Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রেস্টুরেন্টের তেলে চলবে উড়োজাহাজ

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০২ এএম

চাইনিজ খাবার সিচুয়ান হট পট সঠিকভাবে তৈরির কিছু রীতিনীতি আছে। এ খাবারে অনেক বেশি পরিমাণে ফ্যাট যুক্ত থাকে। সিচুয়ান হট পটের স্বাদ পেতে হলে প্রথমে গলিয়ে নেয়া কোনো প্রাণিজ চর্বিতে পরিপূর্ণ মসলাদার স্যুপে মাংসের টুকরোগুলো ডুবিয়ে নিতে হবে। এরপর সেগুলো উদ্ভিজ্জ তেলে পূর্ণ এক প্লেটে আরেকবার ডুবিয়ে তারপর মুখে তুলতে হয়। অতিথি আপ্যায়নে সমৃদ্ধ এ খাবারটি চীনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এতে তেলের বিপুল ব্যবহারের কারণে কেবল চীনের চেংদু শহরে প্রতি মাসে ১২ হাজার টন বর্জ্য তেল তৈরি হয়। আর সেটাই নতুন এক ব্যবসার পরিকল্পনা তৈরি করে উদ্যোক্তাদের মাথায়। ২০১৬ সালে একটি উদ্যোগ থেকে বেশকিছু রেস্টুরেন্টের চর্বিজাতীয় পদার্থ সংগ্রহ করে ইউরোপ ও সিঙ্গাপুরে রফতানি করা হয়। পরে সেখানে সেসব পুনর্ব্যবহার করা হয় উড়োজাহাজ ওড়ার জন্য প্রায় উপযোগী জ্বালানি হিসেবে। বিশ্বকে উষ্ণায়নকারী মোট গ্যাসের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ দায়ী করা হয় এভিয়েশন খাতকে। নিজেদের জেট ইঞ্জিন চালু রাখার ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব পথ খুঁজে নেয়ার জন্য এ মুহূর্তে দারুণ চাপে রয়েছে খাতটি। বেশকিছু বড় বড় এয়ারলাইনস যেমন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারওয়েজ এবং ডেল্টা এয়ারলাইনস চেষ্টা করছে তাদের জেট জ্বালানির ১০ শতাংশের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই বিকল্পের ব্যবস্থা করতে। তাদের মধ্যে ৫০টিরও বেশি এরই মধ্যে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে রয়েছে। যদিও পরিপূর্ণ বিকল্প নিয়ে এখনো চিন্তাভাবনা চলছে। তবে সামনের দিকে রান্নাঘর থেকে উঠে আসা বর্জ্য তেল টেকসই জেট জ্বালানির একটি বড় উৎস হিসেবে উঠে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ এতে যেমন খাবার উৎপাদন স্থানচ্যুত হবে না বা ফসলের জন্য পথ তৈরি করতে বন উজাড়ের বিষয়েও উৎসাহিত করা হবে না। বর্তমানে এর সবচেয়ে বড় রফতানিকারক চীন। প্রকল্পটির পেছনে কাজ করা সিচুয়ান জিনশাং এনভায়রনমেন্টাল টেকনোলজির ভাইস প্রেসিডেন্ট শং গুওজুন বলেন, ‘নর্দমার তেল দিয়ে আকাশে ওড়াই আমাদের লক্ষ্য।’ চেংদুভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠান ব্যবহৃত তেল সংগ্রহ করে এবং তার বেশির ভাগই করে সিচুয়ানের রাজধানীর ১ কোটি ৬০ লাখ হট পট রেস্টুরেন্ট থেকে, তারপর তার মধ্যে থেকে সোডিয়াম এবং ধাতব কণার মতো দূষিত পদার্থগুলো সরিয়ে নেয়া হয়। তাদের বানানো সর্বশেষ পণ্যটি মূলত জৈব জ্বালানির অগ্রদূত। যেটাকে বলা হয় শিল্পায়নের মিশ্র তেল, যেগুলো কোনো একটি জাহাজে করে চলে যায় সাংহাইতে। তারপর সেখান থেকে সেগুলো যায় নেসতে ওয়েজে, যারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেকসই এভিয়েশন জ্বালানি উৎপাদক, সেই সঙ্গে যায় বিপি এবং ইএনআই এসপিএর মতো বৈশ্বিক জ্বালানি প্রতিষ্ঠানে। এ পর্যায়ে সেগুলো আবার পরিশোধন করে বায়োডিজেল বা জেট ফুয়েলে রূপান্তর করা হয়। ২০১৬ সালে শিল্প ব্যবহারের জন্য এসব বেঁচে যাওয়া চর্বি রফতানি করা শুরু করে জিনশাং, সেই সময়েই আন্তর্জাতিক পরিশোধকদের কাছে জৈব জ্বালানির চাহিদা প্রথম তৈরি হয়েছিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় চীন সবচেয়ে বেশি ভোজ্যতেল গ্রহণ করে। বছরে সেখানে মোট তেল গ্রহণ করা হয় ৪ কোটি ১০ লাখ টন। তার মধ্যে ৩০ লাখ টনকে সরবরাহ শৃঙ্খলে বায়োডিজেলে পরিণত করা হয়, যেটা একটি বড় ধরনের জৈব জ্বালানি। ইউরোপীয় চাহিদার কারণে এ জৈব জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছিল সেখানকার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পিপলস ডেইলি। ফলে প্রবৃদ্ধির একটি বড় ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে যখন বিভিন্ন দেশের সরকার এবং শিল্প খাত নিয়ন্ত্রকরা কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার বিষয়ে শক্ত নীতিমালা জারি করেছে তখন। সিনহুয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ