Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দর্শনা সাব-জোনে বিপজ্জনক ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন

সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও দালালদের দৌরাত্ম্যে তলানিতে সেবার মান

| প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) উপজেলা সংবাদদাতা : সরকার যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ও দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে একের পর এক প্রকল্প হাতে নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দর্শনা সাব-জোনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কমচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা, অবহেলা ও উদাসীনতায় মøান হতে চলেছে দামুড়হুদা উপজেলাসহ আশপাশ এলাকায় সরকারের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের অর্জন। মানুষের বিদ্যুতের চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা অনিয়ম ও তাদের নিয়োজিত দালালদের কারণে বর্তমানে এ জোনে গ্রাহক সেবার মান পৌঁছেছে তলানিতে। গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দর্শনা সাব-জোনের আওতাধীন দর্শনা পৌর এলাকার বেশ কয়েকটি স্থানে সরেজমিন ঘুরে দেখার সময় বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, উদসীনতা ও নানা অনিয়মের বেশ কিছু চিত্র চোখে পড়ে যা নিম্নরূপ। কেরুজ প্রাইমারি স্কুল পাড়ার শাহ আলম ও জুল হোসেনের বাড়ির ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন রয়েছে। লাইনটি ছাদের এত কাছে যে ছাদ থেকে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়। ২০১১ সালের দিকে ছাদের উপর খেলা করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাহাত (১২) নামের এক স্কুলছাত্র আহত হয়। এরপর ওই বাড়ির মালিক লাইনটি সরানোর জন্য ২০১৩ সালে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দর্শনা জোনাল অফিসে লিখিতভাবে আবেদন জানান। এরপর সরেজমিন তদন্ত করে লাইনটি সরানোর জন্য ওই স্থানে একটি লোহার পোলও স্থাপন করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও লাইনটি আর সরানো হয়নি। ফলে লাইনটি না সরানোর কারণে একদিকে ওই বাড়ির লোকজন আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে। অপরদিকে পাশাপাশি দুইটি ভবনের উপর তলার নির্মাণকাজ শেষ করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বাড়ি মালিকরা। শ্যামপুর পাইপঘাট পাড়ায় ২০১৪ সালের গোড়ার দিকে খেজমতের বাড়ি থেকে পারুলের বাড়ি পর্যন্ত ৪টি খুঁটি স্থাপন করে তাতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন টানানো হয়। এর পর থেকে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে ইচ্ছুক প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার আবেদন করে। এ সময় বিদ্যুৎ অফিস থেকে জানানো হয় নুতন সংযোগ নিতে হলে গ্রাহকদেকে ট্রান্সফর্মার কিনতে হবে। ওই এলাকায় বসবাসকারীদের অধিকাংশই নিম্নআয়ের মানুষ। ফলে ট্রান্সফর্মার কেনার টাকা জোগাড় করতে না পারায় আজ পর্যন্ত তারা বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি। আবেদনকারী জাহাঙ্গীর, রহেল, আঃ মজিদ, আশরাফ আলিসহ বেশ কয়েকজন জানান, আমরা গরিব তাই, বর্তমানে ডিজিটাল যুগে পৌর এলাকায় বসবাস করেও বিদ্যুতের অভাবে থাকতে হয় অন্ধকারে। ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহক মাঝের পাড়ার রজব আলি, ইছাহাক ম-ল, আনছার আলি, আঃ হামিদ, জিয়াউর, আশরাফুল হক জানান, ৬-৭ বছর আগে হাজী আঃ জলিলের বাড়ি থেকে মফিজ উদ্দীনের বাড়ি পর্যন্ত ২২০ ভোল্টের সঞ্চালন লাইনের তিনটি পোলের নিউট্রাল লাইনের তার ছিঁড়ে পড়ে। এসময় আমরা দর্শনা পল্লী বিদ্যুৎ আফিসে বেশ কয়েকবার জানানোর পর অবশেষে বিদ্যুতের লোকজন ছিঁড়ে পড়া তারটি কেটে নিয়ে যায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে তার আর লাগানো হয়নি। ওই সময় থেকেই শুধুমাত্র এক তারে বিদ্যুৎ সঞ্চালন চালু রয়েছে। লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু থাকলেও লো ভোল্টেজের কারণে ফ্রিজ, টিভি, পানি তোলা পাম্পের মটর ঠিকমতো চলে না। ঘরের ফ্যান চলে খুব আস্তে ফলে বাতাস হয় না। লাইট জ্বলে মিটমিট করে তাতে ভালোভাবে কিছু দেখা যায় না। ফলে মাসে মাসে মোটা অংকের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ নানা কাজে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারা আরোও বলেন, এ ঘটনায় প্রথম থেকেই দর্শনা প্ললী বিদ্যুৎ অফিসে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েও এর কোন সুরাহা হয়নি। এছাড়া মফিজ উদ্দীনের বাড়ির পাশে মহল্লার রাস্তার মাঝখানে বিদ্যুতের একটি খুঁটি থাকার কারণে রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করা ছাড়া কোন গাড়িঘোড়া চলাচল করতে পারে না। খুঁটিটি সরিয়ে রাস্তার পাশে স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ অফিসে বহুবার জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। এসব নিয়ে বর্তমানে আমরা খুব বিপদে আছি। মহম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা মুকুল মিয়ার বাড়ির সাথে অবস্থিত খুঁটিতে বিদ্যুতের লাইন ১১ হাজার ভোল্টেজের লাইন। উপর তলার জানালা দিয়ে হাত বাড়ালেই তার স্পর্শ করা যায়। তিনি জানান, খুঁটিটি সরানোর জন্য বিগত দুই বছর যাবৎ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেও কোনো ফল হয়নি। ফলে আমার বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে করতে পারছি না। বছর পাঁচেক আগে, দর্শনা শহরের মুল সড়ক বাসস্ট্যান্ড থেকে রামনগর পর্যন্ত রাস্তার প্রশস্ততা বৃদ্ধি করায় রাস্তার কিনারে স্থাপিত খঁিুটগুলোর বেশ কিছু সংখ্যক বর্তমানে রাস্তার মধ্যে পড়েছে। রাস্তার মধ্যে এ সমস্ত খুঁটির অবস্থান হওয়ায় রাস্তা দিয়ে নানা ধরনের যানবাহনসহ মানুষজনের চলাচলের অসুবিধার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন থেকে এ অবস্থা চলতে থাকলেও এ সমস্ত খুঁটি সরানোর ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতের কোন মাথাব্যথা নেই। এছাড়া শহরের অনেক স্থানে পিডিবির আমলের তিন যুগের পুরাতন তার ও সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে চলছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। দীর্ঘদিনের পুরাতন ও জরাজীর্ণ এসব খুঁটি ভেঙে বা ত্রুটিপূর্ণ তার ছিঁড়ে যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। গ্রাহক সাধারণের অভিযোগ, প্রতি মাসে গ্রাহকরা হাজার হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করলেও বর্তমানে গ্রাহক সেবা পৌঁছেছে শূন্যের কোটায়। এ ব্যাপারে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দর্শনা সাব-জোনের এজিএম (ও এন্ড এম) মনিরুল ইসলাম বলেন, পোল অপসারনের জন্য ১ হাজার ৫শ টাকা জমাদানপূর্বক আবেদন করতে হবে। আর বর্তমানে নতুন সংযোগ নিতে গ্রাহকদের ট্রান্সফর্মার, খুঁটি বা তারের জন্য কোন টাকা দিতে হবে না। গ্রাহকরা কোন বিষয়ে আমাদের কাছে আসলে আমরা তদন্তপূর্বক তার সমাধান দেবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ

১৪ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ