গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে প্রাচ্যের শক্তি আরও বেশি সুদৃঢ় হবে বলে মনে করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক চিরকালীন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে সবকিছু দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক অনেক বেশি মজবুত হয়েছে।’ শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ যৌথভাবে আয়োজিত ‘সংযোগ ২০২৩’ এ সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ভিসি ড. মশিউর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। কলকাতার প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রাক্তনী সংসদও এই আয়োজনে সংযুক্ত ছিল।
সভাপতির বক্তব্যে দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখি না। দুই বাংলার নি:শ্বাস একই। এটির পার্থক্য শুধু পৃথক রাষ্ট্রকাঠামো। দুই বাংলার মধ্যে মিল হল- এপার-ওপারের মানুষ একটা সঞ্চিতা, একটা সঞ্চয়িতা, গীতবিতান বুকে-পিঠে করে বড় হয়। এই যে বড় হওয়া সেটিকে কাটা তার, দেয়াল কিংবা পাসপোর্ট দিয়ে আলাদা করা যায় না। আটকানো যায় না। আটকানো যায় না বলেই একাত্তরে যখন আমাদের মহাসংকট, নিপীড়িতদের তীব্র থাবা, বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর মুখোমুখী দাঁড়িয়ে; সেই সময়ে ইন্দিরা গান্ধী কোটি শরণার্থী বাঙালিকে আশ্রয় দিয়েছেন। এই ঋণ তো কোনোদিন শোধ হবার নয়। এটিই হচ্ছে প্রকৃত বন্ধুত্ব, ভালোবাসা এবং আস্থা। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে আমাদের বন্ধন চূড়ান্ত হয়েছে। স্বীকৃত হয়েছে। এরপরে নতুন করে আর পরিচয়ের বিষয় নেই। এখন শুধু সেটিকে টেনে নেয়া, আরও সুন্দর করা।’
ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘হঠাৎ করে যখন ভারতে জঙ্গি হামলা হয়, আমরা এখানে রক্তাক্ত হই। আবার আমাদের এখানে যখন কোনো উগ্র জঙ্গিদের উত্থান হয়, তখন আমাদের বন্ধুরা কষ্ট পায়। এখন কাজটা হচ্ছে চিরতরে যেন এই সব অপশক্তি নিপাত যায় সেই ব্যবস্থা করা। এসব বন্ধের একমাত্র পথ শিক্ষা, সংস্কৃতি বিকাশ। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজটি অনেক দিনের পুরানো কলেজ। তাদের সঙ্গে যদি আমাদের সাহচার্য, বন্ধুত্ব, গবেষণা বিনিময় বৃদ্ধি করি তাহলে আমরা নতুন উচ্চতায় যাবো। শিক্ষার আলো যতবেশি বাড়বে, ততবেশি অশুভ তৎপরতা বন্ধ হবে। আগামীর পথ চলায় জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজটির সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী। সেটি সংস্কৃতি, অ্যাকাডেমিক ও গবেষণা ক্ষেত্রে হতে পারে। আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলবো- বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকগণ সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে যাবে। সেখানে কর্মশালা, গবেষণা বিনিময় করবে। গবেষণা প্রস্তাবনা নিয়ে দুই প্রতিষ্ঠান যদি কাজ করে সেটি স্থায়িত্ব পাবে বলে আমার বিশ^াস।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, ‘সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজটি অত্যন্ত নামকরা একটি প্রতিষ্ঠান। এটির সঙ্গে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের যোগসূত্র তৈরি হলে উচ্চশিক্ষায় নতুন মাত্রা পাবে। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ তৈরি হলে আমাদের ভালো জায়গায় পৌঁছাবার পথ তৈরি হবে। মিশিওনারী কর্তৃক পরিচালিত একই ধরনের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশেও আছে। সেগুলো ভালো করছে। আমরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা পড়ার সুযোগ পেয়েছি- দেখেছি এখানে মানুষ তৈরি করা হয়। শিক্ষার্থীদেরকে একদিকে যেমন নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া হয়, তার সঙ্গে একটা চোখ তৈরি করে দেয়া হয় দুনিয়াটাকে দেখবার জন্য। যা কিছুভালো সেটাকে অনুধাবন করার জন্য মন তৈরি করে দেয়া হয়। আমরা এখন সফ্ট স্কিলের কথা বলি। কিন্তু যারা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করে বেরিয়েছেন, ধরেই নেয়া হয় তারা সেগুলো শিখেছেন। আমি আশা করি, এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেই সামনে এগিয়ে যাবে।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভাষার যে চেতনা সেটিকে ছড়িয়ে দেয়া আমাদের কর্তব্য। এজন্য কলকাতা থেকে আগত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা র্যালী করেছে, মশাল প্রজ্জ্বলন করেছে। এটা খুবই ভালো কাজ। কারণ ভাষা পাওয়ার পেছনে কত ত্যাগ আছে সেটি নতুন প্রজন্মের জানাটা জরুরি। মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ পেয়েছি। এর ইতিহাস জানা দরকার। না জানলে মান রক্ষা করতে পারবো না। এজন্যই এটি ভালো উদ্যোগ। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় অসাধারণ কাজ করছে। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ এবং আদান-প্রদানের মধ্য দিয়েই নতুন করে আরও ভাববার এবং নিজেদের কাজগুলো আরও উন্নত করার সুযোগ তৈরি হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার ড. ডমিনিক স্যাভিও বলেন, ‘আমরা কলকাতা থেকে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। গতকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আমাদের শ্রদ্ধা নিবেদন কার্যক্রম শুরু হয়। আমি মনে করি শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি এসব বিনিময়ে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় যাবে। মানবসম্পদ উন্নয়নের সূচকে বাংলাদেশ যে উন্নতি লাভ করেছে সেটিও আরও বৃদ্ধি পাবে। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং প্রাক্তনী বিনিময়ের মাধ্যমে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গবেষণায় উভয় দেশই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে আমার বিশ^াস। এক্ষেত্রে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজটি সব ধরনের সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’
কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সুভাষ সিংহ রায়, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার ড. ডমিনিক স্যাভিও, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ফাদার অনীল গোমস, বাংলাদেশের সেন্ট জেভিয়ার্স প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ফাদার মিল্টন কোস্টা, ফাদার প্রবাস রোজারিও, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রাক্তনী সংসদের সদস্য দীপন দাস, সম্বিত দত্ত, কল্যাণ মজুমদার, শুভেচ্ছা চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ভাষা শহীদ স্মরণে আন্তর্জাতিক প্রতীকী মশালযাত্রা বের করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।