পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : নিজ বাসভবনে ঢুকে গাইবান্ধার এমপি মনজুরুল আলম লিটনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় খুনাখুনির জেলা নরসিংদীর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আতংক দেখা দিয়েছে। রাজনীতিকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অজানা শঙ্কার। হানাহানির রাজনীতির কারণে জন্ম নিয়েছে নানা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার।
স্বাধীনতা-উত্তরকালের বাংলাদেশে নরসিংদীর মাটিতে সর্বপ্রথম আ.লীগের এমপি খুন হয়। ১৯৮৬ সালের সাবেক আ.লীগ এমপি খুন ও পরবর্তী কয়েকটি লোমহর্ষক রাজনৈতিক হত্যাকা-ের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমপি লিটনের হত্যাকা-ে সারা বাংলাদেশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার ঢেউ আছড়ে পড়েছে নরসিংদীর বিশাল জনপদেও। এমপি লিটন হত্যাকা-ের সাথে সাথে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে নরসিংদীর দুই এমপিসহ বড় বড় রাজনৈতিক হত্যাকা-ের ঘটনাগুলো।
জানা গেছে, স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম আওয়ামীলীগের এমপি খুনের ঘটনা ঘটে নরসিংদীতে। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর ১৯৭৪ সালের ১৭ই মার্চ মনোহরদীর এমপি গাজী ফজলুর রহমানকে হত্যা করা হয়। দুর্বৃত্তরা হাতিরদিয়া সাদত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের কক্ষে ঢুকে তাকে গুলি করে হত্যা করে নির্বিঘেœ পালিয়ে যায়। স্কুল কমিটির সভাপতি হিসেবে এমপি গাজী ফজলুর রহমান তখন স্কুলের একটি সভায় সভাপতিত্ব করছিলেন। এর কিছুদিন পর নরসিংদী শহরে অবস্থিত নরসিংদী সরকারি কলেজ আবাসিক হলে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগ নেতা ও নরসিংদী সরকারি কলেজ ছাত্রছাত্রী সংসদের ভিপি হারুন অর রশিদ। এরপর ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকারের শাসনামলে সংঘটিত হয় শিবপুরের সাবেক এমপি রবিউল আলম কিরন খাঁ হত্যাকা-। একই সালের ২৮ এপ্রিল তিনি একটি মোটর সাইকেল চালিয়ে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচী থেকে বাড়ী ফেরার পথে শিবপুরের খড়কমারা পাহাড়িয়া নদীর ব্রিজের উপর দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। কিরন খাঁ হত্যা মামলায় অনেক নির্দোষ ব্যক্তিকে আসামী করা হলেও পরবর্তীতে এই হত্যাকা-ের প্রকৃত আসামীদের ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। পরে এই কিরন খাঁ হত্যাকারী চক্রের একজন ইউসুফ ২০০২ সালে চাঁদপাশা বাজারে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন। ইউসুফ নিজেকে প্রথম সর্বহারা পার্টির সদস্য পরিচয় দিলেও পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি তাদের স্ফুলিঙ্গ পত্রিকায় তাকে ও তার দলকে ডাকাত হিসেবে চিহ্নিত করে।
এর পূর্বাপর সময় অর্থাৎ ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত নরসিংদী জেলায় মনোহরদী, বেলাব, শিবপুর, পলাশ ও রায়পুরায় কমবেশী ১৮৬ টি হত্যাকা- সংঘটিত হয়। এসব হত্যাকা- সংঘটিত হয় পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি নামে একটি গুপ্ত রাজনৈতিক দলের ব্যানারে। তারা ১৮৬ জন লোককে প্রথমে গুলি ও পরে গলা কেটে হত্যা করে। এই ১৮৬ জনের মধ্যে রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, ব্যবসায়ী, বাজার কমিটির সেক্রেটারীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্য। ৮০’র দশকের শেষ দিকে রায়পুরার মেথিকান্দায় নৃশংস হত্যাকা-ের শিকার হন জাতীয়তাবাদী যুবদলের জনপ্রিয় নেতা মোজাম্মেল হক। ’৯০ দশকের প্রথম দিকে মনোহরদীর হাতিরদিয়ায় প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন সাহাবুদ্দিন নামে একজন রাজনীতিক ও সমবায় নেতা। ১৯৯৮ সালে নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার বাংলাদেশ জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক বকুলকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করে। এরপর ২০০৪ সালে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান মনির। ১৯৭৩ সালে নরসিংদী শহরের সাটিরপাড়া এলাকায় জাসদের মিছিলে গুলিতে নিহত হন ৩ জন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা। ২০১১ সালের ১৫ মার্চ প্রকাশ্য দিনদুপুরে নরসিংদী সরকারি কলেজের ভিতরে ঢুকে দুর্বৃত্তরা নরসিংদী কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস বিল্লাল হোসেন রনিকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। ২০১১ সালে নরসিংদীতে সংঘটিত হয় দেশকাঁপানো হত্যাকা-। ১লা নভেম্বর রাতে আওয়ামীলীগ অফিসে ঢুকে নরসিংদী শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ভয়াবহ হত্যাকা-ের রেশ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। দীর্ঘদিন যাবত এই লোকমান হত্যা মামলাটি আইনী জটিলতার কারণে আদালতে ঝুলে রয়েছে। ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যা রাতে নরসিংদী শহরের দত্তপাড়ায় খুন হন নরসিংদী সদর থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও আলোকবালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সরকার। এরপর থেকে নরসিংদীতে অব্যাহতভাবেই ঘটে চলছে একের পর এক হত্যাকা-। দিনের পর দিন এইসব হত্যাকা-ের কারণে নরসিংদী পরিচিতি পায় খুনাখুনি জেলা হিসেবে। এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে চলছে মারাত্মক অভ্যন্তরীণ কোন্দল। জেলা আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে রয়েছে একাধিক উপদল। সম্প্রতি জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা সুস্পষ্টভাবেই বিভাজিত হয়েই রয়েছে। অশান্তির আগুন জ্বলছে আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।