নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিপিএলে সিলেটের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই আগে যা করতে পারেনি, এবার মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে তা করে দেখাল সিলেট স্ট্রাইকার্স। গড়পড়তা দল নিয়ে শুরুতেই টানা ৫ জয়ে যে চমক জাগানোর শুরু, তা থেমেছে ফাইনালে পৌঁছে যাওয়া অবিশ^াসের ঘোর দিয়ে। এই সাফল্যে আবারও আলোচনায় অধিনায়ক মাশরাফি। তবে এতে নিজের কোন ম্যাজিক দেখেন না ঘরোয়া এই আসরের সফলতম অধিনায়ক।
মাশরাফি ম্যাজিকের প্রসঙ্গটি এসেছে মূলত বিপিএলের তার নেতৃত্বের পরিসংখ্যানের কারণে। পরিসংখ্যানের বিচারে বাংলাদেশের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি। বিপিএলেও তিনিই সেরা। আগের আট আসরে চারটিতেই ট্রফি উঠেছে তার হাতে। প্রথম তিন আসরেই চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। প্রথম দুটি ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে, তৃতীয়টি জেতান তখনকার গড়পড়তা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে নিয়ে। পঞ্চম আসরে রংপুর রাইডার্সকে শিরোপা এনে দেন মাশরাফি। ফাইনাল হারেননি একবারও। এবার নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি সিলেট স্ট্রাইকার্সকে নিয়ে পা রাখলেন আরেকটি শিরোপা মঞ্চে। গতপরশু রাতে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তার দল জিতল অনেকটা নাটকীয়ভাবে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে জানালেন, আরেকটি ফাইনালে নামতে হবে আগের কোন কিছু মাথায় না রেখেই, ‘কোনো ম্যাজিক নেই, সব আল্লাহর রহমত। হারিনি বলে যে হারব না, তা নয়। আবার হেরে যাওয়ার জন্যও নামব না। আগে যা হয়েছে, তা স্মরণ করে লাভ নাই। পরশু আমাদের একটা ফাইনাল আছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’
আজ ফাইনালে মাশরাফিদের প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলটি এবারও শিরোপা জেতার সবচেয়ে জোরালো দাবিদার। প্রথম তিন ম্যাচ হেরে এবার আসর শুরুর পর তারা টানা দশ জয়ে পৌঁছে যায় ফাইনালে। সেরা ছন্দের লিটন দাসের সঙ্গে মঈন আলী, সুনিল নারাইন, আন্দ্রে রাসেলদের মতো বিদেশি আছে তাদের দলে। মাশরাফি তার এক সময়ের দলটিকে নির্দ্বিধায় অনেকখানি এগিয়ে রাখলেন, তবে নিজেদের জেতার আশাটাও জারি রাখলেন ভালোভাবেই, ‘যদিও কুমিল্লা দল অনেক অনেক ভালো, এই টুর্নামেন্টের যে কোনো দল থেকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাদের সঙ্গে আমরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারব না। আমরা পুরো টুর্নামেন্টে যে স্বাভাবিক খেলা খেলে এসেছি, নিজেদের দিকে যদি মনোযোগ ঠিক রাখতে পারি, গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় যদি অবদান ঠিকমতো রাখতে পারি, তাহলে কেন নয়?’ তবে সুনির্দিষ্ট করে আমার ম্যাজিক বলে কিছু নেই। ভালো খেলছে ছেলেরা। আশা করি, আরেকটা ম্যাচ ভালো খেলবে।’
‘ম্যাজিক’ শব্দের ব্যবহারে মাশরাফি যেখানে হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন তবু অনেকের বিশ্বাস, নিশ্চয়ই কোনো জাদুর কাঠি আছে ক্যাপ্টেন ম্যাশের হাতে। মাঠের ক্রিকেট যারা খেলেন, তারা যদিও জানেন, এখানে জাদু বলে কিছু নেই। এই যেমন ইমরুল কায়েস। মাশরাফির পর বিপিএলের সফলতম অধিনায়ক তিনিই। তার নেতৃত্বে নিজেদের সবশেষ দুই শিরোপা জিতেছে কুমিল্লা। একবার শিরোপার ভাগিদার হয়েছেন মাশরাফির নেতৃত্বে। সেই ইমরুল বলছেন, মাশরাফির কোনো জাদু নেই, তবে আছে নেতৃত্বের বিশেষ গুণ।
কাগজে-কলমে বেশ পিছিয়ে থাকা দলটি লিগ পর্ব শেষ করেছে সবার ওপরে থেকে। এরপর শীর্ষ চার থেকে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বিদেশি ক্রিকেটারদের আসা-যাওয়ার পালায় আরও শক্তিহীন হয়ে পড়ে দলটি। কিন্তু শক্তিতে বেশ এগিয়ে থাকা রংপুর রাইডার্সকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে হারিয়ে তারা পৌঁছে যায় ফাইনালে। ‘ম্যাশ-ম্যাজিক’ ধারণাও তাতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় আরও। ২০১৫ সালে মাশরাফির অধিনায়কত্বেই খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম শিরোপা জেতেন ইমরুল। এছাড়া জাতীয় দলেও মাশরাফির নেতৃত্বে খেলেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ফাইনালের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি অধিনায়ক মাশরাফির বিশেষত্ব তুলে ধরলেন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে, ‘ক্রিকেট আসলে দলগত খেলা, এখানে ম্যাজিক বলে কোনো কথা নেই। দলের ঐক্য যদি ভালো থাকে, দল যদি ভালো খেলতে থাকে, তাহলে ভালো ফলাফল সম্ভব। অনেকে অনেক বড় মাপের দল করেও কিন্তু ফলাফল আসে না। কারণ দলের মাঝের পরিবেশ ভালো থাকে না। মাঠে গিয়ে শুধু খেলতে হয়... দলের যে বন্ধন, তা ঠিক থাকে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ আমি মনে করি। মাশরাফি ভাই যে দলেই খেলুক না কেন, এই জিনিসটা খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। দলের সবাইকে নিয়ে থাকেন, দলের সবার বন্ধনটা ভালো রাখেন। আমরাও চেষ্টা করি আমাদের দলের পরিবেশ ভালো রাখার। এটাই উনার হয়তো ম্যাজিক বলা যায়। উনি সবসময় তাদের তরুণ বা বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে থাকেন। এই জিনিসটা উনি উপভোগ করেন। এটা হয়তো ভালো করার মূল বিষয়।’
বিপিএলে মাশরাফির পরই সফলতম অধিনায়ক ইমরুল। তার নেতৃত্বে নিজেদের সবশেষ দুই শিরোপা জিতেছে কুমিল্লা। তাহলে ইমরুলেরও কি ম্যাজিক আছে? তার কণ্ঠে শোনা গেল মাশরাফির কথারই প্রতিধ্বনি, ‘না! আমার কোনো ম্যাজিক নেই। ওপরওয়ালা আছেন।’ ম্যাজিকের আলোচনা এক পাশে রাখলে ক্রিকেটীয় বোধেও মাশরাফির দক্ষতার ছাপ দেখা যায় অনেক। রংপুরের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচেই যেমন, নিজে ব্যাটিংয়ে ওপরে নেমে যাওয়া অথবা শেষ দিকে তানজিম হাসান সাকিব ও লুক উডকে দারুণভাবে ব্যবহার করে ম্যাচ বের করে আনার পারদর্শিতা দেখিয়েছেন সিলেট অধিনায়ক। পুরো আসরেই তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তদের মতো তরুণ ক্রিকেটারদের পাশাপাশি মুশফিকুর রহিম, রুবেল হোসেনদের মতো অভিজ্ঞদের নিয়ে কার্যকর নেতৃত্বে একের পর এক ম্যাচ জিতেছেন মাশরাফি।
ইমরুলও মানছেন মাশরাফির সেই কৃতিত্ব। তবে সিলেটের বিপক্ষে ফাইনালে নামার আগে এসব নিয়ে আলাদা করে ভাবতে চাচ্ছেন না কুমিল্লার অধিনায়ক, ‘প্রতিটি দলেই একজন অধিনায়ক থাকেন এবং প্রতিটি দলেরই একটা পরিকল্পনা থাকে যে, আমার দলকে আমি কীভাবে চালাব। মাশরাফি ভাই উনার দলকে খুব ভালোভাবে পরিচালনা করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। যে কারণেই হয়তো উনাদের দল ফাইনালে এসেছে। আমাদের দলেরও একটা পরিকল্পনা আছে বা সবার ইচ্ছা আছে আমরা কীভাবে ফাইনাল ম্যাচটা খেলব। ওইরকম যে ভিন্ন কিছু হবে, ওইরকম আমার মনে হয় না। খেলি না...!’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।