নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের আগেই ব্যাটিংয়ে সবার ওপরে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ফিফটি করে নিজেকে আরও ওপরে নিয়ে গেলেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের ওপেনার। শান্তর সৌজন্যে চার আসর পর বিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেন কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান। গত চার আসরেই রানের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন বিদেশিরা। সবশেষ ২০১৬ আসরে ৪৭৬ রান নিয়ে এক নম্বরে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছিলেন তামিম ইকবাল। এই ম্যাচেরই দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে এলেন তানভির ইসলাম। প্রথম বলেই বোল্ড করলেন তৌহিদ হৃদয়কে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের এই বাঁহাতি স্পিনার উঠে গেলেন উইকেট শিকারিদের তালিকার শীর্ষে।
গতপরশু মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে না পারলেও এবারের বিপিএলে গোটা আসরের মতো ফাইনালেও দারুণ ব্যাটিং করেন শান্ত। তার ব্যাট প্রতি ম্যাচেই যেন ছিল অশান্ত ঘোড়ার মতো উদ্দীপ্ত। এদিনও মঈন আলীর বলে বোল্ড হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে খেলেন ৯ চার ও ১ ছয়ে ৪৫ বলে ৬৪ রানের ইনিংস। এই ফিফটির সুবাদে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলের এক আসরে ৫০০ রানের মাইলফলক ছুলেন শান্ত। পুরো আসরে ১৫ ইনিংসে ৩৯.৬৯ গড় ও ১১৬.৮৪ স্ট্রাইক রেটে তার রান ৫১৬। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে বিপিএলের এক আসরে ৫০০ স্পর্শ করতে পেরেছেন আর কেবল একজনই। ২০১৯ আসরে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ১৩ ইনিংসে ৫৫৮ রান করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো।
বিপিএলে এবার শান্তর ফিফটি ৪টি, সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি ৮৯ রানের। আরও চার ম্যাচে পেরিয়েছেন তিনি ৩০। গোটা টুর্নামেন্টে ৫৭টি চার এসেছে তার ব্যাট থেকে। বিপিএলের এক আসরে যে কোনো ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারির রেকর্ড এটি। হাওয়ায় ভাসিয়ে বল সীমানা ছাড়া করেছেন ১২ বার। শান্ত ছাড়া এবারের আসরে চারশর বেশি রান করেছেন রংপুরের রনি তালুকদার ও সিলেটের হৃদয়। ১৩ ম্যাচে ৩ ফিফটিতে রনির সংগ্রহ ৪২৫ রান। আসরের সর্বোচ্চ ৫ ফিফটিতে ৪০৩ রান করেছেন হৃদয়। এছাড়া সেরা পাঁচে থাকা অন্য দুজন চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা দলের লিটন দাস (১৩ ম্যাচে ৩৭৯ রান) ও ফরচুন বরিশালের সাকিব আল হাসান (১৩ ম্যাচে ৩৭৫ রান)।
কুমিল্লাকে চ্যাম্পিয়ন করার পথে ফাইনালে ৩ ওভারে ১৯ রান খরচায় ১ উইকেট নিয়েছেন তানভির। পুরো আসরেই তিনি বল হাতে রেখেছেন দারুণ অবদান। বাঁহাতি স্পিনে দারুণভাবে সামলেছেন পাওয়ার প্লেতে বোলিংয়ের দায়িত্ব। মাঝের ওভারে রান আটকে রাখার কাজও করেছেন সুনিপুণ দক্ষতায়। সব মিলিয়ে ১২ ম্যাচে তানভির নিয়েছেন ১৭ উইকেট। ওভারপ্রতি খরচ করেছেন স্রেফ ৬.৩৬ রান। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে নেওয়া ৩৩ রানে ৪ উইকেট এবারের আসরে তার সেরা বোলিং। তানভিরের সমান ১৭ উইকেট পেয়েছেন হাসান মাহমুদও। তবে রংপুর রাইডার্সের তরুণ পেসার খেলেছেন ১৪টি ম্যাচ। তিনি ওভারপ্রতি দিয়েছেন ৭.৯৮ রান। এছাড়া উইকেটের তালিকায় সেরা পাঁচে আছেন ঢাকা ডমিনেটসের্র নাসির হোসেন (১২ ম্যাচে ১৬ উইকেট), রংপুরের আজমতউল্লাহ ওমরজাই (১১ ম্যাচে ১৫ উইকেট) ও সিলেটের মোহাম্মদ আমির (১১ ম্যাচে ১৪ উইকেট)।
এই প্রাপ্তির পুরস্কারও এবার দ্বিগুল করেছে বিপিএল কতৃপক্ষ। সব মিলিয়ে ফাইনালের দিন দেওয়া হয়েছে প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকার পুরস্কার। পরপর দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ট্রফির পাশাপাশি পেয়েছে ২ কোটি টাকার অর্থ পুরস্কার। রানার্স আপ হওয়া সিলেটের ঘরে গেছে ট্রফির সঙ্গে ১ কোটি টাকা। পুরো আসরে দারুণ খেলে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছেন শান্ত। পুরো আসরে ৪ ফিফটিতে ৫১৬ রান করে তিনি পেয়েছেন ১০ লাখ টাকা। আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের পুরস্কার ৫ লাখ টাকাও জিতেছেন তিনি।
ফাইনাল ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ৫ লাখ টাকা নিজের করে নিয়েছেন জনসন চার্লস। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে কুমিল্লাকে শিরোপা জেতানোর ম্যাচে ৭ চার ও ৫ ছয়ে ৫২ বলে ৭৯ রান করেছেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান। সর্বোচ্চ উইকেটের ৫ লাখ টাকা পুরস্কার যৌথভাবে পেয়েছেন চ্যাম্পিয়ন দলের তানভির ও হাসান। সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার জিতেছেন রানার্স-আপ দলের মুশফিকুর রহিম। উইকেটের পেছনে ১৪টি ডিসমিসালের সৌজন্যে ৩ লাখ টাকা পেয়েছেন অভিজ্ঞ কিপার।
বিপিএলের সেরারা
চ্যাম্পিয়ন : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স
রানার্স আপ : সিলেট স্ট্রাইকার্স
সেরা ব্যাটসম্যান : নাজমুল হোসেন শান্ত (সিলেট)
সেরা বোলার : তানভির ইসলাম (কুমিল্লা) ও হাসান মাহমুদ (রংপুর)
সেরা ফিল্ডার : মুশফিকুর রহিম (সিলেট)
আসর সেরা : নামজুল হোসেন শান্ত (সিলেট)
সেরা ৫
ব্যাটসম্যান ম্যাচ রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রাইক. ১০০/৫০
নাজমুল শান্ত (সিলেট) ১৫ ৫১৬ ৮৯* ৩৯.৬৯ ১১৬.৭৪ ০/৪
রনি তালুকদার (রংপুর) ১৩ ৪২৫ ৬৭ ৩৫.৪১ ১২৯.১৭ ০/৩
তৌহিদ হৃদয় (সিলেট) ১৩ ৪০৩ ৮৫* ৩৬.৬৩ ১৪০.৪১ ০/৫
লিটন দাস (কুমিল্লা) ১৩ ৩৭৯ ৭০ ৩১.৫৮ ১২৯.৩৫ ০/৩
সাকিব আল হাসান (বরিশাল) ১৩ ৩৭৫ ৮৯* ৪১.৬৬ ১৭৪.৪১ ০/৩
বোলার ম্যাচ উইকেট সেরা গড় ইকো. ৪/৫
তানভির ইসলাম (কুমিল্লা) ১২ ১৭ ৪/৩৩ ১৭.৫৮ ৬.৩৬ ১/০
হাসান মাহমুদ (রংপুর) ১৪ ১৭ ৩/১২ ২৪.৮২ ৭.৯৮ ০/০
নাসির হোসেন (ঢাকা) ১২ ১৬ ৪/২০ ১৪.০৬ ৬.৮১ ০/০
আজমতউল্লাহ (রংপুর) ১১ ১৫ ৩/১৭ ১৮.৩৩ ৭.১৭ ০/০
রুবেল হোসেন (সিলেট) ৮ ১৪ ৪/৩৭ ১৮.০৭ ৮.৫২ ১/০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।