Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নারী ও শিশুদের মধ্যে জিঙ্কের ঘাটতি প্রকট হচ্ছে অপুষ্টি পরিস্থিতি আতঙ্কজনক পর্যায়ে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:২৫ পিএম
  • শিশুদের ৩২ ও নারীদের ৪৫ শতাংশই জিঙ্কের অভাবে ভুগছে
  • পুষ্টি চালে শিশু দ্রুত লম্বা হয়

শিশু ও নারীদের মধ্যে জিঙ্কের ঘাটতি প্রকট হচ্ছে। দেশের প্রায় ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ শিশুদের এবং ৪৫ দশমিক ৪০ শতাংশ নারীর মধ্যে জিঙ্গের ঘাটতি রয়েছে। জিঙ্কের অভাবেই শিশুরা খাটো এবং অপুষ্টিতে ভুগছে। চালের মাধ্যমে এই অপুষ্টি দূর করা সম্ভব। কারন মোট চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পুষ্টি চালে পাওয়া সম্ভব। তাই জিঙ্ক সমৃদ্ধ চাল উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি জনপ্রিয় করতে হবে।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বায়োফর্টিফাইড জিঙ্ক রাইস সম্প্রসারণের মাধ্যমে অপুষ্টি দূরীকরণে সম্ভাবতা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। গ্লেœাবাল অ্যালায়েন্স ফর ইম্প্রভড নিউট্রিশন (গেইন) বাংলাদেশ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সহযোগিতায় ছিলো এম্পিরিক রিসার্স লিমিটেড।

ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এক সময় আমরা জাপানীদের খাটো বলতাম। এখন আমরা খাটো হয়ে যাচ্ছি। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। নারী ও শিশুদের মধ্যে জিঙ্কের ঘাটতি আতঙ্কজনক পর্যায়ে চলে গেছে। করোনার সময় আমরা বুঝেছি যে জিংক কতোটা প্রয়োজনীয়। সে সময় জিংকের ঘাটতি সকলের নজরে এসেছে। আমরা এতোদিন পরিকল্পিভাবে ভিটামিন আয়রন আয়োডিন ঘারতি নিয়ে কাজ করেছি। এখন জিংকের ঘারতি নিয়ে কাজ করতে চাই। এজন্য ঘারতি পূরণে সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে সুপরিকল্পিত টার্গেট নিতে হবে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে গেইন বাংলাদেশের পোর্টফলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ বলেন, অনুপুষ্টির মধ্যে জিংক স্বল্পতা উল্লেখযোগ্য। সমস্যা সমাধানে জিঙ্কসমৃদ্ধ চাল অন্যতম মাধ্যম হতে পারে। কৃষকদের এ ধান চাষে উৎসাহিতকরণে বিশেষ প্রণোদনা বা ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে গেইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুবাবা খন্দকার বলেন, অনুপষ্টির মধ্যে জিঙ্ক খুবই গুরত্বপূর্ণ। এটি গ্রোথ, ইমিউনিটি, কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট প্রভৃতির জন্য খুুবই দরকার হয়। জিঙ্কের অভাবে নারীদের সন্তান গর্ভধারনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই জিঙ্কের অভাব পূরনে পুষ্টি সমৃদ্ধ চাল জনপ্রিয় করতে হবে।

কৃষি সচিব বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, দেশের মানুষের মধ্যে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও দিন দিন কমছে। মানুষ আর আগের মতো কাজ করতে পারেনা। খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা এখন খুবই কম। দেশের অপুষ্টি দূরীকরণের জিংক রাইস এখন সময়ের দাবী। জিংক এতো গুরুত্বপূর্ণ অনুপুষ্টি। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এ ঘাটতি পূরণ করতেই হবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, দেশের পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নয়নে চালের মাধ্যমে কতোটা সম্ভব সেটা দেখতে হবে। অন্যান্য ফসলগুলো জিংক সমৃদ্ধ করা যায় কিনা সেজন্যও গবেষণা দরকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, গত বছর ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জিংক সমৃদ্ধ ধানের চাষ হয়েছে। তবে জাতগুলোর চাল মোটা। মিলাররা আগ্রহী কম। জিংক চালের বাজারজাত কার্যক্রমও গতিশীল নয়। প্রতিটি দোকানে আলাদাভাবে জিংক চাল বিক্রির ব্যবস্থা করা দরকার।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির, মানুষের শরীরে জিংকের যে চাহিদা, তার প্রায় ৭০ শতাংশ চালের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। আমাদের চালগুলোর গড় জিংকের পরিমান শতকরা ২৪ পিপিএম। শরীরের জন্য দৈনিক জিংকের চাহিদা ১১ মিলিগ্রাম। এখন পর্যন্ত আমরা ৭টি জিংক সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভবন করেছি। ব্রি ধান৮৪ একটি মিরাকেল জিংক সমৃদ্ধ জাত। এখন হাই জিংক সমৃদ্ধ চাল আনছে ব্রি। জিংকের পরিমান হবে ৪৫ পিপিএম।

এ সময় এসিআই এগ্রিবিজনেসেসের প্রেসিডেন্ট ড. ফা হ আনসারি বলেন, অনেক মেগাভ্যারাইটি রয়েছে, যেগুলোতে কৃষক ও মিলারদের আগ্রহ বেশি। সে জাতগুলোতে জিংক প্রবেশ করানো যায় কিনা সেটা দেখা প্রয়োজন। এছাড়া একটি ভ্যারাইটি জনপ্রিয় করতে হলে অবশ্যই স্বল্পমেয়াদী হতে হবে।

অনুষ্ঠানে খাদ্য মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মমতাজ উদ্দিন এবং কৃষি মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. রুহুল আমিন তালুকদার, বাংলাদশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ ও সদস্য পরিচালক মো. মোস্তফিজুর রহমান, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) মহাপরিচালক মির্জ্জা মোফাজ্জল ইসলাম, কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) পরিচালক সুরজিত সাহা রায়, হারভষ্টে প্লাসের কান্ট্রি ম্যানেজার বি এম খায়রুল বাশার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মশিউর রহমান এবং বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি গোলাম ইফতেখার মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ