Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রমোদ ভ্রমণে নিরাপদ!

বিআইডব্লিউটিসির রকেট সার্ভিস : যাত্রী পরিবহনে ঝুঁকিপূর্ণ

| প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : রাষ্ট্রীয় যাত্রীসেবামূলক প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসি গণপরিবহন থেকে নৌযান প্রত্যাহার করে প্রমোদ ভ্রমণে ভাড়া দেয়ায় গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠি ও পিরোজপুর হয়ে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের উদ্দেশ্যে রকেট স্টিমারের যাত্রা বাতিল করা হয়। ফলে গতকাল ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের শত শত যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন। অনেক যাত্রী চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরে পৌঁছে রকেট স্টিমার না পেয়ে শীতের রাতে আটকা পড়েন। সংস্থাটির কারিগরি পরিদফতরের মেরিন ও প্রকৌশল বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার অতি উৎসাহে এ বিপত্তি ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ দুমাস বসিয়ে রেখে মাত্র একটি ট্রিপে সাফল্যজনকভাবে যাত্রী পরিবহনের পরই গতকাল ‘পিএস অস্ট্রিচকে কথিত মেরামতের নামে যাত্রী পরিবহন থেকে প্রত্যাহার করা হয়। তবে আগামী শনিবার নৌযানটি প্রমোদ ভ্রমণে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। সংস্থার দায়িত্বশীল মহল বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি।
দীর্ঘদিন ধরেই বিআইডব্লিউটিসির একটি কুচক্রি মহলের কারসাজীতে ব্যয় সাশ্রয়ী প্যাডেল জাহাজগুলোকে নানা খোড়া যুক্তিতে বসিয়ে রেখে ‘স্বেতহস্তি’ হিসেবে খ্যাত দ্বিগুণ পরিচালন ব্যায়ের স্ক্রু-হুইল নৌযানগুলো যাত্রী পরিবহনে দেয়া হচ্ছে। যাতে সংস্থাটির যাত্রীসেবা ইউনিটের লোকসানের পরিমাণও ক্রমশ বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দৈনিক ইনকিলাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পরে দীর্ঘদিন ঢাকা ঘাটে বসিয়ে রাখা পিএস অস্ট্রিচ জাহাজটি গত রোববার ঢাকা থেকে রকেট সার্ভিসে পরিচালনার সিদ্ধান্ত  নেয়া হয়। কিন্তু সংস্থার একজন দায়িত্বশীল মেরিন কর্মকর্তা বিষয়টিকে সহজভাবে নিতে না পেরে নৌযানটি ঢাকার সদরঘাট ত্যাগ করার মিনিট দশেক আগে এর ক্যাপ্টেনকে শাসাতে শুরু করেন। বিষয়টি নৌযানের যাত্রীদের মধ্যেও যথেষ্ট বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
কিন্তু পিএস অস্ট্রিচ নির্বিঘেœ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই গতকাল সকালে ঢাকায় ফেরার আগেই মেরিন বিভাগের ওই কর্মকর্তা নৌযানটির ক্যাপ্টেনকে জরুরি বেতার বার্তা প্রেরণে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই বেতার বার্তায় ক্যাপ্টেন তার ‘নৌযানটি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে জানান। অথচ বিষয়টি নৌযানটির প্রধান ইঞ্জিন কর্মকর্তা এবং টিকেট ক্লার্কসহ কর্তব্যরত অন্য কেউই অবহিত ছিলেন না। আর ওই বেতার বার্তার সূত্র ধরে গতকাল ঢাকা থেকে পিএস অস্ট্রিচের যাত্রা বাতিল করা হয়। ঢাকা ঘাটে আগে থেকে মেরামতাধীন পিএস টার্ন জাহাজটির মেরামত সম্পন্ন না হওয়ায় সেটিও গতকাল যাত্রী পরিবহনে দেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে নৌযানের অভাবে গতকাল ঢাকা থেকে বিআইডব্লিউটিসির রকেট স্টিমারের যাত্রা বাতিল করা হয়।
অথচ আগামী শনিবার ‘চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’ পিএস অস্ট্রিচকে প্রমোদ ভ্রমণের জন্য ভাড়া দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। একই দিন বর্তমানে মেরামতাধীন অপর প্যাডেল স্টিমার ‘পিএস টার্ন’ও অপর একটি গ্রুপকে প্রমোদ ভ্রমণের জন্য ভাড়া দেয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। এমনকি গত ৩০ ডিসেম্বর পিএস অস্ট্রিচেই বিআইডব্লিউটিসির সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে নিয়ে একটি নৌভ্রমণেরও আয়োজন করে সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, নৌপথে প্রমোদ ভ্রমণের জন্য রাষ্ট্রীয় নৌপরিবহন সংস্থাটির যাত্রীবাহী নৌযানসমূহ চলাচলে কোনো বিঘœ না ঘটলেও যাত্রী পরিবহনে এসব নৌযানে নানা কারিগরি ত্রুটি দাঁড় করান হচ্ছে কেন? অভিযোগ রয়েছে, সংস্থার প্যাডেল জাহাজগুলোতে যেখানে ঘণ্টায় জ্বালানি ব্যয় ৮৬ লিটার থেকে ৯৪ লিটারের মধ্যে, সেখানে ‘এমভি বাঙালি ও এমভি মধুমতি’র মতো স্বেতহস্তির পেছনে জ্বালানি ব্যয় প্রায় ২০০ লিটার। আর সংস্থার একটি মহল এসব অধিক ব্যয়বহুল নৌযানসমূহ পরিচালনায়ই অধিক আগ্রহী।
অভিযোগ রয়েছে, অতিমাত্রার জ্বালানি ব্যয়ের একটি অংশই সংস্থাটির মেরিন, প্রকৌশল ও বাণিজ্য বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার পকেটে যায়। ঢাকা থেকে মোড়েলগঞ্জ হয়ে ফিরতি ট্রিপে ঢাকা পর্যন্ত এসব ব্যয়বহুল নৌযানের প্রতিটিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার লিটার অতিরিক্ত জ্বালানি পুড়ছে। অথচ গতকাল পর্যন্ত সংস্থাটির ব্যয় সাশ্রয়ী চারটি প্যাডেল জাহাজের তিনটিই বন্ধ ছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ