বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন তার অনুসারীদের যে গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতিগুলো মেনে চলার শিক্ষা প্রদান করে তন্মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হলো, এখতিয়ার বহির্ভূত বিষয়ের আকাক্সক্ষা পোষণ না করে এখতিয়ারভুক্ত কল্যাণকর বিষয় অর্জনে সচেষ্ট হওয়া। সাধ্যাতীত বিষয়ের পেছনে না পড়ে সাধ্যাধীন কল্যাণ অর্জনে হিম্মতের পরিচয় দেওয়া। এখতিয়ার বহির্ভূত ক্ষেত্র অনেক।
তন্মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করে কোরআন মাজীদে মুমিনদের সচেতন করা হয়েছে এভাবে : তোমরা এমন কিছুর আকাক্সক্ষা করো না, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের কতককে, কতকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পুরুষ যা অর্জন করে তাতে তার অংশ থাকবে এবং নারী যা অর্জন করে তাতে তার অংশ থাকবে। তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। (সূরা নিসা : ৩২)।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর অপার হিকমতে মানুষের কতককে, কতকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। স্ত্রী-সন্তান-সন্ততি, ধন-সম্পদ-সহায়সম্পত্তি, কায়িকশক্তি-মেধাশক্তি, সুস্থতা-অসুস্থতা, রূপ-গুণ-সৌন্দর্য, আভিজাত্য, বংশীয় মর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রভৃতি নানা গুণ ও বৈশিষ্ট্য আল্লাহ একের ওপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। কারো জন্য বিপুল পরিমাণ ধন-সম্পদ উপযোগী হয় কারো জন্য উপযোগী হয় দারিদ্র্য।
কাউকে সুন্দর দেহসৌষ্ঠব দান করা হয়, কেউ হয় অপেক্ষাকৃত কম সৌন্দর্যের অধিকারী। কাউকে সন্তান-সন্ততির নিয়ামত দান করা হয়। আর কারো জন্য সন্তানের নিয়ামতের তুলনায় অন্য নিয়ামতের ফায়সালা করা হয়। ধনী-গরীব, সুন্দর-অসুন্দর, শক্তিমান-শক্তিহীন, সন্তানবান-সন্তানহীন, সুস্থ-অসুস্থ প্রভৃতি সৃষ্টির এই তারতম্য ও বৈচিত্র্য আল্লাহ তায়ালার হিকমত ও কুদরতের এক বিশেষ বহিঃপ্রকাশ।
ধনী-গরীবের এই পার্থক্য কেন? শক্তিমান-শক্তিহীনের এই তারতম্য কেন? এই বৈচিত্র্যের পেছনে মহান রাব্বুল আলামীনের কী হিকমত কার্যকর? এ নিয়ে বহু গুণীজন বহু কথা বলেছেন, ভাবনা ও রুচির পার্থক্যভেদে প্রত্যেকে আপন-আপন আঙ্গিকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। এই বিশ্লেষণী আলোচনায় বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এবং এগুলো অনেকের পক্ষে বেশ কার্যকর ও উপকারী বলেও প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মহান রাব্বুল আলামীনের এই ফায়সালার পেছনের আসল রহস্য ও গুঢ়তত্ত্ব সম্পূর্ণরূপে উদ্ঘাটন করা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। মুমিন হিসেবে আমাদের জন্য তার প্রয়োজনও নেই।
কারণ আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখি, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সকল ফায়সালায় বান্দার জন্য কল্যাণ থাকে। তাই আল্লাহ তায়ালার কোনো কাজে কী হেকমত নিহিত আছে তা উদ্ঘাটনের পেছনে পড়ার প্রয়োজন নেই আমাদের। মুমিন হিকমত ও তত্ত্ব-রহস্যের গোলাম নয়, মুমিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হুকুম ও ফায়সালার গোলাম। আল্লাহ তায়ালার যেকোন ফায়সালা মন থেকে গ্রহণ করার এবং যেকোন হুকুম শিরোধার্য করার জন্য মুমিন সর্বাবস্থায় সর্বান্তকরণে প্রস্তুত থাকে।
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে একটি ফায়সালা শুনিয়েছেন, এর পর কিছু নির্দেশনা প্রদান করেছেন। ফায়সালা হলো, আল্লাহ তায়ালা মানুষের কতককে, কতকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। শ্রেষ্ঠত্ব প্রদানকৃত বিষয়গুলোর মাঝে কিছু বিষয় এমন, যা অন্য কারো পক্ষে কিছুতেই অর্জন করা সম্ভব নয়। কারণ বিষয়টি তার এখতিয়ারেই নেই।
উদাহরণত, এক নারীকে আল্লাহ তায়ালা স্বাভাবিক সৌন্দর্য দান করলেন, অপর এক নারীকে তিনি তুলনামূলক আরও রূপ-সৌন্দর্য দান করলেন। এখন অপেক্ষাকৃত অধিক রূপবতী নারীকে দেখে প্রথমোক্ত নারীর মনঃপীড়ায় ভোগা ঠিক নয় যে, ইস্, আমিও যদি তার মতো রূপবতী হতাম! কারণ স্পষ্টতই তার মতো রূপবতী হওয়া এখন তার পক্ষে সম্ভব নয়। এই দুরাশার পরিণতি কেবলই আশাভঙ্গের বেদনা! কাজেই অর্থহীন প্রত্যাশার এই বেড়াজালে জড়ানোর আদৌ কোনো মানে নেই।
তদ্রূপ কেউ উচ্চবংশে জন্মগ্রহণ করল। এখন সাধারণ বংশে জন্মগ্রহণকারী কারো জন্য উচ্চবংশীয়কে দেখে এই আকাক্সক্ষা করা ঠিক নয় যে, ‘ইস আমিও যদি উচ্চবংশের হতাম’। কারণ এই আকাক্সক্ষার আদৌ কোনো ফায়েদা নেই। তাই এরূপ বিষয়ে আকাক্সক্ষা পোষণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে : ‘তোমরা এমন কিছুর আকাক্সক্ষা করো না, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের কতককে, কতকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন,। শ্রেষ্ঠত্ব প্রদানকৃত বিষয়গুলোর মাঝে কিছু বিষয় আছে এমন, আল্লাহর তাওফীক হলে চেষ্টার মাধ্যমে যা (আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ) অর্জন করা সম্ভব। এখতিয়ারি এ বিষয়গুলো আবার দুই ধরনের : দ্বীনি ও দুনিয়াবী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।