পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
ইনকিলাব ডেস্ক ঃ নানামুখী জটিলতায় জর্জরিত পুঁজিবাজারের খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের এমারেল্ড ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বিক্রি হবে। দেশের দুই খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রæপ এবং বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল লিমিটেড এমারেল্ড ওয়েল কিনে নিচ্ছে বলে খবর রটেছে। এজিএমে শেয়ারহোল্ডাররা বিষয়টি পর্ষদের নজরে আনেন এবং এ বিষয়ে জানতে চান। তবে কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্বজন কুমার বসাক এ বিষয়ে কৌশলগত জবাব দেন। কোম্পানি বিক্রি করা হবে কিনা এ প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান পর্ষদ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। তাই শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে আমরা পর্ষদ পুনর্গঠন করবো। সামনের পরিচালনা পর্ষদ সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তখন আপনাদের (শেয়ারহোল্ডার) জানানো হবে। তার এই কথা শুনেই একাধিক শেয়ারহোল্ডার বলেন, আমরা আপনার কথা বুঝে ফেলেছি। বিক্রির সিদ্ধান্তই আপনারা নিয়েছেন।
গতকাল অনুষ্ঠিত কোম্পানির ৯ম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) উপস্থিত শেয়ারহোল্ডারদের প্রশ্নের জবাবে সভাপতি স্বজন কুমার বসাক এসব কথা বলেন। এ সময় কোম্পানির অন্য পরিচালকবৃন্দসহ বেশ কিছু শেয়ারহোল্ডার উপস্থিত ছিলেন। তবে কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ মনোয়ারুল ইসলাম, উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিব এবং পরিচালক এএসএম মনিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন না। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে।
এজিএমে স্বাগত বক্তব্যে সভাপতির দায়িত্ব পালন করা স্বজন কুমার বসাক বলেন, দুদকের মামলার কারণে ২০১৫-২০১৬ হিসাব বছরটি আমাদের সঙ্কটে গেছে। এছাড়া বেসিক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মাইডাস ফাইন্যান্সিংসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে ঋণ নিয়ে আমাদের সমস্যা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সমস্যার কারণে বছরের প্রায় ছয় মাস আমাদের উৎপাদন বন্ধ ছিল। তবে এসব সঙ্কট কাটানোর জন্য আমরা তৈরি হচ্ছি। তারই জেরে আমাদের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের কাছে আমাদের অনেক দেনা রয়েছে। এ কারণে চাইলেই পর্ষদ পুনর্গঠন করা যাবে না। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সাথে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ মাসেই আমরা ব্যাংক এশিয়া এবং মাইডাস ফাইন্যান্সের ঋণ পরিশোধে একটা সমঝোতায় এসেছি। আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিল করা হবে। আশা করছি শিগগিরই এসব সঙ্কটের সমাধান হয়ে যাবে। তাই সামনের বছর এমারেল্ড ওয়েল শেয়ারহোল্ডারদের ভাল কিছু দেখাবে।
এ সময় শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন জামিল আহমেদ, সোরাব হোসেন লিঙ্কন, আবু সুফিয়ান টিটু, লুৎফুল গনি, লিয়াকত, শাহরিয়ার আলম, সেলিম রেজা প্রমুখ। তারা বলেন, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক অসুস্থ। তাছাড়া তিনি তার দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারছেন না। তাই বর্তমান পরিচালক এবং রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের কোম্পানি সেক্রেটারি স্বজন কুমার বসাককে এমারেল্ড ওয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালনের জন্য আহবান জানান। তারা আরও বলেন, যদি স্বজন কুমার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব না পান তবে কোম্পানির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এর জবাবে স্বজন কুমার বলেন, এখানে আইনি কোন ঝামেলা না থাকলে প্রয়োজনে রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের চাকরি ছেড়ে কোম্পানির দায়িত্ব নিতে রাজি আছি বলে উপস্থিত শেয়ারহোল্ডারদের আশ্বস্ত করেন তিনি। শেয়ারহোল্ডাররা আরও বলেন, বাংলাদেশে রাইস ব্র্যান ওয়েলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কোম্পানির পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। তারা উদাহরণ টেনে বলেন, উৎপাদন বন্ধ থাকা সত্তে¡ও কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ৩৩ পয়সা। যা আগের বছর ছিল ৩ টাকা ১০ পয়সা। এমন সঙ্কটে যেখানে অন্য কোম্পানি কোন ডিভিডেন্ড দেয়না সেখানে এমারেল্ড ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ কিছুটা হলেও রক্ষা করেছে।
এসময় সভাপতি স্বজন কুমার এজিএমের এজেন্ডা উপস্থাপন করেন। এজেন্ডাগুলো শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে অনুমোদন হয়। তবে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব এবং পরিচালক এএসএম মনিরুল ইসলাম অবসরে গেছেন। কিন্তু তারা পর্ষদে পুনঃনিয়োগ পাওয়ার জন্য আবেদন করেননি। তবে এ পদে আর কোন আগ্রহী প্রার্থী না থাকায় তাদেরকেই নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রস্তাব করা হলে শেয়ারহোল্ডাররা তা নাকচ করে দেয়। এ সময় শেয়ারহোল্ডাররা বলেন, পর্ষদে এ দুই জনের দরকার নেই। তাদের বাদ দিয়ে সক্রিয় কাউকে নির্বাচন করার পরামর্শ দেন তারা।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সাল থেকে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। বর্তমানে এর প্রধান কার্যালয় ঢাকার বিজয় নগরে। বাজারে এদের পণ্যের নাম স্পন্দন রাইস অয়েল। আইপিওতে (প্রাথমিক শেয়ার) আসার আগে প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধন ছিল ২৭ কোটি টাকা। এরপর আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা নেয়। ফলে মূলধন দাঁড়ায় ৪৭ কোটি টাকা। পরে দুই দফা বোনাস শেয়ার দেয়ার পর বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির পরিশোধিত মূলধন ৫৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির ৫৫ দশমিক ১৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। তবে ২১ উদ্যোক্তার মধ্যে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুল গনি গালিব ও তার স্ত্রী ফারহানা গালিব এমির কাছে রয়েছে মোট শেয়ারের ৩২ দশমিক ০২ শতাংশ। ওয়েবসাইট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।