বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মিরাজের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষে আল্লাহ নবীজিকে যা দিবার ছিল তা দিলেন। তিনি দিন-রাত্রিতে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করলেন। ফিরে আসতে হযরত মূসা (আ.)-এর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি নবীজিকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার রব আপনার উম্মতের ওপর কী ফরজ করেছেন? নবীজি বললেন, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। তিনি বললেন, আপনি মহান রবের কাছে ফিরে যান এবং আরও হ্রাস করার আবেদন করুন। এতটুকু পালনের সাধ্য আপনার উম্মতের নেই। আমি তো বনী ইসরাঈলকে এর চেয়ে অনেক কম ফরজ দিয়ে খুব পরীক্ষা করে দেখেছি। নবীজি ফের মহান রবের কাছে ফিরে গেলেন এবং বললেন, রাব্বুল আলামীন! আমার উম্মতের জন্য নামাজ আরও হ্রাস করুন।
আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কমিয়ে দিলেন। ফিরে আসার সময় পঁয়তাল্লিশ ওয়াক্ত নামাজের কথা হযরত মূসা (আ.)-কে জানালে তিনি বললেন, আপনার উম্মতের এতটুকু পালন করার সামর্থ্য নেই। অতএব আরও হ্রাস করার আবেদন করুন। নবীজি বললেন, আমি এমনিভাবে বারবার আপন রব ও মূসা (আ.)-এর কাছে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম। আর প্রতিবারই পাঁচ-পাঁচ করে কমতে থাকল। অবশেষে আল্লাহ পাক ইরশাদ করলেন, মুহাম্মাদ! দিবা-রাত্রির মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই মাত্র।
প্রত্যেক নামাজের জন্য দশ নামাজের সওয়াব, ফলে সেই পঞ্চাশ নামাজই হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি সৎকাজের ইচ্ছা করবে, এরপর তা আমলে পরিণত করবে না, তার জন্যও একটি নেকী লেখা হবে। আর যে ইচ্ছা করার পর আমলেও পরিণত করবে, সে দশটি নেকী পাবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মন্দ কর্মের কেবল ইচ্ছা করে, আমলে পরিণত করে না, তার কোনো গুনাহ লেখা হবে না। আর যদি আমলেও পরিণত করে তবে একটি মাত্র গুনাহ লিপিবদ্ধ হবে।
নবীজি বলেন, এরপর আমি নেমে এসে হযরত মূসা (আ.)-এর কাছে গেলাম। তাঁকে সবকিছু অবগত করলে তিনি বললেন, আপনার রবের কাছে গিয়ে আরও হ্রাস করার আবেদন করুন। আমি বললাম, মহান প্রভুর কাছে অনেকবার গিয়েছি, আবেদন করেছি। এখন আমার লজ্জা হচ্ছে। অবশেষে জান্নাত, জাহান্নাম ও সপ্তাকাশের দীর্ঘ সফর করে মহান মাওলার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়ে নবীজি ফিরে এলেন মক্কায়। নবীজি (সা.) এ পবিত্র রজনীতে মুসলমানদের জন্য তিনটি বিষয় হাদিয়াস্বরূপ নিয়ে এসেছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, সূরা বাকারার শেষ আয়াতসমূহ এবং পুরো উম্মতের মধ্যে শিরক থেকে আত্মরক্ষাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য মাগফিরাত ও ক্ষমার ঘোষণা। এ ছিল উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য মিরাজের পুরস্কার। (মুসলিম : ২৭৯)।
এ ছিল মিরাজুন্নবী (সা.)-এর একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র। এর মাঝে জান্নাত ও জাহান্নামসহ বৈচিত্র্যময় সৃষ্টির অনেক কিছুই প্রত্যক্ষ করেছেন নবীজি। (আহমাদ : ৫/৩৮৭)। বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত বর্ণনায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য বিচিত্র ঘটনাবলি থেকে নির্ভরযোগ্য ঘটনা উল্লেখ করলে বিবরণ পূর্ণতা পাবে বলে মনে হয়। যেমন: ১। এ রাতে নবীজি জাহান্নাম পরিদর্শনে গেলে মালেক নামক জাহান্নামের প্রধান রক্ষী নবীজিকে সালাম ও অভ্যর্থনা জানান। (মুসলিম : ১৬৫)।
২। তিনি দাজ্জালকেও দেখেছিলেন। (মুসলিম : ১২)। ৩। এমন এক দল লোকের পাশ দিয়ে নবীজি গমন করেছিলেন, যাদের নখ ছিল তামার। এই নখ দ্বারা তারা স্বীয় মুখমণ্ডল ও বক্ষ আচঁড়াচ্ছিল। এদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জিবরীল নবীজিকে জানালেন, এরা সেই লোক, যারা দুনিয়াতে মানুষের গোশত ভক্ষণ করত। অর্থাৎ একে অপরের গীবত ও মানহানি করত। অন্য এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, বরং দুনিয়াতে গীবতকারী এসব লোকদেরকে মৃত ভক্ষণ করতে দেখেছিলেন নবীজি। (আহমাদ : ৩/২২৪)।
৪। এই মহান রাতে নবীজি এমন কিছু লোককে দেখতে পেয়েছিলেন, যাদের ঠোঁট কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছিল, ঠোঁট কাটা মাত্র তা পুনরায় জোড়া লেগে পূর্ববৎ হয়ে যেত। এদের স¤পর্কে প্রশ্ন করলে জিবরীল নবীজিকে উত্তর দিলেন, এরা এমন বিষয়ে বক্তৃতা ও ওয়াজ করত, যা তারা নিজেরা আমল করত না। (আহমাদ : ৩/১৮১)। ৫। শবে মেরাজে নবীজি এমন লোকদের দেখলেন, যাদের পেট ছিল এক একটি গৃহের মতো। পেটের ভেতরটা ভর্তি ছিল সর্পে, যা বাইরে থেকেই দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। প্রশ্ন করা হলে জিবরীল জানালেন, এরা সুদখোর। (আহমাদ : ২/৩৫৩)। ৬। মহানবী (সা.) জান্নাত দেখার সৌভাগ্যও লাভ করেছিলেন। (তিরমিজি : ৩১৪৭)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।