পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উমর ফারুক আলহাদী : গুলশান-১ ডিএনসিসি মার্কেটে পরিকল্পিতভাবে আগুন দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন লাগানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ আগুনে শুধু দোকান পুড়েনি, আমাদের কপালও পুড়েছে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পথে বসতে হবে। কি খামু, সন্তানদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যাবে।
গতকাল দুপুরে আগুনে পুড়ে যাওয়া মার্কেটের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা এভাবেই তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ওই মার্কেটে দুটি দোকান পুড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম কখনো কাঁদছিলেন, আবার কখনো আক্ষেপে-হতাশায় কপাল চাপড়াচ্ছিলেন । আবার কেউ কেউ হাউ মাউ করে কাঁদছেন, আবার কখনো আক্ষেপে-হতাশায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম জানান, ডিএনসিসি মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি তিনি। আর মার্কেটের ৪৯ ও ৫৩ নম্বর বেডশিট ও কাপড়ের দোকান দুটি তার। দুটি দোকানের নামই ‘নূর ভ্যারাইটিস’।
পুড়ে যাওয়া এই মার্কেটেই কসমেটিক্সের দোকান মালিক গুলজার হোসেন জানান, সোমবার রাতের আগুনে তার দোকানের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দোকানে প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল ছিল। দোকানে নগদ পাঁচ লাখ টাকাও ছিল। আগুনে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। দোকান হারিয়ে বার বার বিলাপ করছেন গুলজার।
আরকে ব্যবসায়ী কাওসার রহমান বলেন, আগুনে তারও একটি দোকান পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘জীবনের যা কিছু পুঁজি ছিল সব খাটিয়েছি ব্যবসায়। পরিবার নিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু রাতের আগুন সব কিছু কেড়ে নিয়ে আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। সংসার কেমনে চালামু। এতবড় লোকসান কেমনে পোষামু।’
কাঁদতে কাঁদতে নুরুল ইসলাম জানান, আগুন লেগে দোকান দুটিই পুড়ে গেছে। আর এই দোকানে ছিল দুই কোটি টাকার বেশি মালামাল। নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দুই দোকানে দুই কোটি টাকা শেষ হয়ে গেছে। আমি পথে বসে গেছি ভাই।’ তিনি জানান, এই দোকান দুটিই ছিল তাঁর একমাত্র সম্বল। মাত্র একদিন আগে তিনি দোকান দুটিতে মালপত্র উঠিয়েছিলেন। কিন্তু আগুনে সব পুড়ে তিনি সর্বস্বান্ত হয়ে গেলেন।
এদিকে রাজধানীর গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করে বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। তারা বলছেন, বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ডিএনসিসি ও মেট্রো গ্রুপ পরিকল্পনা করে মার্কেটে আগুন দিয়েছে। তাদের সাথে একমত পোষণ করে ব্যবসায়ীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করতেই আগুন দেয়া হয়েছে।
ডিএনসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ী শহীদুল্লাহ বলেন,পরিকল্পিতভাবে গান পাউডার দিয়ে আগুন ধরানো হয়েছে। আগুন লাগানোর আগে এখানে দুইটি বোম্বিং করা হয়েছে। কারণ, আগুন লাগার আধ ঘণ্টা পর ভবন ধসে পড়ার কথা নয়। মার্কেট সভাপতি শের মোহাম্মাদ একই অভিযোগ করেছেন।
শের মোহাম্মদ বলেন, ডিএনসিসি মার্কেটের জমির পরিমাণ সাত বিঘা সাত শতাংশ। এই জায়গায় বহুতল ভবন করার করার জন্য মেট্রো গ্রুপ টেন্ডার নিয়েছে। তারা বেশ কয়েক বার মার্কেট ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু দোকান মালিকদের কারণে পারেনি। এজন্য মেট্রো গ্রুপ পরিকল্পিতভাবে ডিসিসির কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে আগুন দিয়েছে দাবি করেন তিনি।
মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি শের মোহাম্মদের দাবি, এটি নিশ্চিত নাশকতা, তাই আগুন লাগার আধা ঘণ্টার মধ্যে ভবনের একাংশ ধসে পড়েছে। সাধারণত আগুন লাগলে এভাবে বিল্ডিং ধসে পড়ে না। তাঁর অভিযোগ ঘটনার সময় গভীর রাতে বোম্বিং করার হয়েছে। বোম্বিং-এর ফলে আগুন লাগার পর ভবন ধসে পড়ে।
১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকার এই মার্কেটটি নির্মাণ করে। তখন মেয়র ছিলেন মাহমুদুল হাসান। তখন থেকে দোকান বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসা করছে দোকান মালিকরা। ২০১০ সালে মেট্রো গ্রুপ ১৮ তলা ভবন নির্মাণের কাজ পায়।
গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, পরিকল্পিতভাবে মার্কেটে আগুন লাগানো হয়েছে। আগুন লাগার সময় বোম্বিংয়ের শব্দ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, গান পাউডারের কারণেই আগুন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল।
ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকরা জানান, গুলশানে বর্তমান সিটি করপোরেশন মার্কেট ভেঙে সেখানে পিপিপির আওতায় আধুনিক বিপণিকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০০৩ সালে দরপত্র আহ্বান করে ডিসিসি। সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে ওই বছরের ১৬ জুন কাজের সম্মতিপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু ২০০৫ সালের মার্চে কাজ শুরুর আগেই প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা কাজটি করবে না। পরে ডিসিসি পুনরায় দরপত্র আহ্বান না করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা মেসার্স আমিন অ্যাসোসিয়েটস ওভারসিজ কোম্পানিকে কাজটি দেয়। এ চুক্তিতে ডিসিসির মালিকানা রাখা হয় ২৭ শতাংশ এবং আমিন অ্যাসোসিয়েটসের ৭৩ শতাংশ। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২০০৫ সালের ২৪ মার্চ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সম্মতি দেয়। ২০০৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ডিসিসি ও আমিন অ্যাসোসিয়েটসের মধ্যে ট্রেড সেন্টার নির্মাণের চুক্তি হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক কাজ শুরু করে।
কিন্তু ২০০৭ সালের শুরুতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাজটি স্থগিত করে এবং চুক্তিতে ডিসিসির মালিকানা বাড়ানোর সুপারিশ করে। ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল এ কাজের জন্য আবার মূল্যায়ন কমিটির সভা ডাকা হয়। আমিন অ্যাসোসিয়েটসের উপস্থিতিতে ওই সভায় ডিসিসির মালিকানা ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাঁদের উচ্ছেদের জন্য চক্রান্ত করে আগুন দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এই ঘটনাকে নাশকতা বলে মনে করছেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ফায়ার সার্ভিস তেমনভাবে কাজ করছে না। দোতলা একটি বিল্ডিংয়ের ওপর এই মার্কেট, চারপাশে খোলা অথচ ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বলে ক্ষোভ জানান তাঁরা।
মার্কেট মালিক সমিতির একজন সদস্য বলেছেন, ২০০৩ সালে মেট্রো গ্রুপের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুয়ায়ী এই মার্কেটটি ভেঙে এখানে ১৮ তলাবিশিষ্ট একটি বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু এখানকার দোকান মালিকদের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এই নিয়ে দোকান মালিকদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একরকম বৈরী সম্পর্ক তৈরি হয়। বহুবার তাঁদের উচ্ছেদের জন্য হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ২০১০ সালে একটি মামলাও হয়েছে। বর্তমান মেয়র আনিসুল হক দায়িত্ব নেওয়ার পর দোকান মালিকদের কোনো হুমকি না দিয়ে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করেন।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মতৎপরতা নিয়ে অভিযোগ তোলেন মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বহু দোকানমালিক। তাঁদের মধ্যে আলতাফ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ষড়যন্ত্র মূলকভাবে আমাদের উচ্ছেদের জন্যই আগুন দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, রাতে মার্কেটের পূর্ব অংশে আগুন লাগে এবং কিছু সময় পর ওই অংশটি ধসে পড়ে। সকাল সাতটা পর্যন্ত মার্কেটের পশ্চিম অংশে কোনো আগুন ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের উপস্থিতিতেই আগুন পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সারা মার্কেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
কাপড় ব্যবসায়ী মনসুর আলী জানান, ফায়ার সার্ভিসের ২০-২১টি ইউনিট কাজ করছে বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একসঙ্গে দুটি বা তিনটির বেশি কাজ করছে না। একটি ইউনিট ১০ মিনিটের জন্য পানি দিয়ে চলে যাচ্ছে। আবার ১০ মিনিট পর পানি নিয়ে আসছে। এই সময়ের মধ্যে আগুন আবার ছড়িয়ে পড়ছে। নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
এদিকে দুপুরে আবারও ঘটনাস্থলে আসেন মেয়র আনিসুল হক। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভবনে কোনা মানুষ চাপা পড়েনি, এটা আল্লাহর রহমত। আগুন পরিকল্পিত ব্যবসায়ীদের এমন দাবির বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘মালিকেরা জানেন, আমি জানি না।’
বেলা দুইটার দিকে আনিসুল হক বলেন, আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে, দু-একটি জায়গায় এখনো আগুনের ফুলকি দেখা গেছে। আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস কাজ করবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে বলা যাবে না আগুন নিয়ন্ত্রণে। ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আসুক, তাঁদের সঙ্গে বসব।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।