Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এদেশে ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ মুসলমানরা সহ্য করবে না : মৌকারা পীর ছাহেব

আখেরী মোনাজাতে মুসল্লীর কান্নাররোল আর আমিন আমিন ধ্বনি

কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২৩, ১০:৩০ পিএম

ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্য পরিবেশের মধ্যদিয়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব জনপদের অন্যতম পূণ্যভূমি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মৌকারা দরবারের দুইদিন ব্যাপি ৭৭তম ইসালে সওয়াব মাহফিল শেষ হয়েছে। শুক্রবার (৩মার্চ) হাজার হাজার মুসল্লির অংশগ্রহণে ফজর নামাজ শেষে আশেকান, ভক্ত, মুরিদানদের ত্বরিকতের বিভিন্ন বিষয়ের উপর তালিম দেন মৌকারা পীর ছাহেব আমিরুস সালেকীন আলহাজ মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নেছারউদ্দিন ওয়ালীউল্লাহী। তারপর শুরু হয় দরুদ পাঠ আর জিকির। ধীরে ধীরে পূব আকাশে সুবেহ সাদিকের লালআভা ভেসে উঠে। এরপর শুরু হয় আখেরি মোনাজাত।মৌকারা পীর ছাহেবের পরিচালনায় মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, শান্তি, দেশের সমৃদ্ধি, অগ্রগতি কামনা করা হয়। এসময় মোনাজাতরত মুসল্লীরা চোখের পানি ছেড়ে কেঁদে কেঁদে আমিন আমিন ধ্বনি করতে থাকেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার মাহফিলের শেষদিন বাদ মাগরিব তালিম ও জিকির শেষে মাহফিলের সভাপতি মৌকারা দরবারের পীর ছাহেব আমিরুস সালেকীন আলহাজ মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নেছারউদ্দীন ওয়ালিউল্লাহী বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। এসময় তিনি বলেন,আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমি শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ। এদেশে ইসলাম বিরোধী কোন কার্যকলাপ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সহ্য করবে না। এদেশের হাক্কানি আলেম ওলামায়েদের চিন্তা চেতনাকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তাদের চিন্তা চেতনার সঠিক বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলে এদেশে ইসলাম বিরোধী অপতৎপরতা,ফেতনা-ফেসাদ,জঙ্গীবাদ ও উগ্রবাদিতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।

পীর ছাহেব বলেন,আমাদের রাজনীতি, সমাজনীতি, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ইসলামী চেতনায় গড়ে তুলতে হবে।ইসলামী জাগরণ সৃষ্টি করতে আলেম ওলামাদের ভূমিকা রাখতে হবে।নিজেদের মধ্যে দলাদলি রেশারেশি বন্ধ করে সুন্নিয়াতের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ইসলাম বিরোধী চক্রকে প্রতিহত করার জন্য ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।আজকের সময়ে দ্বীপ্ত ঈমানি চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বিশ্ব মুসলিমদের সুদৃঢ় ঐক্য ও সাহসী প্রয়াস একান্ত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মৌকারা পীর ছাহেব আরও বলেন, একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সা.) সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করতে হবে।আল্লাহর রেজামন্দি হাসিল করতে হলে হক্কানী পীরের কাছে বায়াত গ্রহণ করতে হবে। বায়াত হওয়া মুরিদ আর পীরের সম্পর্ক হলো শ্রদ্ধা,স্নেহ-ভালোবাসা এবং আদেশ-নিষেধ ও শৃঙ্খলা মানা।কিন্ত আমাদের সমাজে এক শ্রেণির পীর আছেন যারা মুরীদানদের গোলাম মনে করেন। মনে রাখতে হবে কোন মানুষ কোন মানুষের গোলাম নয়,সকল মানুষ আল্লাহর গোলাম। তাই আমাদেরকে পীরের গোলামী নয়,আল্লাহর গোলামী করতে হবে। আর রাসুলের (সা.) নীতি আদর্শ অনুসরণ করতে হবে,মেনে চলতে হবে।

মৌকারা পীর ছাহেব বলেন, যুগ যুগ ধরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথের সন্ধান দিতে অলি আউলিয়াগণ তরিকতের ময়দানে কঠোর সাধনা করে গেছেন।কোরআন সুন্নাহর আলোকে অলি আউলিয়াগণ জীবন গড়ার উপদেশ দিয়ে গেছেন।

তিনি মাহফিলে উপস্থিত মুসল্লিদের বেশি বেশি দরুদ পাঠ, জিকির করা, নিয়মিত নামাজ আদায়, কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা, পিতা-মাতার সেবাযতœ করা, ত্বরিকা চর্চা ও শরীয়তের হুকুম আহকাম গুরুত্বের সাথে পালনের আহবান জানান।

দুইদিন ব্যাপী মাহফিলে পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন- ফেনী আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান, ঢাকা মাহমুদা খাতুন মহিলা কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা বদিউল আলম সরকার, মুন্সিরহাট কেন্দ্রিয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবদল আজিজ জেহাদী, গাজীপুর বায়তুল হাকিম জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবু ইউসুফ যুক্তবাদী, ফতেহাবাদ দরবারের পীর পীরজাদা শফিকুল ইসলাম ফতেহাবাদী, ঢাকা জামিআ মাদানীয়া দারুল হাবীরের প্রিন্সিপাল ড. আনোয়ার হুসাইন সাঈফী, ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি এএইচএম আনোয়ার মোল্লা, মহাখালী হোসাইনীয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল ড. নজরুল ইসলাম আল ফারুক, কুমিল্লা আলিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা ইমামউদ্দীন মুজিব, মৌকারা মাদরাসার সহকারি অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মদ একরামুল হক, চালিতাতলি আলিম মাদরাসার মুদার্রিস মাওলানা মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম মিয়াজী, মৌকারা মাদরাসার প্রভাষক মাওলানা মুহাম্মদ শাহজালাল, লাকসাম ষ্টেশন জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা জাকির হোসাইন সিদ্দিকী, বাংলাদেশ জমিয়াতুস সালেকিনের উপদেষ্টা আলহাজ মাওলানা আবদুল হালিম (ছোট হুজুর), গাউসুল আজম জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান, মীরসরাই পীর ছাহেব মাওলানা মিসবাহুল ইসলাম লতিফী।

মাহফিলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মৌকারার শাহসাহেব, বাংলাদেশ ছাত্রসালেকীনের কেন্দ্রিয় সভাপতি বিশিষ্ট কলমিষ্ট-লেখক মাওলানা শাহ মুহাম্মদ মাসউদ এবং মৌকারা পীর সাহেবের জামাতা মির্জা মাওলানা সায়েমুর রহমান বেগ ও মাওলানা মুফতি শাহ সূফী সয়ৈদ মঈনুদ্দনি আহমাদ আল হোসাইনী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ