পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের ২০ কোটি মুসলমান এখন আক্ষরিক অর্থেই সে দেশে অধিকার-হারা সমাজচ্যুত (pariah) জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি বিবিসিতে প্রচারিত দুটো তথ্যচিত্র ২০০২ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে গুজরাটের মুসলিম-নিধন দাঙ্গায় মোদির ভ‚মিকাকে বিভিন্ন প্রামাণ্য তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলায় ঐ দাঙ্গায় ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ন্যক্কারজনক ভ‚মিকাকে বিশে^র জনগণের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। ঐ দাঙ্গায় প্রায় দু’হাজার মানুষকে অমানুষিকভাবে হত্যা করা হয়েছিল, যাদের ৯০ শতাংশেরও বেশি ছিল মুসলিম। ঐ দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল এর কয়েকদিন আগে ভারতের গুজরাট রাজ্যের গোধারা নামক স্থানে ট্রেনের দুটো কামরায় কতিপয় আততায়ীর অগ্নি-সন্ত্রাসের আগুনে পুড়ে ৫৯ জন হিন্দু তীর্থযাত্রীর মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায়। ঐ সময় নরেন্দ্র মোদি ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। ট্রেন দুর্ঘটনার পর কোনো তদন্ত ছাড়াই ঐ অগ্নিকান্ডের জন্য তিনি স্থানীয় মুসলিমদেরকে সরাসরি দায়ী করে রক্তচক্ষু নিয়ে টেলিভিশনে বক্তব্য রেখেছিলেন, ‘ঘটনার জন্য তাদেরকে চরম মূল্য দিতেই হবে’।
তাঁর ঐ উস্কানিমূলক বক্তব্যকে সিগন্যাল ধরে নিয়ে গুজরাটের বিজেপি ও আরএসএস-এর গুন্ডারা রাজ্যজুড়ে দাঙ্গা শুরু করে দেয়, যার অসহায় শিকারে পরিণত হয়েছিল গুজরাটের মুসলিমরা। বিবিসি’র তথ্যচিত্রে প্রমাণসহ বলা হয়েছে, ঐ দাঙ্গা প্রতিরোধের জন্য নরেন্দ্র মোদি আদেশ জারি করেননি, কোনো পদক্ষেপও গ্রহণ করেননি। বরং, তিনি বলেছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া থামানোর জন্য কিছু করা উচিত হবে না। ফলে, সারা গুজরাটে সরকারের পুলিশ বাহিনী ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নীরব দর্শক হয়ে ঐ মুসলিম-নিধন-যজ্ঞ চলতে দিয়েছিল। ঐ দাঙ্গার জন্য নরেন্দ্র মোদিকে দায়ী করে ভারতের তদানীন্তন কংগ্রেস সরকার মামলা দায়ের করেছিল। কিন্তু, মোদির মুসলিম-নিধনকারী ভ‚মিকা ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগোষ্ঠীর বৃহদাংশের কাছে খুবই পছন্দনীয় হওয়ায় দাঙ্গার পর সারা ভারতে মোদির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে পৌঁছে যায়।
ফলে, পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’র জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায়। পাশাপাশি, নরেন্দ্র মোদিও বিজেপি’র সিনিয়র নেতাদেরকে ডিঙিয়ে বিজেপি’র মূল নেতার আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে যান। এ জনপ্রিয়তার জোয়ারে অবগাহন করে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিজেপি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন হয়েছে এবং মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আরো বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হয়েছে। ২০২৩ সালেও নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা অক্ষুণœ রয়েছে। এর মানে, মোদির মুসলিমবিরোধী অপরাজনীতি ভারতের সাধারণ হিন্দু ভোটারদের অধিকাংশেরই খুব মনঃপূত হয়েছে। ভারতে সাধারণ হিন্দু জনগণের মুসলিম-বিদ্বেষকে সুপরিকল্পিতভাবে উস্কে দিয়ে নরেন্দ্র মোদি ভারতের নব্য জনগণ-মন-অধিনায়ক বনে গেছেন।
নয় বছর ক্ষমতায় থেকেও মোদি এখনো ঐ আসনে সমাসীন রয়েছেন। গত একুশ বছরেও নরেন্দ্র মোদি কিংবা তার সাঙ্গপাঙ্গদের কেউ ২০০২ সালের এই পরিকল্পিত ‘এথনিক ক্লিনজিং’ এর জন্য দুঃখ প্রকাশ পর্যন্ত করেননি। বরং কাতারের টিভি চ্যানেল আল-জাজিরার এক সংবাদে ২০২২ সালে বর্তমান নরেন্দ্র মোদি সরকারের আমলের ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে এক জনসভায় সহাস্যে বলতে শোনা গেল, ‘২০০২ সালে আমরা তাদেরকে এমন শিক্ষা দিয়েছি যে, তারা গত ২২ বছর আর কিছু করার দুঃসাহস দেখায়নি’।
গুজরাটের ঐ দাঙ্গার পর গত একুশ বছর ধরে ভারতের ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও সঙ্ঘাত বিশে^র সচেতন জনগণের মনোযোগের ফোকাসে পরিণত হয়েছে। বিবিসি’র তথ্যচিত্রটি আবারো বিষয়টিকে বিশে^র সামনে নগ্নভাবে উন্মোচন করে দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি তথ্যচিত্রটি প্রদর্শন বন্ধের আদেশ জারি করেছেন। (সবশেষে ভারতের পুলিশ বিবিসি’র কার্যালয়ে কয়েকদিন তল্লাশি চালিয়ে ঘোষণা করেছে বিবিসি আয়কর ঠিকমত পরিশোধ করেনি। এটা যে শুধুই প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে হয়রানি তা না বোঝার কারণ নেই)। বিজেপি’র গুন্ডারা বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শন বন্ধে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে দিচ্ছে।
স্বয়ং মোদি বিবিসি’র এ তথ্যচিত্রকে ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতা-উদ্ভ‚ত প্রোপাগান্ডা’ আখ্যায়িত করতেও দ্বিধা করেননি। কিন্তু, ভারতে এবং বিশে^র নানা দেশে মোদির এহেন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ দিনদিন জোরালো হচ্ছে। খোদ মার্কিন প্রশাসন এই ইস্যুতে তাদের রাজনৈতিক মিত্র ভারতকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে, এহেন অপতৎপরতা তাদের কাছেও গ্রহণযোগ্য নয়। গত দু’দশকের ঘটনাবলী বলতে চাইছে, ধর্মকে অন্ধভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার একটি সমাজকে কতখানি গোমরাহির অন্ধকারে নিমজ্জিত করতে পারে তারই প্রত্যক্ষ উদাহরণ হয়ে উঠেছে ভারত।
২০১৪ সালে ‘গুজরাট দাঙ্গার মহারথী’ নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ভারতীয় জনগণ গত নয় বছর ধরে সাম্প্রদায়িকতার মহাগহরে তলিয়ে যাচ্ছে। দাঙ্গা উসকে দেওয়ায় কংগ্রেস আমলে মোদির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হলেও ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিজেপি-নিয়োজিত বিচারপতিদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বপূর্ণ রায়ে মোদিকে অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছিল। কট্টর হিন্দুত্ববাদকে বিজেপি’র রাজনীতির মূল আদর্শে পরিণত করেছেন নরেন্দ্র মোদি। ‘ভারত শুধু হিন্দুদের দেশ’- এটাই মোদির প্রধান আদর্শ। ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ যে কত ঠুনকো সেটা বিজেপি’র এহেন নাটকীয় উত্থান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। ২০০২ সালের ঐ দাঙ্গার পর থেকে গত একুশ বছর ধরে ভারতীয় রাজনীতি মোদি এবং বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদের আফিমের মৌতাতে মশগুল রয়েছে।
বিজেপি’র আদর্শিক মূল-সংগঠন আরএসএস এর গেরুয়া-উত্তরীয়ধারী গুন্ডারা ‘সিভিল আর্মির’ ঢঙে লাঠি-মিছিল করে ভারতের বেশিরভাগ শহরে এখন মুসলিম সম্প্রদায়কে ‘জয় শ্রীরাম’ সেøাগান দিতে বাধ্য করছে, এবং সেøাগান দিতে অস্বীকার করলে লাঠিপেটা করে চলেছে। গত বছর ভারতের কর্ণাটকে একজন মুসলিম কলেজ-শিক্ষার্থী তরুণী বোরখা ও হিজাব পরিধানের কারণে বিজেপি’র গেরুয়াধারী আক্রমণ-উদ্যত সমর্থকদের সামনে পড়ে নাকাল হয়েছিলেন। ঐ চেলা-চামুন্ডাদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিসহকারে অশ্রাব্য গালিগালাজে অতিষ্ঠ হয়ে উক্ত তরুণীর উপর্যুপরি ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে সোচ্চার প্রতিবাদের ভিডিওটি শুধু ভারতে নয়- সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ভারতের কুড়ি কোটি মুসলমান এখন আক্ষরিক অর্থেই সে দেশে অধিকার-হারা সমাজচ্যুত জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে।
পাঠকদের হয়তো মনে আছে, ২০১৪ সালে যখন নরেন্দ্র মোদি ভারতের নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তখন নোবেল পুরস্কার-বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বিজেপি তাদের কট্টর হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাকে কোনো রাখঢাক ছাড়াই সামনে নিয়ে এসেছে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে মোদি সরকার একের পর এক হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়িত করে চলেছে, যার মধ্যে ভারতীয় সংবিধানে প্রদত্ত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার বিলোপ, ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেনশিপ (এনআরসি) আইন পাশ এবং সিটিজেনশিপ এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) পাশ সারা ভারতে এবং বিশে^ও প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
সিটিজেনশিপ এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্টে যেভাবে মুসলিমদেরকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশকারী অন্য সকল ধর্মের অনুসারীদেরকে ভারতীয় নাগরিক হওয়ার বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা যে চরম বৈষম্যমূলক ও অগ্রহণযোগ্য সাম্প্রদায়িকতা সেটা খোদ জাতিসংঘকেও ঘোষণা করতে হয়েছিল। কিন্তু, মোদি পুরোপুরি নির্বিকার। কারণ মোদি বুঝতে পেরেছেন, কট্টর হিন্দুত্ববাদী চরম-দক্ষিণপন্থী রাজনীতির আফিম এখন ভারতীয়দের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে প্রবলভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। অতএব, আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনেও বিজেপি’র বিজয়ের সম্ভাবনা এ আফিমের মৌতাতে বাড়বে বৈ কমবে না।
সম্প্রতি বিশ^ভারতী বিশ^বিদ্যালয়ের বিজেপি-নিয়োজিত ভিসি বিদ্যুৎ চক্রবর্তী প্রফেসর অমর্ত্য সেনকে সরাসরি আক্রমণের শিকার করে ফতোয়া দিয়েছেন, যে অমর্ত্য সেনের নোবেল পুরস্কার নাকি ভুয়া নোবেল পুরস্কার। কারণ ১৯০২ সাল থেকে প্রদত্ত আলফ্রেড নোবেল-ঘোষিত পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে অর্থনীতি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আরো দুঃখজনক হলো, ঐ বিশ^বিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ প্রফেসর অমর্ত্য সেনের পিতাকে বরাদ্দ দেয়া জমির একাংশকে অবৈধ ঘোষণা করে মামলা করার হুমকি দিয়ে চলেছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী গত ৩১ জানুয়ারি সরেজমিনে প্রফেসর অমর্ত্য সেনের বাড়ীতে গিয়ে তাঁকে জমির প্রামাণ্য দলিল প্রদান করে বিশ^বিদ্যালয়ের এ দাবিকে খারিজ করা সত্তে¡ও বিশ^বিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ মামলা করার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে সর্বশেষ খবরে জানা যাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদির প্রত্যক্ষ উসকানিতেই যে প্রফেসর অমর্ত্য সেনকে নাজেহাল করার এ অপপ্রয়াস সেটা না বোঝার কারণ নেই। কারণ, কয়েক সপ্তাহ আগে প্রফেসর অমর্ত্য সেন অভিমত দিয়েছেন যে, মমতা ব্যানার্জীই এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতম ব্যক্তি। পশ্চিমবঙ্গের গত বিধানসভা নির্বাচনে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ইস্যুটা মমতা ব্যানার্জীর বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি নির্বাচনে গো-হারা হেরে গিয়েছিল।
কিন্তু, এর আগে আসামে কথিত অবৈধ বাংলাদেশিদেরকে লাথি মেরে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়ার প্রোপাগান্ডা ঠিকই বিজেপিকে নির্বাচনী বিজয় এনে দিয়েছিল। ত্রিপুরায়ও সিপিএমকে হারিয়ে বিজেপি ক্ষমতাসীন হয়েছে। ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর জন্য মোদি এবং তার চেলা-চামুন্ডারা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পর্যন্ত বদলে দিচ্ছে, যেখানে মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু এবং কংগ্রেসের পরিবর্তে সাভারকার এবং বল্লভভাই প্যাটেলকে ‘প্রকৃত হিরো’ বানানোর প্রয়াস সামনে চলে এসেছে। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আমলে ভারত ও বাংলাদেশের সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতাদের বেলাগাম গলাবাজি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর কথিত অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের অর্থনীতি ও সমাজকে ‘উইপোকার’ মত কুরে কুরে খাচ্ছে বলে গালমন্দ করেছেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে মোদিবিরোধী জনমত ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২১ সালের মার্চে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফরে আসাকে উপলক্ষ করে হেফাজতে ইসলামের লেবাসধারী ধর্মান্ধরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করলে পুলিশ ও র্যাবকে কয়েকটি স্থানে গুলি চালাতে হয়, যাতে ১২ জন দাঙ্গাকারীর প্রাণহানি ঘটে।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস মোদির মুসলিমবিদ্বেষী অপরাজনীতি বাংলাদেশেও নিঃসন্দেহে সাম্প্রদায়িকতাকে বিপজ্জনকভাবে উসকে দিচ্ছে, যার ফলে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ ধারণকারী রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও প্রগতিশীল দলগুলোর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে ভারতের ঐতিহাসিক ভ‚মিকার কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পারতপক্ষে ভারতবিরোধী আবস্থান নেয় না। কিন্তু, মোদির কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী রাজনীতির প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের জনগণের একটি ক্রমবর্ধমান অংশ আওয়ামী লীগ-বিরোধী, ভারতবিরোধী ও পাকিস্তানপন্থি বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
*লেখক : ড. মইনুল ইসলাম, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, কলামিস্ট, সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।