Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গর্ভ ও প্রসব, প্রতি ২ মিনিটে নারীর মৃত্যু

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৩ এএম

বিশ্বে গত দুই দশকে মাতৃ মৃত্যুহার এক-তৃতীয়াংশ কমলেও গর্ভকালীন বা প্রসব জটিলতায় এখনও প্রতি দুই মিনিটে একজন নারীর মৃত্যুর তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে। ‘মাতৃমৃত্যুর প্রবণতা’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি বৃহস্পতিবার বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারী স্বাস্থ্যের উদ্বেগজনক বিপর্যয়ের চিত্র পাওয়া গেছে; যেখানে মাতৃমৃত্যু হয় বেড়েছে, নাহয় বিশ্বের সব অঞ্চলে অপরিবর্তিত থেকেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থার ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। কিন্তু ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পরিস্থিতি মোটাদাগে অপরিবর্তিত ছিল এবং কিছু অঞ্চলে পরিস্থিতি উল্টো হয়েছে বা মৃত্যুহার বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০ বছরে সামগ্রিক মাতৃমৃত্যুর হার ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। ২০০০ সালে সন্তান প্রসবকালীন প্রতি লাখে ৩৩৯ প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে, বিপরীতে ২০২০ সালে মারা গেছেন ২২৩ জন। অর্থাৎ মৃত্যুহার কমলেও ২০২০ সালে বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ মাতৃমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে; সেই হিসাবে প্রতি দুই মিনিটে প্রায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। সবথেকে বেশি ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ মাতৃমৃত্যু কমেছে বেলারুশে। আর মাতৃমৃত্যু সবথেকে বেশি হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলায়। ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সবথেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেন, গর্ভাবস্থা যেখানে সব নারীর জন্য বিরাট আশা এবং ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হওয়া উচিত, সেখানে দুঃখজনকভাবে এটি এখনো বিশ্বের লাখ লাখ নারীর জন্য মর্মান্তিকভাবে বিপজ্জনক অভিজ্ঞতা। “নতুন এই পরিসংখ্যান বলছে, প্রত্যেক নারী ও মেয়ের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা কতটা জরুরি, যাতে তারা তাদের প্রজননের অধিকার পুরোপুরি চর্চা করতে পারে।” জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের আটটি অঞ্চলের মধ্যে মাত্র দুটিতে মাতৃমৃত্যু কমার চিত্র উঠে এসেছে সমীক্ষায়। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডে ৩৫ শতাংশ এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় ১৬ শতাংশ কমেছে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় মাতৃমৃত্যু হার ১৭ শতাংশ এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। অন্যান্য অঞ্চলে অপরিবর্তিত বা স্থবির রয়েছে। প্রতিবেদন লেখক জেনি ক্রেসওয়েল সাংবাদিকদের বলেন, ইউরোপীয় দুটি দেশ গ্রিস ও সাইপ্রাসে মাতৃমৃত্যু ‘উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে’। “বিশ্বের দরিদ্র অঞ্চল ও যুদ্ধ কবলিত দেশগুলোতে বেশি মাতৃমৃত্যু হয়েছে। ২০২০ সালে যত জনের মৃত্যু হয়েছে তার ৭০ শতাংশই সাব-সাহারা আফ্রিকান অঞ্চলের, যেখানে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের চেয়ে ‘১৩৬ গুণ বেশি’ মাতৃমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।” আফগানিস্তান, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, শাদ, কঙ্গো, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেন- এমব দেশ মারাত্মক মানবিক সংকটের সম্মুখীন। এসব দেশে মাতৃমৃত্যুর হার বৈশ্বিক গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- গুরুতর রক্তপাত, সংক্রমণ, অনিরাপদ গর্ভপাত থেকে জটিলতা এবং এইচআইভি/এইডস এর মতো সুপ্ত রোগ, যার বেশিরভাগই প্রতিরোধযোগ্য ও চিকিৎসাযোগ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর নারীদের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কম। বিশেষ করে তারা গর্ভধারণ করবে কিনা, অথবা কখন গর্ভধারণ করবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারেন না; যাতে তারা নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পরিকল্পনা ও সন্তান লালনপালনের সময় নিতে পারেন।” রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ