Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

তৈরি পোশাকের বাজারে চীনের অংশীদারত্ব কমায় বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বেড়েছে

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৫:৩৪ পিএম
ইউরোপের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে চীন। তবে তৈরি পোশাকের (আরএমজি) বাজারে বেইজিংয়ের অংশীদারত্ব ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। নিক্কেই এশিয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইইউতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনকে পেছনে ফেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং অন্যান্য বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে সাপ্লাই চেইনগুলো স্থানান্তরিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশ অনেক বেশি পরিমাণে পোশাক রপ্তানির অর্ডার পাচ্ছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, ‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রতিক বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীন থেকে অনেক কাজের অর্ডার বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়েছে।’
ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে অনেক ব্র্যান্ড পোশাক এবং টেক্সটাইল থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্স পণ্য এবং স্মার্টফোনের মতো সেক্টরে অ-চীনা সরবরাহকারীদের সন্ধান করছে।
ইইউর পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাটের সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২০২২ সালের প্রথম ৯ মাসে প্রায় ৪২ শতাংশ বেড়েছে। পরিসংখ্যান মতে, গত বছরের এই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন বা এক হাজার ৯৪০ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে ইইউ। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন বা এক হাজার ৩৬৯ কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার ডলার। 
পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানিতে প্রথম স্থানে রয়েছে চীন। আর এরপরেই দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ।
পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে চীন ২৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ রপ্তানি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সবচেয়ে বড় পোশাক সরবরাহকারীর অবস্থান ধরে রেখেছে। ২০২২ সালের প্রথম ১০ মাসে চীন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমদানি বছরওয়ারি ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ ২৫ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।
নিক্কেই এশিয়া জানিয়েছে, বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের প্রধান ইইউ ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে ফ্যাশন চেইন এইচ অ্যান্ড এম, প্রাইমার্ক, জারা, জি-স্টার র এবং মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশের একটি বিশাল সম্ভাবনাময় কর্মশক্তি রয়েছে। এটি প্রায় ৪৫টি উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে একটি যারা বর্তমানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাদে সমস্ত ইইউ বাজারে শুল্ক-মুক্ত এবং কোটা-মুক্ত প্রবেশ সুবিধা উপভোগ করছে। বিপরীতে চীনা রপ্তানিকারকদের শুল্ক দিতে হচ্ছে।
পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী টিএডি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন বলেন, ইইউ বাজারে শূন্য-শুল্ক রপ্তানি সুবিধার কারণে ক্রেতারা বাংলাদেশকে পছন্দ করে। তিনি জানান, তাদের তৈরি সব পোশাক ইউরোপে যায়।
বাংলাদেশের উৎপাদনকারীরাও এখন ভোক্তাদের রুচির সঙ্গে মানানসই উচ্চমানের ডিসপোজেবল পোশাক তৈরির দিকে নজর দিচ্ছে। বাংলাদেশ তার উৎপাদন ভিত্তিকে মৌলিক পণ্য থেকে উচ্চমানের পোশাক আইটেমগুলোতে স্থানান্তরিত করছে, যা দেশটিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে (যেখানে এ ধরনের আইটেমের চাহিদা বেশি) ভালো অবস্থান তৈরিতে সহায়তা করছে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ।
এদিকে, ব্রিটেনের প্রি প্রাইমার্কের প্রধান নির্বাহী পল মার্চেন্ট গত মাসে ঢাকা সফরে এসে বলেছিলেন যে তার কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে পণ্যে উৎস বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
বাংলাদেশের উৎপাদনকারী এবং অন্যরা আত্মবিশ্বাসী যে বাংলাদেশ শিগগিরই ইউরোপে শীর্ষ রপ্তানিকারক হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে নিক্কেই এশিয়া।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ইইউর বাজারে চীনের কাছাকাছি বাংলাদেশ, চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা তাদের ছাড়িয়ে যেতে পারি।’
তিনি বলেন, আরএমজি বাজারে বিশ্বব্যাপী চীনের অংশীদারত্ব কমছে। আমি মনে করি, এটা ধরে রাখার জন্য চীনের কোনো কৌশলগত আগ্রহ নেই। কারণ তারা এখন বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো উচ্চমূল্যের পণ্যের বিকাশ ও উৎপাদনে মনোযোগ দিচ্ছে। তাই তারা আগের মতো পোশাক শিল্পে মনোযোগ দিচ্ছে না। সূত্র : এএনআই।


 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ