণার কাজ করে কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে ব্যবসায়ীরা বেশ কয়েকবার ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো কাজে আসেনি। গতকাল প্রায় ১০টি স্টলের কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রতি বছরই মেলার শুরুর আগে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা ও ইসলামিক চিন্তাধারার পত্রিকার মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করার বিষয়ে ফাউন্ডেশনে অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পায়নি বলে জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে গতকাল বিকালে মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায়, এ বছর মেলায় ৫৫টি স্টল আছে, সেই হিসাবে প্রতিটি স্টলে একটি করেও ত্রেুতা দেখা যায়নি। সব মিলিয়ে ওই সময় দশজনের মতো ত্রেুতাও ছিল না। এছাড়া এর আগে আরো দুইদিন সরেজমিনে দেখা গেছে একই অবস্থা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্টলগুলোর আকার অনুসারে ৭ হাজার, ১৪ হাজার ও ২১ হাজার করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে দিতে হয়। এছাড়া প্রতিটি স্টলেই ২ থেকে ৪ জন করে কর্মচারী-কর্মকর্তা আছে। তাদের মাসিক বেতন পরিশোধ করতে হয়। এই হিসাবে মেলায় বড় ধরনের বিনিয়োগ করে মালিকপক্ষ। কিন্তু এ বিনিয়োগে লাভ তো হয়ই না, বরং উল্টো লোকসানের পাল্লা দিন দিন বাড়তে থাকে তাদের।
মেলার স্টলে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) সহ অন্যান্য নবী-রাসুলদের জীবনীর বই রয়েছে। আল-কুরআন, হাদিস শরিফ, ইসলামের ইতিহাস, মহানবীর দৈনন্দিন জীবন, পছন্দ-অপছন্দ, জান্নাত-জাহান্নাম নিয়ে বইও পাওয়া যাচ্ছে। মেলার ১ থেকে ৫ নম্বর স্টলটি হচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের। মেলার আয়োজক এই প্রতিষ্ঠানটির স্টলে পাওয়া যাচ্ছে ‘ইসলামের প্রচার ও প্রসারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ‘শেখ মুজিবুর রহমান’, ‘দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম’, হজ-উমরাহ জিয়ারত ছাড়াও অনেক বই। বিক্রেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী সেরা বিক্রির তালিকায় রয়েছে হাদিস শরিফ, নসিম হিজাগির ‘মরণজয়ী’, এম এন হাবিব উল্লাহ’র ‘রোহিঙ্গা জাতির ইতিহাস’। বই ছাড়াও মেলার বিভিন্ন স্টলে টুপি, জায়নামাজ, আতর, মেসওয়াক ও তজবি বিক্রি করা হচ্ছে।
মেলায় আগত আবদুল্লাহ নামে এক ক্রেতা বলেন, বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তে এসে দেখলাম এখানে ইসলামি বইমেলা চলছে। যদি এখানে নামাজে না আসতাম, তাহলে জানতেই পারতাম না এখানে সুন্দর একটি মেলা বসেছে। এই ধরনের আয়োজন মুসলমানদের জানানো ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব বলেও তিনি মনে করেন।
নূর এমদাদিয়া স্টলের স্বত্বাধিকারী মোঃ আবুল কাশেম পাটোয়ারী বলেন, মেলায় ত্রেুতা নেই বলেই চলে, বিক্রিও খুব কম। এ কারণে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণার অভাবে মেলার এই চিত্র বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। প্রচারের মাধ্যমে যদি মানুষ জানতে পারে তাহলে মেলার আর এই চিত্র থাকবে না বলেও তিনি দাবি করেন।
দারুস সালাম স্টলের মার্কেটিং ম্যানেজার খন্দকার মোতাহার হোসেন বেলাল বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আমাদের প্রতিবছরই লোকসান গুনতে হবে। গতকাল সন্ধায় পর্যন্ত ওই স্টলে মাত্র ১৮০০ টাকার মতো বই বিত্রিু হয়েছে বলেও তিনি জানান।
মেলা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ড. হারুন-অর-রশীদ জানিয়েছেন, কয়েকদিনের মধ্যে ব্যবসায়ীদের সাথে বসে প্রচার-প্রচারণার বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।