Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অস্ত্রের মজুদ নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট

পশ্চিমা প্রতিরক্ষা শিল্পে চাপ সৃষ্টি করছে ইউক্রেন যুদ্ধ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ইউক্রেন যুদ্ধে অস্ত্র সরবরাহের কারণে অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ কমতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের। এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন এবং অস্ত্র মজুদের পর্যালোচনা শুরু করেছে, যার ফলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ৮১হাজার ৭শ’ কোটি ডলারের বার্ষিক বাজেট আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। মার্কিন জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি এপ্রসঙ্গে বলেছেন যে, মার্কিন পরিকল্পনাকারীরা তাদের অনুমান পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধের অন্যতম সবক হল, প্রচলিত যুদ্ধাস্ত্রের অতি উচ্চমাত্রায় ব্যবহারের হার। এবং আমরা আমাদের নিজস্ব মজুদ ও আমাদের নিজস্ব পরিকল্পনাগুলি আমরা ঠিকমতো উপলব্ধ করেছি কিনা, তা নিশ্চিত করার জন্য পুনরায় পরীক্ষা করছি। আমরা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি যাতে, আমরা এরপর অনুমান করতে পারি যে, সত্যিকারের প্রয়োজনীয়তা কী ধরণের হবে। এবং তারপরে আমাদের এটিকে বাজেটে পেশ করতে হবে।’ ইউক্রেনে রাশিয়ার প‚র্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের প্রথম বার্ষিকীর এক সপ্তাহ আগে মিলির বক্তব্য মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পে দুর্বলতা উন্মোচন করেছে, যা সাধারণ উৎপাদনের স্তর বাড়ানোর চেষ্টা করছে, পাশাপাশি যন্ত্রাংশ এবং শ্রম ক্ষেত্রে মহামারী সম্পর্কিত ঘাটতিতেও ভুগছে।
মার্কিন জেনারেল মিলির মন্তব্য পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে যুদ্ধ অনির্দিষ্টকালের জন্য টেনে নেওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তৃত বিতর্ককেও প্রতিফলিত করে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেন ওয়াশিংটন থেকে ২৯০০ কোটি ডলারেরও বেশি অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সাহায্য পেয়েছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্প ঘাঁটি নিরাপত্তা পরিবেশের জন্য পর্যাপ্তভাবে প্রস্তুত ছিল না। এটি আরও বলেছে যে, তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের সাথে যুদ্ধের মতো আরেকটি সংঘাতের জন্য যুদ্ধাস্ত্রের প্রয়োজন হলে পেন্টাগনের মজুদে ঘাটতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এখন কিইভ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও একটি পাল্টা আক্রমণের পরিকল্পনা করছে, যা ম‚লত সাঁজোয়া ট্যাঙ্ক, পদাতিক যুদ্ধ যান এবং ভারী কামান সহ শত শত কোটি ডলার ম‚ল্যের পশ্চিমা অস্ত্রের উপর নির্ভর করবে। ন্যাটোর মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ এই সপ্তাহে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, ইউক্রেন জোটভুক্ত দেশগুলির তুলনায় বহ গুণ বেশি হারে গোলাবারুদ ব্যবহার করছে, যা তাদের প্রতিরক্ষা শিল্পে চাপ সৃষ্টি করছে।
জেনারেল মিলি বলেন, ‹এ বছর ইউক্রেনের পক্ষে রাশিয়া-অধিকৃত ইউক্রেনের প্রতিটি ইঞ্চি থেকে রাশিয়ানদের তাড়িয়ে দেওয়া খুব কঠিন। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এটি ঘটা সম্ভব নয়, তবে এটি অসাধারণ কঠিন। এবং এর জন্য ম‚লত রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর পতন ঘটানোর প্রয়োজন হবে।’ এদিকে, ইউক্রেনের এক বছরের যুদ্ধের কারণে ইউরোপের অস্ত্রশস্ত্রও কমে এসেছে। অনির্দিষ্টতালের জন্য সর্বোচ্চ সহায়তার প্রতিশ্রæতি সত্তে¡ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিরক্ষা ব্যয়ে একটি বিশাল বৃদ্ধির কারণে অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস এবং অন্যান্য মিত্র দেশগুলি। অনেক মিত্র যারা ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী সরবরাহ করতে সহায়তা করেছে, তারা এখন তাদের কৌশলগত সম্পদের ক্ষতি সম্পর্কে অস্বস্তি প্রকাশ করছে। বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হল, গোলাবারুদ। ইউক্রেন দিনে ৭হাজার কামানের গোলা নিক্ষেপ করছে, যা ইউরোপীয় অস্ত্র শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে বেশি। এই সপ্তাহে ব্রাসেলসে জার্মানির নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্তোরিয়াস একটি ন্যাটো বৈঠকের ফাঁকে ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, ‹যে হারে মালামাল এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করা হচ্ছে, তা পুনর্বিন্যাস করা এবং পুনরায় সরবরাহ করা অসম্ভব।›

কিয়েল ইন্সটিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির তথ্য অনুসারে, বার্লিন ধীরে ধীরে কিইভকে তার সামরিক সহায়তা বাড়িয়েছে এবং ২হাজার ৫শ’ কোটি ডলারেরও বেশি সহায়তার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। সময়ের সাথে সাথে দেশটি সামরিক বাহিনী বুন্দেসফিয়ার জন্য বরাদ্দ বিশেষ তহবিলের ১০হাজার কোটি ইউরোর ১০ শতাংশেরও বেশি ম‚ল্যস্ফীতি এবং সুদ পরিশোধের কারণে হারিয়ে গেছে। এমনকি যুদ্ধের আগে থেকে জার্মান সামরিক বাহিনী জন্য আবেদনকৃত একটি প্রয়োজনীয় তালিকার সরবরাহগুলিও বাকি রয়ে গেছে। ইউক্রেনে জার্মানির অনুদান তার দীর্ঘ-অবহেলিত সশস্ত্র বাহিনীর মজুদকে আরও হ্রাস করেছে। দেশটির আমলাতন্ত্র এটির পুনরায় মজুদ ধীর করে দিয়েছে এবং মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের অর্থপ্রদানের কারণে তহবিলটি নষ্ট হয়ে গেছে। বন ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড সিকিউরিটি, স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন স্টাডিজের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জোয়াকিম ওয়েবার অনুমান করেছেন যে, জার্মানি তার বর্তমান গোলাবারুদ সরবরাজ দিয়ে মাত্র দুই দিন যুদ্ধ করতে পারবে। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলি যেহেতু সমরাস্ত্রের ক্রয় বৃদ্ধি করেছে, অস্ত্র নির্মাতারা দ্রæত নতুন চাহিদাগুলি প‚রণ করতে পারছে না। এই সপ্তাহে ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন যে, ভারী অস্ত্রের জন্য অপেক্ষার সময় ১২ থেকে ২৮ মাসে উন্নীত হয়েছে এবং এখন যে অর্ডারগুলি দেওয়া হয়েছে, তা আড়াই বছরের মধ্যে সবরাহ করা হবে। লেপার্ড ২ ট্যাঙ্কের জন্য বন্দুকের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান রাইনমেটাল বলেছে যে, এটির ৪০হাজার কোটি ইউরোর কাছাকাছি পুরনো অর্ডার রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার দ্বিতীয় বৃহত্তম দাতা ব্রিটেন সম্প্রতি ১৪টি চ্যালেঞ্জার২ ট্যাঙ্কের একটি বহর পাঠানোর প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলিতে ফাঁস হওয়া একটি সাম্প্রতিক বার্তা অনুযায়ী, ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল প্যাট্রিক স্যান্ডার্স বলেছেন যে, ইউক্রেনে সমরাস্ত্র না পাঠানোর ভাল কারণ ছিল না। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘এই প্রচেষ্টা ব্রিটেনকে সাময়িকভাবে দুর্বল করে দেবে।’ ইউক্রেনের অন্যান্য মিত্র তাদের কৌশলগত মজুদ সম্পর্কে উদ্বেগের মধ্যে অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে। তবুও, আশঙ্কা রয়ে গেছে যে, এই যুদ্ধ ইউক্রেনের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এবং যুদ্ধের কারণে উদ্ভ‚ত নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলি এবং ইউরোপ কী পরিমাণে তাদের মোকাবেলায় সক্ষম, তা শুক্রবার জার্মানিতে বার্ষিক মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে একটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে, যেখানে বিশ্ব নেতারা এবং প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জড়ো হয়েছেন। সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, ফাইনান্সিয়াল টাইম্স।





 

Show all comments
  • Md Abdul Jabbar Khan ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৮ এএম says : 0
    পরমাণু কেন্দ্রে অস্ত্র মওজুদ করা অত্যন্ত দায়িত্বহীনতার পরিচয়।
    Total Reply(0) Reply
  • বাহারুল শাহ্ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৩ এএম says : 0
    স্যার, ইউক্রেনের এত সৈন্য মারা যাওয়ার পরেও সেদেশের ভেতর কোন বড়ো প্রতিক্রিয়া নেই এটা আশ্চর্যজনক নয় কি?
    Total Reply(0) Reply
  • Asraful Nur ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৪ এএম says : 0
    স্কট রিটার ও Douglas Macgregor নামের মার্কিন যুদ্ধ এনালাইসিস একই ধরনের কথা বিভিন্ন মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারে বলতেছে অনবরত এবং যে চাহিদা চাইছে জোকারটা তার ৫০% সরবরাহের কথা পশ্চিমা ও আমেরিকা দিবে আশ্বাস দিয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Asraful Nur ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৪ এএম says : 0
    স্কট রিটার ও Douglas Macgregor নামের মার্কিন যুদ্ধ এনালাইসিস একই ধরনের কথা বিভিন্ন মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারে বলতেছে অনবরত এবং যে চাহিদা চাইছে জোকারটা তার ৫০% সরবরাহের কথা পশ্চিমা ও আমেরিকা দিবে আশ্বাস দিয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mostafiz Sultan ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৪ এএম says : 0
    রাশিয়া বেশী সময় নেয়াতে ইউক্রেন ও পশ্চিমা শক্তি গুছিয়ে ওঠার সময় পেয়েছে। প্রতিরক্ষা ও প্রতি-আক্রমণের সুযোগ পাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kayum Raja ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৬ এএম says : 0
    চায়না যে গোলাবারুদ ২ মাসে রাশিয়া কে বানিয়ে দিবেন। ইউরোপ আমেরিকা সে গোলাবারুদ ৬ মাসেও বানিয়ে দিতে পারবেননা
    Total Reply(0) Reply
  • Kayum Raja ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৬ এএম says : 1
    চায়না যে গোলাবারুদ ২ মাসে রাশিয়া কে বানিয়ে দিবেন। ইউরোপ আমেরিকা সে গোলাবারুদ ৬ মাসেও বানিয়ে দিতে পারবেননা
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ali Azgor ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৬ এএম says : 0
    রমজান কাদিরব যাহা বলেছেন ১০০% সঠিক।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Kader ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৮ এএম says : 0
    ইউরোপ মানচিত্র থেকে মুছে যাক,,আমিও চাই,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ