পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আজ ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বাংলা ও বাঙালীর স্বাধীনতা-স্বাধিকার অর্জনের লক্ষেই মূলদল আওয়ামী লীগের জšে§র এক বছর আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল গৌরব ও ঐতিহ্যের এ ছাত্র সংগঠনটি। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার নেতৃত্বেই ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়।
তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবের প্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষকতায় এক ঝঁঋক মেধাবী তরুণদের উদ্যোগে সেদিন যাত্রা শুরু করে ছাত্রলীগ। ৬৯ বছরে ছাত্রলীগের ইতিহাস হচ্ছে জাতির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়ন, স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনা, গণতন্ত্র প্রগতির সংগ্রামকে বাস্তবে রূপদানের ইতিহাস। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দিয়েছে এবং চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’। পাকিস্তান আমলেই ‘মুসলিম’ শব্দটি ছেঁটে ফেলা হয়। স্বাধীনতার পর নাম হয় ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। ছাত্রস্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলের অনেক সংকটকালীন সময়ে ছাত্রলীগ ছিল আন্দোলনের নেতৃত্বের ভূমিকায়। দাবি আদায়ের সংগ্রামে ঝরে গেছে বহু নেতাকর্মীর প্রাণ। প্রতিষ্ঠালগ্নে নাইমউদ্দিন আহম্মেদকে আহ্বায়ক করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর আরমানিটোলায় ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলনে দবিরুল ইসলাম সভাপতি ও মোহাম্মদ আলী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙালীর ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, ’৫৪-এর সাধারণ নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ পরিশ্রমে যুক্তফ্রন্টের বিজয় নিশ্চিত, ’৫৮-এর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, ’৬৬-এর ৬ দফা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশের শিক্ষা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া, ৬ দফাকে বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাক-শাসকের পদত্যাগে বাধ্য করা এবং বন্দী দফা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি, ’৭০-এর নির্বাচনে ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ, স্বাধীনতা পরবর্তী সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র উত্তোরণসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের অসামান্য অবদান দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনের নেতাকর্মীরা পরে জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষ নেতার রাজনীতিতে হতেখড়িও হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে। তবে সংগঠনটি চলার পথ অনেক ক্ষেত্রে কুসুমাস্তীর্ণও ছিল না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই সংগঠনটি বড় ধরনের ভাঙনের কবলে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা তৎকালীন ছাত্রলীগের বেশ ক’জন শীর্ষনেতা সংগঠন ছেড়ে ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নামে নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সময় জাসদ ছাত্রলীগ নামে আলাদা ছাত্র সংগঠনও গড়ে ওঠে, যা আজ ছাত্র রাজনীতির মাঠে সক্রিয়। এরপরও কয়েক দফায় ভাঙা-গড়ার কবলে পড়তে হয়েছে সংগঠনটিকে।
কর্মসূচি
বুধবার ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি উৎসবমুখর করতে এবার নেয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি ও কর্মসূচি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে আঁকা হচ্ছে সাত দশকের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-‘চিত্রপটে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। এসব ছবিতে ইতিহাস আর সমকালীন অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়েছে। আছে বই উৎসবের চিত্র, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। দেয়ালচিত্রের বাইরেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ধরে চার দিনের কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী এ ছাত্র সংগঠন।
আজ সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শুরু হবে ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা। সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কাটা হবে কেক, পরে সকাল ১০টার দিকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে হবে রক্তদান কর্মসূচি। আর ৬ জানুয়ারি বিকালে অর্জিত স্বাধীনতা চত্বরে শীতবস্ত্র বিতরণ ও পরে টিএসসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে ছাত্রলীগ। এছাড়া ৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় কলাভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা নেতাদের।
ছাত্রলীগ ঘোষিত কর্মসূচি ঢাকাসহ সারাদেশের নেতাকর্মীদের জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন।
প্রতিষ্ঠার দিনকে উৎসবমুখর করতে ৯টি উপ-কমিটি করা হয়েছে ও ইতোমধ্যে প্রায় সকল ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানান ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ।
তিনি বলেন, দেশের সকল স্বাধিকার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রিয় সংগঠন ছাত্রলীগ। মুক্তিযুদ্ধে ১৭ হাজার নেতাকর্মী আত্মহুতি দিয়ে দেশের জন্য, সকল অপশক্তি বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। এই সংগঠন শুধুমাত্র ছাত্র সমাজের নয়, দেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রিয় সংগঠন। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের সঙ্গে দেশের সকল মানুষকে সংযুক্ত করে আনন্দ ভাগাভাগি করতে চাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।