Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এপ্রিলের মধ্যে বাখমুত মুক্ত করতে চায় রাশিয়া

ইউক্রেনের উপর ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০২ এএম

নাগরিকদের অবিলম্বে সরে যাওয়ার আহŸান ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের
লুহানস্কে প্রতিদিন দুই শতাধিক সেনা হারাচ্ছে ইউক্রেন
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনীয় সেনার জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেকোনো বিষয়ে আলোচনা করতে উন্মুক্ত রাশিয়া
পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জাম মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হবে: রুশ উপ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ক্রিমিয়ায় ইউক্রেনের আক্রমণকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন সচিব
ইনকিলাব ডেস্ক
রাশিয়া বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে অসংখ্য ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং দেশটির বৃহত্তম তেল শোধনাগারে আঘাত করেছে বলে জানিয়েছে কিয়েভ। এদিকে, ওয়াগনার ভাড়াটে যোদ্ধা গোষ্ঠীর প্রধান ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, দীর্ঘ-অবরুদ্ধ শহর বাখমুত কয়েক মাসের মধ্যে মুক্ত হবে।

ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র বা ক‚টনৈতিক লাভের পরে ভারী বোমাবর্ষণের প্যাটার্ন অনুসরণ করে, রাশিয়া ভোরে ৩৬টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিমান হামলার সাইরেন শুরু করে এবং ক্রেমেনচুক শোধনাগার সহ ইউক্রেন বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে, যেখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অস্পষ্ট ছিল। তবে এর মধ্যে ১৬টি ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে নামানো হয়েছে বলে বিমান বাহিনী দাবি করেছে। রাশিয়ার বর্তমান ফোকাস ডোনেৎস্কের ছোট শহর বাখমুতের দিকে, যেটি ইউক্রেনের শিল্প কেন্দ্রস্থল ডনবাসের অংশ এবং এখন আংশিকভাবে রাশিয়ার দখলে। বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ রাশিয়াকে আরও পশ্চিমের দুটি বড় শহর ক্রামতোর্স্ক এবং সেøাভিয়ানস্কে অগ্রসর হওয়ার জন্য অতিরিক্ত সুবিধা দেবে।

এদিকে, যুদ্ধপন্থী সামরিক বøগারের সাথে একটি সাক্ষাতকারে ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, বাখমুত এপ্রিলের মধ্যে মুক্ত হবে। ‘বাখমুত নিতে হলে আপনাকে সমস্ত সরবরাহ রুট কেটে ফেলতে হবে। এটি একটি উল্লেখযোগ্য কাজ,’ তিনি বলেন, ‘আমরা যতটা চাই তত দ্রæত অগ্রগতি হচ্ছে না। বেসামরিকদের বাঁচানোর বিষয় না থাকলে, নতুন বছরের আগেই বখমুত নেয়া যেত।’
নাগরিকদের অবিলম্বে সরে যাওয়ার আহŸান ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের : ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং অস্থায়ীভাবে অধিকৃত অঞ্চলগুলির পুনঃএকত্রীকরণ মন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বেসামরিক নাগরিকদেরকে বাখমুত (আর্টিওমভস্কের ইউক্রেনীয় নাম) থেকে অবিলম্বে সরে যাওয়ার আহŸান জানিয়েছেন।

‘আমি বেসামরিক নাগরিকদের কাছে আবেদন করছি যারা এখনও বাখমুতে আছেন: আপনাকে অবিলম্বে সরিয়ে নিতে হবে,’ তিনি শুক্রবার তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে লিখেছেন। উপ-প্রধানমন্ত্রীর মতে, শহরটিতে ৬ হাজার বেসামরিক লোক রয়ে গেছে। আগের দিন, ইউক্রেনীয় পক্ষ স্থানীয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সমস্ত দলিল ও কাগজ-পত্র সরিয়ে নিয়েছে। এ মুহুর্তে, আর্টিওমভস্কের মুক্তির জন্য মারাত্মক যুদ্ধ চলছে। রাশিয়ান বাহিনী শক্তিবৃদ্ধি এবং গোলাবারুদ গ্রহণের জন্য শহরের ইউক্রেনীয় ইউনিট দ্বারা ব্যবহৃত চারটি রাস্তার মধ্যে তিনটি কেটে ফেলতে সক্ষম হয়েছে, তবে ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী এ অঞ্চলে আরও মজুত স্থানান্তর করছে।
লুহানস্কে প্রতিদিন দুই শতাধিক সেনা হারাচ্ছে ইউক্রেন : লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের ক্রেমেনায়া শহরের কাছে ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রতিদিন অন্তত ২০০ জন করে সদস্য হারাচ্ছে। লুহানস্ক পিপলস মিলিশিয়ার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আন্দ্রে মারোচকো এ তথ্য জানিয়েছেন।

‘প্রতিদিন শত্রæরা এখানে (ক্রেমেনায়ার কাছে) একটি ব্যাটালিয়ন পর্যন্ত অতিরিক্ত বাহিনী সরাতে বাধ্য হয়, কারণ প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী এই এলাকায় প্রায় ২০০ জন সৈনিকের ক্ষয়ক্ষতি হয়,’ তিনি বলেন। মারোচকো উল্লেখ করেছেন যে, ক্রেমেনায়ার কাছে ইউক্রেনীয় ক্ষয়ক্ষতি ‘আর্টিওমভস্কের (বাখমুত) সাথে কার্যত তুলনীয়’।
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনীয় সেনার জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে : রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী বৃহস্পতিবার ইউক্রেনীয় সৈন্যদের জ্বালানি ও গোলাবারুদ সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর উপর একটি কেন্দ্রীভ‚ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ গতকাল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
‘১৬ ফেব্রæয়ারী, রাশিয়ান ফেডারেশনের সশস্ত্র বাহিনী ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর জ্বালানী ও গোলাবারুদ সরবরাহকারী উদ্যোগগুলো লক্ষ্য করে বায়ু এবং সমুদ্র-ভিত্তিক দূরপাল্লার উচ্চ-নির্ভুল অস্ত্রের সাথে একটি ঘনীভ‚ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে,’ মুখপাত্র বলেছেন। সামরিক কর্মকর্তার মতে, মিশনটি সম্পন্ন হয়েছিল। ‘সমস্ত মনোনীত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে,’ তিনি যোগ করেছেন। ‘হামলার ফলস্বরূপ, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর গ্রæপগুলোতে জ্বালানী সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে, ইউক্রেনে বিস্ফোরক পদার্থ, গানপাউডার এবং কঠিন প্রপেলান্ট উৎপাদন করার ক্ষমতা যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে,’ তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেকোনো বিষয়ে আলোচনা করতে উন্মুক্ত রাশিয়া : রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেকোনো বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত কিন্তু ওয়াশিংটনকে সংলাপের জন্য প্রস্তুত হতে দেখছে না, রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বৃহস্পতিবার চ্যানেল ওয়ানকে বলেছেন।

‘আমরা যেকোন বিষয়ে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত। বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর, আমেরিকানরা তথাকথিত ‘বিড়ম্বনাকারীদের’ মধ্য থেকে দুই-তিনটি বিষয় বাদে সকল যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ করে দেয়। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা তাদের পক্ষ থেকে সংলাপ করার জন্য কোনো প্রস্তুতি দেখছি না,’ তিনি বলেন। ক‚টনীতিক যোগ করেছেন, যে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে ক‚টনৈতিক তৎপরতা বিদ্যমান ছিল, তা প্রয়োজনীয়, পাশাপাশি কিছু সংলাপের উপস্থিতি সত্তে¡ও সুরক্ষা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। ‘এটি সম্পৃক্ততা হিসাবে একটি সংলাপ নয়, এটি একটি মতামত বিনিময়, আমরা কোথায় দাঁড়িয়েছি সে সম্পর্কে অনুস্মারক। তবে এটি সেই ক‚টনৈতিক কার্যকলাপ নয়, যা আগে বিদ্যমান ছিল এবং যা মূলত প্রয়োজন। আমাদের নিরাপত্তা সম্পর্কে কথা বলা উচিত, সম্পর্কে কৌশলগত স্থিতিশীলতা, আমাদের আলোচনা করা উচিত যে আমরা কীভাবে আরও বাঁচতে যাচ্ছি,’ তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন।

পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জাম মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হবে : রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বৃহস্পতিবার চ্যানেল ওয়ানকে বলেছেন, বর্তমানে ইউক্রেনে যে সমস্ত পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে, তা মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হবে।

‘এখন যা কিছু জাহাজে করে সেখানে পাঠানো হচ্ছে তা মাটিতে মিশিয়ে ফেলা হবে। সেই সমস্ত লেপার্ড (জার্মানির ট্যাঙ্ক) ইউক্রেনে আমাদের আগুনে নিমজ্জিত হবে,’ তিনি বলেছিলেন। উপমন্ত্রী কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে পশ্চিমের নীতিরও সমালোচনা করেছেন, এটিকে ‘একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত’ বলে অভিযোগ করেছেন। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইস্যুটিকে বানচাল করা বর্তমান উন্নয়নের আরেকটি ‘দুঃখজনক দিক’ হয়ে উঠেছে, তিনি বলেন, যদিও মস্কো পারমাণবিক যুদ্ধের অগ্রহণযোগ্যতার নীতিতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।
ক্রিমিয়ায় ইউক্রেনের আক্রমণকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রিমিয়ায় সামরিক স্থাপনায় ইউক্রেনের হামলাকে সমর্থন করে, বৃহস্পতিবার মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ফর পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেছেন। ‘এগুলো বৈধ লক্ষ্যবস্তু। ইউক্রেন তাদের আঘাত করছে এবং আমরা এটিকে সমর্থন করছি,’ তিনি ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সামরিক স্থাপনা সম্পর্কে বলেছিলেন।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এ নুল্যান্ড বলেন, ‘ক্রিমিয়াকে ন্য‚নতম সামরিকীকরণ না করা পর্যন্ত ইউক্রেন নিরাপদ হবে না, এটি (রাশিয়ার) একটি টেকসই প্রতিবন্ধকতা নিশ্চিত করার অংশ।’ তিনি আলোচনার আয়োজন সাবেক মার্কিন ক‚টনীতিক এবং এখন কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর একজন সিনিয়র ফেলো অ্যারন ডেভিড মিলারের বক্তব্যকে কার্যত প্রত্যাখ্যান করেছেন, যিনি বলেছিলেন যে, ক্রিমিয়া হল মস্কোর জন্য ‘লাল রেখা’। নুল্যান্ড বলেন, ‘ইউক্রেনীয়রা কোথায় লড়াই করবে বা তারা ক্রিমিয়ার সাথে স্বল্প মেয়াদী, মধ্যমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদে কিভাবে মোকাবেলা করবে তা নিয়ে আমি পূর্বানুমান করতে যাচ্ছি না। আমরা ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের হিসাবে স্বীকৃতি দিই।’

ওয়াশিংটনের লক্ষ্যগুলো কিয়েভের অঞ্চল পুনরুদ্ধারের ইচ্ছার সাথে মিলে যায় কিনা জানতে চাইলে নুল্যান্ড বলেন, ‘আমি মনে করি এ পরবর্তী পর্যায়ে ইউক্রেনীয়রা যুদ্ধক্ষেত্রে কী করতে চায় এবং আমরা তাদের কী করার পরিকল্পনা করতে সক্ষম করছি, হ্যাঁ।’ ক্রিমিয়ার প্রশ্নে যাওয়ার আগে কিয়েভকে ‘অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য অংশ ফেরত দিতে হবে’ এবং এটিই ‘এখন ফোকাস করা হয়েছে,’ তিনি উল্লেখ করেছেন। আন্ডার সেক্রেটারি অফ স্টেট যোগ করেছেন, ‘আমাদের অবস্থান রয়ে গেছে যে, তারা (ইউক্রেনীয়রা) তাদের আন্তর্জাতিক সীমানার মধ্যে যা খুশি তাই করতে পারে। আমরা কখনই ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার দখলকে স্বীকৃতি দিইনি।’
উল্লেখ্য, ফেব্রæয়ারী ২০১৪ সালে ইউক্রেনে একটি অভ্যুত্থানের পরে, ক্রিমিয়া এবং সেভাস্তোপল সরকার রাশিয়ায় যোগদানের জন্য একটি গণভোট আয়োজন করে, যেখানে ৯৬.৭ শতাংশ ক্রিমিয়ান এবং ৯৫.৫ শতাংশ সেভাস্তোপোলীয় ভোটাররা ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাশিয়ান ফেডারেশনে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ১৮ মার্চ, ২০১৪ সালে এ পুনর্মিলন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। নথিগুলি ২১ মার্চ রাশিয়ার ফেডারেল অ্যাসেম্বলি বা দ্বিকক্ষীয় সংসদ দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। গণভোটের অপ্রতিরোধ্য ফলাফল সত্তে¡ও, কিয়েভ এবং ওয়াশিংটন এখনও ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসাবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। সূত্র : তাস, রয়টার্স, আল-জাজিরা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ