Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১০০ বছর আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামানো যাবে না

রাজধানীতে শান্তি সমাবেশে আ. লীগ নেতারা বিএনপিকে ঠেকাতে মাঠে আ.লীগ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২৩, ১২:০১ এএম

১৯৬৮-৬৯ সালের ঢাকার রাজপথের কথা মনে আছে? জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার আদায়ের দাবিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৬ দফার আন্দোলনে প্রকম্পিত ঢাকা শহর। বছরের বেশির ভাগ সময় পাল্টাপাল্টি মিটিং মিছিলে ঢাকা উত্তাল নগরী। একদিনে জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের আন্দোলন; অন্যদিকে আন্দোলন ঠেকাতে পাকিস্তান শাসকবর্গের পাল্টা ‘শান্তি সমাবেশ’। আওয়ামী লীগ যেখানে কর্মসূচি দিতো পাল্টা কর্মসুচি ‘শান্তি সমাবেশ’ করতো পাকিস্তানের শাসক দল। ৫৫ বছর পর যেন ঢাকায় ফিরে এসেছে সেই দৃশ্য। একদিকে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর জনগণের ভোটের অধিকার তথা সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে পদযাত্রাসহ নানান কর্মসূচি পালন করছে; অন্যদিকে বিএনপিকে ঠেকাতে ক্ষমতাসীন দল রাজপথে ‘শান্তি সমাবেশ’ করছে। বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণার পর একই দিনে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে এতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

রাজধানী ঢাকার কয়েকটি স্থানে শান্তি সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ আয়োজিত এসব সমাবেশে নেতারা বলেছেন, বিএনপি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি বলে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০ ভাগ ভোটও পাবে না। বাস্তবতা হলো দেশবাসী উল্টো চিত্র দেখছে। ১০০ বছর আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামানো যাবে না। ‘বিএনপি জামায়াতের নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে’ ঢাকা উত্তর মিরপুর ১ নম্বর গোল চত্বর বাস স্ট্যান্ড, মোহাম্মদপুর টাউন হলের সামন, উত্তরার আজমপুর আমিন কমপ্লেক্সের সামন ও মধ্য বাড্ডা ইউলুপের সামনে শান্তি সমাবেশ করেছে। আর ঢাকা দক্ষিণ যাত্রাবাড়ি ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ধানমন্ডিসহ কয়েকটি যায়গায় শান্তি সমাবেশে করে।

ধানমণ্ডি : রাজধানীর ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের ঢাকা-১০ সাংগাঠনিক টিম আয়োজিত শান্তি সমাবেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, বিএনপি বলে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০ ভাগ ভোটও পাবে না। আপনারা মনে হয় আয়নায় চেহারা দেখেন না, নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখে মাঠে আইসেন। বলেছিলেন আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। বাস্তবতা হলো আওয়ামী লীগকে ১০০ বছরেও নামাইতে পারবেন না। এবার বাংলার জনগণ বিএনপিকে ১০ ভাগ ভোটও দেবে না। ২০১৮ সালে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন ভুলে গিয়ে নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে এসে পেয়েছিলেন ৮টা।

বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে মেয়র তাপস বলেন, ’২১ আগস্ট, ২০০৪ সালে শান্তি সমাবেশে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। যারা বিদ্যুৎ দিতে পারেনি, খাম্বা দিয়েছে। ৫ বছরে ৬ বার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। সংবিধানকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। আপনাদের জন্মই সংবিধানের বাইরে, গণতন্ত্রের বাইরে। আপনারা কোনদিন গণতন্ত্র মানবেন না, এটাই স্বাভাবিক। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাঁধা দেব না। তবে সহিংসতা করলে বাংলার জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।

বাংলাদেশ গণতন্ত্র সূচকে দুই ধাপ এগিয়েছে মন্তব্য করে তাপস বলেন, উন্নয়নের কথায় ওনাদের অন্তর্জ্বালা শুরু হয়ে যায়। ওনারা এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে পারে নাই, শেখ হাসিনা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। শেখ হাসিনা মধ্যম আয়ের দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করবেন।
নুরুল আমিন রুহুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্যা আযম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

মোহাম্মদপুর : মোহাম্মদপুরে আদাবর থানা আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশে’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচন ছাড়া কোনো সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায় না। তিনি আরো বলেন, পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার সরকার এগিয়ে নিয়ে এসেছে। আর বিএনপি আন্দোলনের নামে বারবার জ্বালাও পোড়াও করেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি দেশবিরোধী অনেক ষড়যন্ত্র করেছে, তারেক রহমান লন্ডনে বসে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করছে। আপনারা বলেছিলেন ১০ ডিসেম্বরের পরে দেশ খালেদার নির্দেশে চলবে তা হয়নি এখনো শেখ হাসিনার সরকারের নির্দেশেই দেশ চলছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৪ বছর আগের মুখ থুবড়ে পড়া দেশ এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি এখন আমাদের গণতন্ত্র শেখাচ্ছে। তাই বিএনপিকে ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে আসতে হবে। নির্বাচনের পথে আসুন। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা পরিবর্তন করতে পারবেন না।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ : মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ‘শান্তি সমাবেশে’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন, বিএনপি কেবল সরকার পতনের লক্ষ্যে কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নামে নাই। তারা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাঠে নেমেছে। বিএনপিসহ যেসব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বপ্ন দেখছেন, তাদের সে স্বপ্ন বাংলার মাটিতে আর বাস্তবায়ন হবে না। এদেশে সংবিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে অবশ্যই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী দেখতে চাই।

আব্দুর রহমান বলেন, প্রয়োজন হলে আর একবার আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সন্তানেরার পাঞ্জা ধরবে। লড়াই করবো, তবুও মাঠ ছাড়বো না। শেখ হাসিনা থাকলে বাংলাদেশ থাকবে, এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। আমরা শান্তি সমাবেশ করছি। অপরদিকে একটা দানবীয় শক্তি সরকার পতনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সংবিধান বিরোধী কোনও দাবি মানবে না আওয়ামী লীগ। তাদের ক্ষমতা ভাগাভাগির স্বপ্ন পূরণ হবে না।

মীরপুর : আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, যারা দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যারা আঘাত করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। তাদের বলব- তোমরা জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশে ও শেখ হাসিনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা কর না। দেশের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা কর না। আমরা মানুষের সঙ্গে আছি। গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে আমরা যেকোনো চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। মিরপুর-১ এর গোল চত্বরে বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। আমাদের দায়িত্ব হলো বাংলাদেশের মানুষ যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, ঘর থেকে শান্তিতে কর্মে যেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রস্তুত রয়েছে। সন্ত্রাসীরা যতই অপচেষ্টা চালাক দেশের মানুষ অতীতের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেতন। মির্জা ফখরুলরা বলেন আমরা নাকি ভয় পেয়েছি। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। তারা কোনো অশুভ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে কোনদিন মাথানত করেনি, আর কেউ করবে না। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর নেতা এস এম মান্নান কচি।

ডেমরার চৌরাস্তা : আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও নৈরাজ্য কিছুতেই প্রতিষ্ঠিত হতে দেবে না আওয়ামী লীগ। প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দিনরাত রাজপথে থেকে বলিষ্ঠ শক্তি নিয়ে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করবে বিএনপি-জামায়াতকে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ডেমরা থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ডেমরার চৌরাস্তায় অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশ ও গণমিছিল কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য। অথচ একটি কুচক্রী মহল এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে। তারপরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ষড়যন্ত্রকে পেছনে ফেলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে বীরদর্পে এগিয়ে যাবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঘুঘু দেখেছ কিন্তু তার ফাঁদ দেখনি। আগামী নির্বাচনেও আবার ক্ষমতায় আসার জন্য যা যা প্রয়োজন তা সবই করবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খান মাসুদের সভাপতিত্বে মিসবাহুর রহমান ভূঁইয়া রতন, গোলাম সারোয়ার কবির প্রমূখ বক্তৃতা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আ. লীগ

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৯ ডিসেম্বর, ২০২১
৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ