Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অনিয়মে বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ ভাড়া প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের গচ্চা

প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আইয়ুব আলী : অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে জাহাজ ভাড়া বাবদ বছরে লাখ লাখ টাকা গচ্চা দিচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। চট্টগ্রামের কুমিরা-সন্দ্বীপ ও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলরত যাত্রীবাহী জাহাজ ‘এলসিটি কাজল’ এর দীর্ঘ ৮ বছরেও মেরিন হাল (বীমা) পলিসি করা হয়নি। শুধুমাত্র পাঁচ মাসের নিরাপত্তা জামানত ব্যতীত অদ্যাবধি কোন নিরাপত্তা জামানতের টাকা জমা দেয়া হয়নি। বরং বিআইডব্লিউটিসি’র সাথে সম্পাদিত দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি লঙ্ঘন করে তিনগুণেরও বেশি ভাড়ায় তৃতীয় পক্ষকে জাহাজটি ভাড়া দেয়া হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে বিআইডব্লিউটিসি থেকে মের্সাস ভয়েজ এন্ড ক্রুজ নামক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মানিস দেওয়ান জাহাজটি ভ্যাট ও উৎস করসহ ৪৭ হাজার ২শ’ টাকায় দুই বছরের জন্য ভাড়া নেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় মেয়াদে নবায়ন আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকা ভাড়ায় তিন বছরের জন্য জাহাজটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে জাহাজটি ভাড়া দেয়া হলে তিন থেকে চার গুণ বেশি ভাড়া পাওয়া যেত। অথচ চুক্তিনামায় তৃতীয় কোন পক্ষের নিকট ভাড়া (সাবলেট) প্রদান করলে চুক্তি বাতিল হবে বলে উল্লেখ থাকলেও ২০১০ সালে ভয়েজ এন্ড ক্রুজের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: শাহজাহান চট্টগ্রাম শেখ মুজিব রোডস্থ গাউসিয়া মার্কেটের মেসার্স বি রহমান অটো সাপ্লাইয়ের মালিক মো: নূরনবীর সাথে মাসিক দুই লাখ টাকা চুক্তিতে চার্টার জাহাজটি ভাড়া দেয়। তৃতীয় পক্ষ বিআইডব্লিউটিসিকে ভাড়ার ব্যাপারে লিখিত অবহিত করলেও দ্বিতীয় পক্ষের সাথে চুক্তিনামা বাতিল করেনি।
গত ১ জুন বি রহমান অটো সাপ্লাইয়ের পক্ষ থেকে বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালে ভয়েজ এন্ড ক্রুজ থেকে ভাড়া নেয়ার পর বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তিন বছর জাহাজ পরিচালনায় চরম ব্যাঘাত ঘটে। বাকি দুই বছরের মধ্যে এক বছর জাহাজটি মেরামত কাজের জন্য অলস বসে থাকে। এতে মেরামত বাবদ তিন কোটি টাকা খরচ হয়। আবেদনে ২৫০ যাত্রীর ধারণক্ষমতা ও ৯০ টন মালামাল বহনের ক্ষমতাসম্পন্ন ‘এলসিটি কাজল’ নৌযানটি সরাসরি তাদের পরিচালনায় নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ৭৫ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে দেড় লাখ টাকা ভাড়া প্রদান করবে জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, এতে সরকার আরও অধিক লাভবান হবে।
বিআইডব্লিউটিসি’র পুরানো বড় এ জাহাজটি দ্বিতীয় পক্ষের সাথে ভাড়া চুক্তির মেয়াদ আগামী ১০ অক্টোবর’১৬ পর্যন্ত বলবৎ থাকলেও মেয়াদ পূর্তি আগেই বিআইডব্লিউটিসি মাত্র এক লাখ টাকা ভাড়ায় গত ৩০ জুন’১৬ জনৈক সঞ্জয় কুমার রায়কে মেসার্স ভয়েজ এন্ড ক্রুজের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেখিয়ে কাজল নৌযানের চার্টার মেয়াদ আগামী ১ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ বছরের জন্য নবায়ন করা হয়। এদিকে এ সংক্রান্ত উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য/যাত্রী) মো: আজমল হোসেন স্বাক্ষরিত সঞ্জয় কুমারকে দেয়া এক চিঠিতে সাত দিনের মত নিরাপত্তা জামানতসহ মেরিন হাল পলিসি (বীমা) সম্পন্ন করে ডকুমেন্ট বিআইডব্লিউটিসি’র নিকট জমা দিতে বলা হলেও ২ কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার মেরিন হাল পলিসি (বীমা) ও ছয় মাসের ভাড়া পরিমাণ নিরাপত্তা জামানত বাবদ ৬ লাখ টাকা জমা না দিয়ে কোন চুক্তিনামা সম্পন্ন না করে জাহাজটি সঞ্জয় কুমার রায়কে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, এমবি সোনারগাঁও নামে বিআইডব্লিউটিসি অপরটি জাহাজ সঞ্জয় কুমার রায়কে ভাড়া দেয়া হয়েছে। তার কাছে ভাড়া বাবদ বিপুল অংকের টাকা বিআইডব্লিউটিসি পাওনা রয়েছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিসি’র আইন শাখা থেকে তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ এ অবস্থায় সঞ্জয় কুমার রায়কে পুনরায় এলসিটি কাজল ভাড়া দেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি’র ল’ অফিসার নূর মোহাম্মদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অনিয়মে বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ ভাড়া প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের গচ্চা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ