মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বয়স আনুমানিক ২৯। বছরখানেক আগেও যাকে ইনস্টাগ্রামে ‘কুল’ সেলফি পোস্ট করতে দেখা যেত, এখন তাকে গাঢ় নেভি ব্লু রঙের পাগড়ি আর শিখ ধর্মগুরুদের মতো লম্বা সাদা চোলা আর তরবারির সাইজের কৃপান ছাড়া প্রকাশ্যে দেখাই যায় না। অমৃতপাল সিং সান্ধু নামের এই শিখ যুবকই এখন ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে ও কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন মাথা ব্যথার নাম। বৃহস্পতিবার এই অমৃতপাল সিংয়ের বেশ কয়েক শ’ সশস্ত্র অনুগামী অমৃতসরের কাছে আজনালাতে এক সহকর্মীকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় আক্রমণ চালায়। হামলার সময় তাদের মুখে ছিল খালিস্তানের সেøাগান। আগ্নেয়াস্ত্র ও কৃপান নিয়ে চালানো সেই হামলায় বহু পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তা আহত হন। ভীতসন্ত্রস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা ওই অভিযুক্তকে নির্দোষ বলে জানানোর পরদিন আদালতে তিনি ছাড়াও পেয়ে যান। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কিভাবে এই খালিস্তান সমর্থকরা বন্দুক ও কৃপান নিয়ে ধেয়ে যাচ্ছেন, আজনালার সেই ভিডিও নিমেষে সারাদেশে ভাইরাল হয়ে ওঠে। ও দিকে অমৃতপাল সিং প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেন, ‘খালিস্তান’ ও ‘শিখ শাসনে’র দাবিতে তাদের আন্দোলন আরো তীব্রতর হবে। শুধু পাঞ্জাব নয়, ভারতের আরো বিভিন্ন রাজ্যের নানা অংশ নিয়ে বৃহত্তর খালিস্তান গঠনের জন্য গণভোটের দাবিকেও সমর্থন জানান তিনি। বার্তা সংস্থা এএনআইকে সাক্ষাৎকার দিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘বাকি ভারতে যেমন হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে, তেমনি পাঞ্জাবে খালিস্তানের দাবিও খুব স্বাভাবিক একটি চর্চার বিষয়।’ থানায় শুধু আক্রমণ চালানোই নয়, এর আগে গত বছরের মে ও ডিসেম্বর মাসে মোহালি ও তরনতারনে পাঞ্জাবের অন্তত দু’টি থানায় রকেট প্রোপেলড গ্রেনেড দিয়েও হামলা চালানো হয়েছিল। সেই ঘটনায় অমৃতপাল সিংয়ের অনুগামীরা সরাসরি জড়িত না থাকলেও পুলিশ যে সন্দেহভাজনদের আটক করেছিল, তাদের আইনি ও আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথা ঘোষণা করে খালিস্তানপন্থী সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে)। গত বছরের জুন মাসে রাজ্যের সাংরুর আসনের উপ-নির্বাচনে আড়াই লাখেরও বেশি ভোট পেয়ে পার্লামেন্টে যান অকালি দল (মান গোষ্ঠীর) প্রবীণ নেতা সিমরনজিৎ সিং মান, পৃথক খালিস্তান গঠনের দাবিতে যার সমর্থনের কথা সুবিদিত। সব মিলিয়ে ভারতের পাঞ্জাবে যে খালিস্তান আন্দোলনের প্রতি নতুন করে জনসমর্থন দেখা যাচ্ছে, সেই ইঙ্গিত নানা ঘটনাতেই স্পষ্ট। মাত্র মাসকয়েক আগেও বাকি ভারতে কেন, এমন কী পাঞ্জাবেও কেউ অমৃতপাল সিংয়ের নাম শোনেননি। অমৃতসরের কাছে জাল্লুপুর খেড়া গ্রামের এই যুবক স্কুলের গ-ি পেরিয়েই বছর দশেক আগে পরিবারের ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা দেখতে দুবাই পাড়ি দিয়েছিলেন। ভারতের পাসপোর্টধারী হলেও তিনি কানাডারও পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট। ভারতে কৃষক আন্দোলনের সূত্র ধরে যিনি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন, পাঞ্জাবের সেই গায়ক অ্যাক্টিভিস্ট দীপ সিধু ইতোমধ্যে ২০২১-এর শেষ দিকে ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দি’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন বা এনজিও তৈরি করেছিলেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় দীপ সিধুর মৃত্যু হলে ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দি’র নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, সংগঠনটি ভেঙে একাধিক টুকরোও হয়ে যায়। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দি’-র একটি গোষ্ঠী তাদের নতুন নেতা হিসেবে বেছে নেয় অমৃতপাল সিং-কে, যিনি মাত্র কিছুদিন আগেই ভারতে ফিরে এসেছিলেন। অমৃতপাল সিংয়ের সেই ‘দস্তরবন্দী’ (নেতৃত্বের পাগড়ি বাঁধার অনুষ্ঠান) আয়োজন করা হয়েছিল মোগা জেলার রোড গ্রামে, যেটি খালিস্তানি আন্দোলনের নায়ক সন্ত জার্নেল সিং ভিন্দ্রানওয়ালের জন্মস্থান। ভিন্দ্রানওয়ালের নামাঙ্কিত গুরদোয়ারাতেই সেদিন ব্যবস্থা হয়েছিল লঙ্গরের, যেখানে হাজার হাজার লোক ‘সেবা’ পেয়েছিলেন। ওই দিনের পর থেকেই অমৃতপালের অনুগামীরা তাকে ভিন্দ্রানওয়ালের সার্থক উত্তরসূরী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে আসছেন, মিডিয়াতেও তাকে ভিন্দ্রানওয়ালে ২.০ বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। সংগঠনের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে একাধিক সাক্ষাৎকারে ও বক্তৃতায় এই তরুণ নেতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি গুরু ভিন্দ্রানওয়ালের মতোই খালিস্তানের পক্ষে লড়ে যাবেন। তার ধর্মীয় বক্তৃতা শুনতে সভায় প্রচুর ভিড়ও হচ্ছে। বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।