Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রকে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলতে চাইছে রাশিয়া

| প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ইরান ও রুশ কর্তৃপক্ষ তালিবানের সঙ্গেই নিজেদের সম্পর্ক জোরদার করছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। আর এই খবরটি পশ্চিমা অনেক রাষ্ট্রের জন্যই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সমর্থন বৃদ্ধি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটে ভাঙন এবং ইউরোপের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশে নানা রাজনৈতিক শক্তির উত্থান- এসব কিছুকেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিজেদের পরাজয়ের মোক্ষম বদলা নেয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে বিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি লজ্জাজনক পরিস্থিতিতেও ফেলতে চাইছে রাশিয়া। তালিবানের সঙ্গে ইরানি প্রশাসনের জড়িত থাকার বিষয়টি বেশ পুরোনোই। তবে তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে রুশ স্বীকারোক্তি আফগান যুদ্ধে জড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক বিশাল ধাক্কা হিসেবে এসেছে। কারণ আফগানিস্তানে তালিবানের সঙ্গে চলমান যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধটি ওয়াশিংটনের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ লড়াই হিসেবেই বিবেচিত। পরমাণু ইস্যুতে চুক্তি থাকার পরও ইরানের অনেকেই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়। তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই বলে এসেছেন তিনি ক্ষমতার প্রথমদিনই তেহরানের সঙ্গে হওয়া ওয়াশিংটনের পরমাণু চুক্তিটি ছিঁড়ে ফেলে দেবেন। পাশাপাশি ইরাক ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে যাওয়ায় ইরানের অনেকে নিজেদের অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে আছে বলে মনে করছে। তালিবানি প্রশাসন আফগানিস্তানে এরই মধ্যে যে সাফল্য পেয়েছে, রুশ কর্তৃপক্ষ অবশ্যই তা বিশ্বের চোখে আরও বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা করবে এবং দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার এতদিন ধরে চালানো যুক্তরাষ্ট্রের প্রচারণাগুলোকে সাধারণের মাঝে অজনপ্রিয় করে তোলারও চেষ্টা করবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকটা বাধ্য হয়েই আফগানিস্তানে তাদের দীর্ঘদিনের চলমান কার্যক্রম বন্ধ করতে হতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন সম্পর্কে কোনো পূর্বাভাস না থাকায় ইরান সরকার তালিবানের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ককে আরও জোরদারের চেষ্টা করছে। সাবেক তালিবান নেতা মোল্লা মনসুর যখন যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হন, তখন তিনি ইরানেরই মাশাদ নামক স্থান থেকে ফিরে পাকিস্তানের কোয়েটায় যাচ্ছিলেন। ওই ঘটনা থেকেই তালিবানের সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। যদিও কিছুদিন আগ পর্যন্তও তালিবানের উচ্চপদস্থ নেতাদের দেশটিতে ভ্রমণের বিষয়টি এড়িয়ে যেত তেহরান। তবে সম্পর্কোন্নয়নের পর থেকেই তালিবান নেতাদের দেশটিতে ভ্রমণ নিয়ে লুকোচুরি বন্ধ করেছে তেহরান। এমনকি মধ্যপন্থী অ্যাখ্যা দিয়ে দেশটিতে অনুষ্ঠিত ইসলামিক সম্মেলনগুলোতে তালিবান নেতাদের সরাসরি আমন্ত্রণ জানানোও হচ্ছে তেহরানের পক্ষ থেকে। অপরদিকে রাশিয়া আবারও বিশ্বে নিজেদের ভূমিকা জানান দিতে যাচ্ছে। তবে এবার তাদের ভিন্ন ভূমিকায় দেখা যাবে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা আফগানিস্তানে অবস্থান করছে। বিদেশি থেকে মুক্তি পেতে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় ফিরছে রাশিয়া। আফগানিস্তানে ন্যাটো জোটের অভিযানের ব্যাপারে রুশ কর্তৃপক্ষ লিখিত সম্মতি দিলেও, তারা একে তিন দশক আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে বিরোধিতা করেছিল, তার যোগ্য বদলা নেয়ার সঠিক সুযোগ হিসেবেই দেখছে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট তিন দশকের আগের থেকে কিছুটা ভিন্ন। সে সময় বেশিরভাগ আফগান তাদের দেশ থেকে রেড আর্মির বিতাড়নের পক্ষে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রর সেনাদের ক্ষেত্রে বিষয়টিই একেবারেই বিপরীত। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের প্রতি স্থানীয় আফগানদের যথেষ্ট সমর্থন রয়েছে, যদিও তারা দেশটিতে স্থিতিশীলতা এনে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আর এই জন্যই রাশিয়া সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের বিরোধিতা না করে তাদের বিপক্ষে অন্যদের লেলিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বর্তমানে পাকিস্তানের সম্পর্কও বেশ খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রর ঘনিষ্ঠতাও পাকিস্তানকে দিন দিন ভাবিয়ে তুলছে। রুশ কর্তৃপক্ষ ঠিক এই সুযোগকেই কাজে লাগাতে চাইছে। তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি রুশ কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানকেও নিজেদের বলয়ে নিয়ে আসতে চায়। তাই মস্কো-ইসলামাবাদ জোট আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সরাতে ট্রাম্প প্রশাসনকে বাধ্য করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ডিপ্লোম্যাট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ