Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভিমানে অবসরে রামোস

স্পোর্টস রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

কদিন আগেও পিএসজি কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের জানিয়েছিলন সার্জিও রামোস তার ক্লাবের সেরা ডিফেন্ডার। অর্থাৎ জাতীয় দলের জার্সিতে আরও কিছুদিন খেলা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য ছিল রামোসের। যদিও সবশেষ বড় দুটি প্রতিযোগিতায় সুযোগ পাননি স্পেনের হয়ে খেলার। এরইমধ্যে দেখে ফেলেছেন জীবনের ৩৬টি বসন্ত। অন্যদিকে লুই এনরিকের পর নতুন কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তের সঙ্গেও রসায়নটা একদমই জমলো না। তাইতো নিলেন জীবনের কঠিনতম এক সিদ্ধান্ত। স্পেন জাতীয় দলের হয়ে ১৫ নাম্বার জার্সিতে গায়ে আর কখনই মাঠে নামবেন না ফরোয়ার্ডদের যম নামে খ্যাত এই ডিফেন্ডার। পরশু মধ্যরাতে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন রামোস।

স্পেনের জার্সিতে ২০১০ বিশ্বকাপের পাশাপাশি ২০০৮ ও ২০১২ ইউরো জিতা এই ডিফেন্ডার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে এক দীর্ঘ পোস্টে ব্যাখ্যা করেছেন সরে দাঁড়ানোর কারণ। যেখানে ছিল একরাশ বেদনা, ‘স্পেন জাতীয় দলকে বিদায় বলার এটাই উপযুক্ত সময় আমার। আজ সকালে বর্তমান কোচের কাছ থেকে আমি একটি ফোনকল পেয়েছি। তিনি আমাকে জানান যে আমি যেমন পারফর্মই করি না কেন, কিংবা আমার ক্যারিয়ারে যাই করি না কেন, আমি তার পরিকল্পনার অংশ নই। তাই দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে বলছি, এটাই আমার পথের শেষ। যদিও আশা করেছিলাম যে পথটা আরও দীর্ঘ হবে।’

শুরুটা সেই ২০০৫ সালে। এরপর স্পেনের তো বটেই, ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। লা রোজাদের হয়ে সর্বোচ্চ ১৮০ ম্যাচ খেলার রেকর্ড তার দখলে। রক্ষণ সামলানো মূলকাজ হলেও গোল করাতেও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন রামোস। তার নামের পাশে রয়েছে ২৩ গোল। স্পেনের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় তার অবস্থান ৯ নম্বরে। ২০০৮ সালের ইউরো এবং ২০১০ সালের বিশ্বকাপে মূলত রাইট ব্যাক পজিশনে খেলেছিলেন সেন্টারব্যাক রামোস। ডানদিকে কেবল খেলার জন্যই খেলেননি, ছিল সেই সময়ের অন্যতম ফুলব্যাক। তবে এরপরই জাতীয় দলে রক্ষণের কেন্দ্রে চলে আসেন তিনি। এরপর তো স্পেনের ডিফেন্সকেই দিলেন ভিন্ন এক সংজ্ঞা।

স্পেনের সাবেক কোচ এনরিকে ছিলেন দারুণ রিয়াল মাদ্রিদবিদ্বেষী, যদিও মুখে এই কথা কোনোদিনও বলেননি তিনি। তবে আচরণে তার প্রমাণ মিলেছে বহুবার। তাছাড়া রামসের সঙ্গে ব্যক্তিগত রেষারেষি ছিল। যার ফলস্বরূপ ২০২১ সালের মার্চের পর আর জাতীয় দলের জার্সিতে খেলা হয়নি রামোসের। গত ডিসেম্বরে কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে মরক্কোর কাছে টাইব্রেকারে হেরে যায় স্প্যানিশরা। এমন ভরাডুবির পর এনরিকে হন বরখাস্ত। তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া লা ফুয়েন্তে রামোসের ব্যাপারে যে ধারণা পোষণ করেন তাতে দারুণ মর্মাহত স্পেন ফুটবল দলের সবচেয়ে বেশি ক্যাপধারী খেলোয়াড়টি, ‘ফুটবল সব সময় ন্যায়ের পথে থাকে না এবং ফুটবল শুধু ফুটবল নয়’।

শেষ করা যাক রামোসের ১৫ নম্বার জার্সির ইতিহাস শুনিয়ে। আন্তনিও পুয়ের্তার সঙ্গে তার পরিচয় সেই ছোট্ট বেলায়। সেভিয়ার বয়সভিত্তিক দলে তারা একসঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। সেভিয়া ছেড়ে ২০০৫ সালে রামোস রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিলেও পুয়ের্তা থেকে যান। ২০০৭ সালের ২৫ আগস্ট গেতাফের বিপক্ষে সেভিয়ার মৌসুমের প্রথম ম্যাচটা হয়ে যায় পুয়ের্তার জীবনের শেষ ম্যাচ। সেদিন হেতাফের বক্সে মৃদু হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন পুয়ের্তা। খানিক পর চেতনা ফিরে পেলেও ৩৫ মিনিট পর আবারও একই ঘটনা। পুয়ের্তাকে তুলে নেয়া হলেও ড্রেসিংরুমে আবারও হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন, হাসপাতালে নেওয়ার তিন দিন পর মারা যান। মৃত্যুর আগে ২০০৬ সালের ৭ অক্টোবর একবারই স্পেনের জার্সিতে খেলেছেন পুয়ের্তা। সুইডেনের বিপক্ষে সে ম্যাচে পুয়ের্তার জার্সি নম্বর ছিল ১৫।

রামোসের পছন্দের জার্সি ছিল ৪ নম্বার। তবে পুয়ের্তার মৃত্যুর পর দীর্ঘ ১৭ বছর জাতীয় দলে রামোস খেলেছিলেন ১৫ নম্বার জার্সি গায়ে দিয়ে। লা রোজাদের সেই ১৫ নম্বার জার্সিটি এখন কাঁদবে না নিঃশব্দে। কিংবা আকাশ থেকে সর্বদা চেয়ে থাকা পুয়ের্তা কি পারবেন ফুয়েন্তেকে এতো সহজে ক্ষমা করতে? উত্তরগুলো না হয় অমীমাংসিতই থাকুক। এখন বরং মগ্ন থাকা যাক স্পেন ও বিশ্ব ফুটবলের সেরা ডিফেন্ডার রামসের কীর্তিগুলোতে। বিদায় রামোস!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ