মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে তথাকথিত ‘বেদখল’ হয়ে যাওয়া সরকারি জমি থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির প্রশাসন এবছরের ৯ জানুয়ারি এক নির্দেশিকা জারি করে সব জেলাশাসকদের জানায় যে সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে হবে। ওই নির্দেশ জারী হওয়ার পরেই বুলডোজার দিয়ে দখলমুক্ত করার কাজ শুরু করে প্রশাসন।
কিন্তু প্রচণ্ড শীতের মধ্যে জমি দখলমুক্ত করার এই অভিযানে বড় সমস্যায় পড়েছেন কাশ্মীরের বাসিন্দারা। বেশ কয়েকটি জায়গায় তারা বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। সেই সময়ে পাথর ছোঁড়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচ জন। এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয় যে, সরকারি জমি দখল মুক্ত করার অভিযান আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। তবে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের কোনও স্তর থেকেই ওই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা হয় নি।
অনন্তনাগের ডুরু এলাকার বাসিন্দা জুনেইদ আহমেদ এবং তার পরিবারের কাছে সেই দিনটা ছিল আতঙ্কের। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেই সেদিন সকালে বাড়ির সামনে বুলডোজার আর পুলিশের গাড়ি দেখতে পেয়েছিলেন তারা। আহমেদের কথায়, ভীষণ ঠাণ্ডার সেই সকালে আমরা সবাই ঘরেই ছিলাম। হঠাৎই দেখতে পাই যে বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি আর বুলডোজার। কর্মকর্তারা প্রথমে বলেছিলেন যে সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে এসেছেন তারা। আমাদের কোনও নোটিশ দেয়া হয় নি।’
‘তাদের আমরা বারবার বলি যে এটা সরকারি জমি না, এটা আমাদের জমি। কিন্তু আমাদের কথা শোনেন নি তারা, বুলডোজার চালানো শুরু হয়ে যায়,’ বলছিলেন জুনেইদ আহমেদ। তার বাড়ির একদিকের দেয়াল পুরোপুরি ভেঙ্গে দিয়েছে, একটা ঘর আর বাথরুমও ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। আহমেদ বলেনন, ‘আমরা কর্মকর্তাদের এটাও বলেছিলাম যে রাজস্ব বিভাগ কিছুদিন আগেই সার্ভে করে গেছে, তারা তো কোনও আপত্তি জানায় নি। কোনও কথাই শুনল না তারা।’
ডুরুর তহশিলদার (স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তা) তাহির খালিদ বলছেন, ‘যে জায়গাটা দখলমুক্ত করা হয়েছে, সেটা সরকারি জমিই ছিল। ওই জায়গা দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাচলের রাস্তা তৈরি হবে। এটা কোনও নতুন বিষয় নয়। আহমেদকে অনেকবার নোটিশ পাঠানো হয়েছে।’ দখলমুক্ত করার এই অভিযানে গরীব বা বড়লোক, সকলেই সমান সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। শ্রীনগরের পাদশাহি বাগ এলাকায় খালিদ আহমেদর রদ্দি জিনিষের কারখানা মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে দিন দশেক আগে।
খালিদ আহমেদ বলছিলেন, ‘আমাকে কোনও নোটিশ বা কোনও কিছুই আগে দেয়া হয় নি। সরাসরি বুলডোজার এসে গেল আর চালিয়ে দিল। গত ২১ বছর ধরে আমি এখানে ব্যবসা চালাই। আমার সঙ্গে প্রায় দুশো মানুষ কাজ করেন। আমরা কেউ বড়লোক নই, সবাই গরীব মজদুর।’ তার কথায়, ‘সরকার বলছে এখানে নাকি গরীবদের জায়গা দেয়া হবে। কিন্তু গরীবদেরই তো হঠিয়ে দেয়া হচ্ছে এখান থেকে। এ প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় আমরা যে যেখানে পারি রাত্রে ঘুমোচ্ছি।’
দরিদ্র মানুষের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনাগুলো সামনে আসার পরে জম্মু-কাশ্মীরের উপ রাজ্যপাল মনোজ সিনহা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘সরকারি জমি বেদখল করে রাখা প্রসঙ্গে একটা কথা স্পষ্ট করে দিতে চাই, গরীব মানুষের ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কিন্তু যারা সরকারি পদে থেকে পদের অপব্যবহার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ তবে সিনহা আশ্বাস দেয়ার পরেও কিন্তু গরীব মানুষের সমস্যার সমাধান হয় নি।
শ্রীনগরের ছতবল এলাকায় শোয়েব ওয়ানির চারতলা কমপ্লেক্স সরকার সিল গালা করে দিয়েছে। সেখানে ‘সরকারি সম্পত্তি’ লেখা একটা বোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। শোয়েব ওয়ানির দাবী প্রশাসন যেভাবে তার কমপ্লেক্স দখল করে নিয়েছে, তা বেআইনি। ‘আমরা দখল মুক্ত করার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু যেভাবে এসব করা হচ্ছে, আর মানুষের অধিকার ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে, সেটা বন্ধ হওয়া দরকার।’ আদালতের একটা নথি দেখিয়ে ওয়ানি বলছিলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরের হাইকোর্ট ২০১৮ সালে বলে দিয়েছিল যে এই সম্পত্তিটা আমার। এ নিয়ে এখনও মামলা চলছে। তার মধ্যেই কীভাবে সরকার আমার কমপ্লেক্স সিল গালা করে দিতে পারে!’
কাশ্মীরের ডিভিশনাল কমিশনার বিজয় কুমার চৌধুরি বিবিসিকে ফোনে জানান যে উপ রাজ্যপাল যে আদেশ দিয়েছেন, সেটাই পালন করা হচ্ছে। রাজস্ব বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছিলেন যে সরকার কাউকে তাদের জমি থেকে সরাচ্ছে না। তার কথায়, ‘কেউ সরকারি জমিতে আপেল বাগান করেছেন, কেউ শপিং কমপ্লেক্স বানিয়েছেন, দোকান দিয়েছেন, সেইসব জমিই সরকার ফেরত নিয়ে নিচ্ছে।’ তার কথা - সরকার যে নীতিটা নিয়ে চলছে, তা হল কোনও গরীব মানুষ যদি সামান্য এক টুকরো জমি দখল করে নিয়ে থাকে, তার ওপরে কোনও অভিযান চালানো হবে না।
সরকারি জমি দখলমুক্ত করার এই অভিযানে কিছু নেতা, কর্মকর্তা আর ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধেও অভিযান চলেছে। বড়গাম জেলার হমহামা এলাকায় ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রাক্তন মন্ত্রী ওলি মুহম্মদ সাগরের একটা বাড়ি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। কংগ্রেসের এক প্রাক্তন মন্ত্রী, একজন পুলিশ কর্মকর্তা, প্রাক্তন ডেপুটি কালেক্টর এবং বিজেপির এক নেতার দখলে থাকা জমিও সরকার নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। এ অভিযান নিয়ে বলতে গিয়ে ওলি মুহম্মদ সাগরের পুত্র সলমান সাগর বলছিলেন তাদের কোনও নোটিশ দেয়া হয় নি, হঠাৎই অভিযান চালানো হয়।
শ্রীনগর পৌরসভা গত সপ্তাহে এক নোটিশ দিয়ে বলেছে শহরের দুধগঙ্গা নদীর ওপরে যত নির্মাণ কাজ করা হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যেই যেন সব সরিয়ে ফেলা হয়। অন্যথায় সরকার ওইসব নির্মাণ দখল মুক্ত করে দেবে। এ নির্দেশের পরে ওই অঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীদের একজন বলছিলেন নোটিশ বেরনোর পর থেকেই তিনি ঘুমোতে পারছেন না। মাসুমা নামে এক নারী বলছিলেন বাড়ি ভেঙ্গে দিয়ে সরকার কেন গরীবদের ঘরছাড়া করতে চাইছে?
ওইসব বিক্ষোভের পরে শ্রীনগরের মেয়র জুনেইদ মোটু এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন কোনও গরীবের ঘর ভাঙ্গা হবে না। কুলগামের বোগন্ড এলাকার বাসিন্দারাও একই ধরণের আশ্বাসবার্তা পেয়েছেন সরকারের কাছ থেকে। তা সত্ত্বেও সেখানকার মানুষরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।