Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ড রূপকথা

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২৩, ১২:০০ এএম

অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়, অতুলনীয়! লিখতে থাকলে শব্দের ভান্ডার ফুঁড়িয়ে যাবে তবে ওয়েলিংটনে গতকাল যা হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এই রোমাঞ্চকর টেস্টের শুরুর সঙ্গে শেষের যে কোন মিলই নেই। ইতিহাস বিবেচনায় ২০০১ সালের ইডেন টেস্টকেই কেবল তুলনায় আনা সম্ভব। ফলোঅনে পড়ার পর এমন কিছু যে সর্বশেষ সেবারই হয়েছিল। প্রায় দেড়শ বছরের টেস্ট ইতিহাস ঘাটলে যে তালিকায় আর মাত্র দুটি টেস্ট যুক্ত হয়। আজ চতুর্থ ঘটনাটির দেখা মিলল। কাকতালীয় ব্যপার হচ্ছে, চারটি টেস্টেই জড়িত কিউইদের নাম! আগে দুবার ইংল্যান্ড ও ইডেনে ভারতের কাছে হারের পর ওয়েলিংটন টেস্টে নিউজিল্যান্ড ১ রানে জিতেছে সেই ইংলিশদের বিপক্ষেই। ২২৬ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে স্বাগতিকেরা। কেন উইলিয়ামসন ও টম বøান্ডেলের বীরচিত ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৮৩ রানের পাহাড়ে ওঠে কিউইরা। ২৫৮ রানের লক্ষ্যে ইংল্যান্ড থামে ২৫৬ রানে।

ম্যাচের শেষ মুহ‚র্ত মনে করিয়ে দিয়েছিল ২০০৫ এজবাস্টন টেস্টের কথা। শেষ দিনে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন করে একটু একটু করে জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। আর যখন মাত্র ৩ রান দরকার তখন স্ট্রাইকে ছিলেন মাইকেল কাসপ্রোভিচ। স্টিভ হার্মিসনের একটি লেগ স্টাম্পের বাইরের শর্টপিচ থেকে বাঁচতে চেষ্টা করেও পারেননি অস্ট্রেলিয়ান পেসার। জোনসের ক্যাচ হয়ে ফিরলেন কাসপ্রোভিচ, ইংল্যান্ডের জয় ২ রানের। গতকাল উল্টো স্বাদ পেয়েছে ইংল্যান্ড। জিমি অ্যান্ডারসন যখন উইকেটে নেমেছেন জয়ের জন্য আরও ৭ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। অন্য প্রান্তে নবম উইকেটে বেন ফোকসের সঙ্গে ৩৬ রানের জুটি গড়া জ্যাক লিচ। চার মেরে জয়ের ব্যবধান মাত্র ২ রানে নিয়ে আসেন অ্যান্ডারসন। তবে এই ইনিংসে আগুন ছোড়া ওয়াগনারের লেগ সাইডের একটি শর্ট বল খেলতে গিয়ে উইকেটকিপার বøান্ডেলের কাছে পাঠিয়ে দেন অ্যান্ডারসন। আগের দিন নিজের বোকামিতে রানআউট হওয়া বøান্ডেল এদিন আর কোনো ভুল করেননি।

শেষ দিনে ৯ উইকেটে ২১০ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। আগেরদিন ওভারপ্রতি ৪ রান তোলা সফরকারীরা গতকালও ইতিবাচক ঢংয়ে রান নিচ্ছিল। কিন্তু ৮০ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর একটু সাবধানী ব্যাটিং করেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। অন্যদিকে সাবলীল খেলছিলেন জো রুট। ১২১ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি থামে ওয়াগনারের বলে। ১১৬ বলে ৩৩ রান করা স্টোকস ফিরতেই আরও বিপদ হাজির। আর ১ রান পরই রুটও সাজঘরের পথ ধরেন ওয়াগনারের বলে। ১১৩ বলে ৯৫ রান করেন রুট।

তখনও জয় থেকে ৫৬ রান দ‚রে সফরকারীরা। তবে বাজবলে বিশ্বাসী ইংলিশরা এমন কঠিন সময়েও তাদের চিরাচরিত আক্রমণাত্বক ব্যাটিংই করতে থাকেন। বেন ফোকসের আগ্রাসী ৩৫ রান দলকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সাউদি তাকে ফিরিয়ে দিলে আবারও আশার ফানুস ওড়ায় কিউইরা। অ্যান্ডারসনের চার সেই আশাকে ধূলোয় মিলিয়েই ফেলেছিল প্রায়। তবে নিউজিল্যান্ডের শেষ রক্ষা ওয়াগনারের ভেল্কিতে।

নিউজিল্যান্ডের কাছে আক্রমণাত্বক বাজবল ক্রিকেট হেরে গেল ১ রানে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এই ব্যবধানের জয় এই দ্বিতীয়বার দেখল বিশ্ব। এমন ঘটনা ক্রিকেট বিশ্ব প্রথম দেখেছে ১৯৯৩ সালে। সেবার অ্যাডিলেডে ১ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই ঘটানার পুনরাবৃত্তি করল সাউদির নিউজিল্যান্ড। তাতে আরও একবার সারা দুনিয়া দেখল শ্বেতশভ্র পোশাকের পাঁচ দিনের ক্রিকেটই সেরা। যার কোন তুলনাই হয় না।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ