Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হতাশায় ১৪ হাজার কর্মী

| প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকার সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প চালু করে। এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এই প্রকল্পের ভবিষ্যত এখনো অনিশ্চিত। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় একদিকে বেতন-ভাতা বন্ধের উপক্রম হয়েছে, অন্য দিকে চাকরির অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন প্রকল্পের প্রাণ হিসেবে পরিচিত ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। জানা গেছে, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, চাকরি জাতীয়করণ না হওয়াসহ বিভিন্ন অনিশ্চয়তা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক কর্মী চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকে ছাড়ার পথে। হতাশায় মৃত্যুবরণের ঘটনাও আছে। আর এসব কারণে বর্তমান সরকারের সাফল্যময় এই প্রকল্পে কর্মরত সিএইচসিপিরা প্রতিনিয়ত হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। অবিলম্বে সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয়করণ না হলে ভবনসর্বস্ব হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর ১৯৯৮ সালে ছয় হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তন হলে তৎকালীন সরকার ২০০১ সালে প্রকল্পটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। জনগণের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার নিয়ে ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প পুনরায় চালু করে। ২০১১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার হিসেবে ১৩ হাজার ৫০০ জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। বিভিন্ন সময় এসব সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয়করণের আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্প রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম চোখে পড়েনি।  
সূত্র জানায়, ২০১২ সাল থেকে সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয়করণের আলোচনা শুরু হয়। এই প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সালমা ছিদ্দিকা মাহাতাব, একই বছরের ২৯ জুলাই প্রকল্প পরিচালক ডা: মাখদুমা নার্গিস এবং ১৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৎকালীন পরিচালক (প্রশাসন) ডা: মো: শাহনেওয়াজ সিভিল সার্জনদের চিঠির মাধ্যমে চাকরি জাতীয়করণের বিষয়টি জানান। ২০১৪ সালে ১৪ এপ্রিল তৎকালীন প্রকল্পপরিচালক ডা: মাখদুমা নার্গিস দেশের সকল সিভিল সার্জনদের সিএইচসিপিদের চাকরি বই খোলার বিষয়ে চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি বলেন, ‘রিভাইটালাইজেশন অব কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সকাল কর্মরত সিএইচসিপিদের চাকরি বই খুলে তাদের যোগদানের তারিখ ও নৈমিত্তিক ছুটি ব্যতীত সকল প্রকার ছুটি মঞ্জুরীর আদেশ অনুযায়ী চাকরি বইতে লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করা হলো।     
দেশের বিভিন্ন অঞ্চেলের সিএইচসিপিরা জানান, আইএমডির মূল্যায়ন প্রতিবেদন ২০১৩ প্রকল্প অফিস থেকে বলা হয়েছিল, ২০১৫ সালের সালের জুলাই মাসে চাকরি জাতীয়করণ করা হবে। এমনকি চাকরি রাজস্বকরণ হবে বলে সারাদেশের সিএইচসিপিদের নামে সার্ভিস বুক ও এসিআর ফরম খোলা হয়। কিন্তু তারপর এই প্রক্রিয়া থমকে যায়। ফলে অনেকই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা কামাল হোসেন সরকার বলেন, সিএইচসিপি পদে কর্মরতদের নিয়োগবিধিতে কোনো ছুটি নেই। ফলে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, বা দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে অনুপস্থিত থাকে, তাহলে তাদের বেতন কাটা হয়। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও প্রকল্প চলবে নাকি বন্ধ হয়ে যাবে, সে বিষয়ে সবকিছু অজানা। এভাবে চলতে থাকলে স্বল্প সময়ে সিএইচসিপিদের বড় অংশ চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবেন। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।  
সিএইচসিপি দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য মো: সুমন মাতবর বলেন, চাকরি জাতীয়করণ ও রাজস্বকরণ হবে বলে দীর্ঘদিন থেকে প্রকল্পে থেকে অনেকের সরকারি চাকরির বয়স শেষ, অনেকের শেষের পথে। এ অবস্থায় ১৪ হাজার সিএইচসিপি ও তাদের পরিবারসহ হত-দরিদ্র জনগোষ্ঠী আজ হতাশায় নিমজ্জিত। তিনি এ থেকে উত্তরণে এই প্রকল্পের উদ্ভাবনকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ প্রসঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের পরিচালক ডা: মমতাজুল হক বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্প চলমান থাকবে। আগামী মার্চের মধ্যে নতুন প্রকল্পের ওপি (অপারেশনাল প্লান) পাস হবে। তারপর আগের মতোই চলতে থাকবে এই প্রকল্প। সিএইচসিপিদের বেতন বন্ধ প্রসঙ্গে ডা: মমতাজ বলেন, বেতন সাময়ীক বন্ধ থাকলেও এটা ঠিক হয়ে যাবে। এই সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে থোক বরাদ্ধের আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে সারাদেশের সিএইচসিপিদের তিন মাসের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হবে। এই প্রকল্প রাজস্ব খাতে যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ফাইল সেক্টর প্রোগ্রামে যাবে। তারপর এটি একনেকে পাস হলে রাজস্ব খাতে যাওয়ার কার্যক্রম অনেকটাই অগ্রসর হবে।   
উল্লেখ্য, গ্রামীণ মানুষের হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ গরিব মানুষ সেবা গ্রহণ করেন। কমিউনিটি ক্লিনিকে সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় অন্তঃসত্তা মহিলাদের প্রসব পূর্ব (প্রতিষেধক টিকা দান) এবং প্রসবপরবর্তী (নবজাতকের সেবাসহ) সেবা প্রদান করা হয়। সময় মতো প্রতিষেধক টিকা দানসহ (যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কফ, পোলিও, ধনুষ্টঙ্কার, হাম, হেপাটাইটিস-বি, নিউমোনিয়া, ইত্যাদি) শিশু ও কিশোর- কিশোরীদের জন্য প্রয়োজনী স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। ২০১১ সাল থেকে সর্বশেষ প্রায় ১৪ হাজার সিএইচসিপি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত আছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কমিউনিটি ক্লিনিক

৩ জানুয়ারি, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ