Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাখমুত ছাড়ছে ইউক্রেনীয় সেনা

যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটো পারমাণবিক ঝুঁকি বাড়াচ্ছে : রাশিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২৩, ১২:০১ এএম

ইউক্রেনে অচলাবস্থা নিরসনে শান্তি আলোচনা প্রয়োজন : হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ষ জ্বালানি নীতিতে রাশিয়া আর পশ্চিমের ওপর নির্ভর করবে না : ল্যাভরভ
একজন ইউক্রেনীয় কমান্ডার বলেছেন যে, গতরাতে তার রিকন গ্রæপকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আর্টিওমভস্ক (ইউক্রেনীয় নাম বাখমুত) থেকে পিছু হটতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ‘আজ, ২ মার্চ রাতে, মাদিয়ারস বার্ডস ইউনিটকে অবিলম্বে বাখমুত ছেড়ে অন্য যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য একটি যুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়েছিল,’ গতকাল তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে গ্রæপের কমান্ডার, কোডনাম মাদিয়ার, পোস্ট করা একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন। তিনি নির্দেশাবলী বা পুনঃনিয়োগের কারণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন ‘বাখমুতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে’।

বৃহস্পতিবার, ভারখোভনা রাডার জাতীয় নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা এবং পুনঃনিরীক্ষণ কমিটির সের্গেই রাখমানিন বলেছেন যে, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী শীঘ্রই বা পরে আর্টিওমভস্ক থেকে প্রত্যাহার করা হবে। তার মতে, ইউক্রেনীয় সৈন্যরা বর্তমানে ‘একটি সংগঠিত পশ্চাদপসরণ জন্য’ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউক্রেনের আইনপ্রণেতা আর্টিওমভস্কের পরিস্থিতিকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর জন্য ‘খুব ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বর্ণনা করেছেন। আর্টিওমভস্ক ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের কিয়েভ-নিয়ন্ত্রিত অংশে অবস্থিত এবং ডনবাসে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের সরবরাহের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন কেন্দ্র। শহরের জন্য প্রচÐ লড়াই চলছে। রাশিয়ান বাহিনী আর্টিওমভস্কের উপকণ্ঠে ক্লেশচেয়েভকা, পোডগোরোডনয়ে, পারসকোভিয়েভকা, বার্খোভকা এবং ইয়াগোদনয়ে সহ বেশ কয়েকটি বসতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটো পারমাণবিক ঝুঁকি বাড়াচ্ছে : রাশিয়ার আক্রমণের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা করে আসছে। এখন পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোও এই যুদ্ধে যুক্ত হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর অংশগ্রহণ বিপর্যয়কর পরিণতির ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার জেনেভায় নিরস্ত্রীকরণবিষয়ক সম্মেলনে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ সম্মেলনে বলেন, ইউক্রেনে এবং এর আশপাশের এলাকায় সংঘাতকে আরও উসকে দেয়ার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো নীতির কারণে এখন সবচেয়ে তীব্র কৌশলগত হুমকি তৈরি হয়েছে। রিয়াবকভ আরও বলেন, সশস্ত্র সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা বিপর্যয়কর পরিণতিসহ পারমাণবিক শক্তিগুলোর সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। রিয়াবকভের এই বক্তব্যের সময় সম্মেলনকক্ষ প্রায় খালি হয়ে যায়। পশ্চিমা ক‚টনীতিকরা তার বক্তব্য বর্জন করে বাইরে ইউক্রেনের পতাকায় মোড়া একটি ম্যুরালের সামনে ছবি তুলতে জড়ো হন।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ইয়েভেনিয়া ফিলিপেনকো বলেন, ‘একে রাশিয়ার উসকানিবিহীন ও অন্যায় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের জনগণের প্রতি একাত্মতা দেখানোর অসাধারণ নিদর্শন হিসেবে মনে করি আমরা।’ যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত সিমন ম্যানলি বলেন, ‘যতক্ষণ না পর্যন্ত ইউক্রেনের মাটি থেকে রাশিয়া তাদের ট্যাংক সরিয়ে নিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেনের সহকর্মীদের প্রতি আমরা সমর্থন জানিয়ে যাব। তাদের যুদ্ধ মানে আমাদের যুদ্ধ।’

বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রণী বহুপক্ষীয় নিরস্ত্রীকরণ ফোরামের পক্ষ থেকে কনফারেন্স অন ডিজআর্মমেন্ট (সিডি) নামের এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়। স্নায়ুযুদ্ধের অস্ত্র প্রতিযোগিতা থামানোর চেষ্টা হিসেবে ১৯৭৯ সালে প্রথম এই ফোরাম গঠিত হয়। সিডি জাতিসংঘের কোনো অংশ নয়। তবে এর সদস্যরা জেনেভায় জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ও নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা করে। গত বছর ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলা শুরুর পর থেকে এই ফোরামে কথার লড়াই শুরু হয়েছে।

ইউক্রেনে অচলাবস্থা নিরসনে শান্তি আলোচনা প্রয়োজন : হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বিশ্বাস করেন যে, ইউক্রেনের সশস্ত্র সংঘাত একটি অচলাবস্থায় পৌঁছেছে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শান্তি আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন। সুইজারল্যান্ডের ডাই ওয়েলটওচেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ইউক্রেনে সংঘাত চলতে থাকলে তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করবে।
অরবান বিশ্বাস করেন যে, ইউক্রেনের ঘটনার ফলে ‘কেউ জিততে পারবে না’। ‘ইউক্রেনীয়রা ১৪ কোটি জনসংখ্যার একটি পারমাণবিক শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে; রাশিয়ানরা পুরো ন্যাটোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। এটিই এটিকে এত বিপজ্জনক করে তুলেছে। আমাদের একটি অচলাবস্থা রয়েছে যা সহজেই বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হতে পারে,’ প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাতকার বলেছেন।

জ্বালানি নীতিতে রাশিয়া আর পশ্চিমের ওপর নির্ভর করবে না : রাশিয়া তার জ্বালানি নীতিতে আর পশ্চিমা অংশীদারদের উপর নির্ভর করবে না, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গতকাল বলেছেন। ‘অবশ্যই, আমরা যে যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টা করছি এবং যে যুদ্ধটি পশ্চিমারা আমাদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয়দের ব্যবহার করে শুরু করেছিল তা রাশিয়ান নীতিকে প্রভাবিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি নীতিও। আমরা তাদের আর গ্যাসের পাইপলাইন উড়িয়ে দিতে দেব না,’ বলেন মন্ত্রী।

রাশিয়া যখন নর্ড স্ট্রিম বিস্ফোরণের তদন্তের অনুরোধ করেছিল, তখন সে ‘অনুরোধ অবিলম্বে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল’, মন্ত্রী বলেন, ‘এবং যখন মার্কিন সাংবাদিক সেমুর হার্শ তার প্রতিবেদনে প্রমাণ তুলেন ধরেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এর জন্য দায়ী, তখন আপনারা ইউরোপীয় এবং আমেরিকানদের প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছেন। ল্যাভরভ বলেন, ‘জার্মানি শারীরিক, নৈতিক এবং অন্যথায় সমস্ত উপায়ে অপমানিত হয়েছিল।’ তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সমস্ত মার্কিন কর্মের লক্ষ্য ইউরোপকে ওয়াশিংটনের ‘অধীনস্থ খেলোয়াড়’ হিসাবে গড়ে তোলা। ‘রাশিয়া জ্বালানি নীতিতে নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত অংশীদারদের অগ্রাধিকার দেবে। ভারত ও চীন সন্দেহাতীতভাবে তাদের মধ্যে রয়েছে,’ ল্যাভরভ উপসংহারে বলেছেন।

রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ এর আগে বলেছিলেন যে, মস্কোর কোন সন্দেহ নেই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে নর্ড স্ট্রিম এবং নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণের তদন্তে অংশ নিতে বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্তে আমাদের বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করার অনুমতি দেয়া হয়নি। না অংশগ্রহণকারী হিসেবে, না বিশেষজ্ঞ হিসেবে, যার মধ্যে গ্যাজপ্রম থেকেও অন্তর্ভুক্ত ছিল। নিঃসন্দেহে এর পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র,’ তিনি বলেন। সূত্র : তাস, রয়টার্স, বিবিসি নিউজ।



 

Show all comments
  • Jomadder Mizan ৪ মার্চ, ২০২৩, ১২:৪৬ এএম says : 0
    এটা এখন স্পষ্ট রাশিয়া এ যুদ্ধে জয়ী লাভ করবে
    Total Reply(0) Reply
  • Tutul ৪ মার্চ, ২০২৩, ১২:৪৭ এএম says : 0
    ইউক্রেনের বুঝা উচিত তারা এ যুদ্ধে তারা কখনো জয়ী হতে পারবে না। এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ইউক্রেনের
    Total Reply(0) Reply
  • মর্মভেদী ৪ মার্চ, ২০২৩, ১২:৪৮ এএম says : 0
    বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এগিয়ে আসলে এ যুদ্ধ বন্ধ হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rezaul Karim ৪ মার্চ, ২০২৩, ১২:৪৯ এএম says : 0
    এ যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দায় পরার সম্ভাবনা রয়েছে। কাজেই দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করার ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ