মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত এক দশকে এত বড় দুর্যোগ পৃথিবী দেখেনি। মঙ্গলবার এ দাবি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)। রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, ‘এই দুর্যোগের উৎসে এখনো পৌঁছাতে পারিনি আমরা। সব মিলিয়ে ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো অস্পষ্ট। এ এক ভয়াবহ অবস্থা।’ এখনো পর্যন্ত ৩৯ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এ ভূমিকম্পে। জাতিসঙ্ঘের আশঙ্কা এই সংখ্যা ৫০ হাজারে পৌঁছাবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তার দেশে মৃতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সব মিলিয়ে তুরস্কে মৃতের সংখ্যা এখন ৩৫ হাজার ৪১৮। সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৪১৪। যদিও সিরিয়ায় উদ্ধারকাজ খুবই ধীরগতিতে হচ্ছে। সিরিয়ায় উদ্ধারকারী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অবশ্য দাবি করেছে, সেখানে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তবে সরকার এখনো সংখ্যা ঘোষণা করেনি। তুরস্কের উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, এখনো প্রাণের খোঁজ চালাচ্ছে তারা। তবে ঘটনার আটদিন পার হয়ে যাওয়ার পর জীবিত ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সোম ও মঙ্গলবার অবশ্য কিছু জীবিত ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া গেছে। এরদোগান মঙ্গলবার এই ভূমিকম্পকে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের সাথে তুলনা করেছেন। তার কথায়, পরমাণু বিস্ফোরণ হলে এমন ভয়াবহতা দেখা যায়। তিনি জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে দুই দশমিক দুই মিলিয়ন মানুষ গৃহহীন। হাজার হাজার বাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গণমাধ্যমকর্মীরা জানিয়েছেন, শহরের ভিতর একটি বাড়ি সোজা দাঁড়িয়ে নেই। ভূমিকম্পে সমস্ত ধসে পড়েছে। কার্যত এক মৃত্যু-উপত্যকায় পরিণত হয়েছে দক্ষিণ তুরস্কের বিপর্যস্ত অঞ্চল। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি আরো বেশি সাহায্যের প্রয়োজনের কথা বলেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে সাহায্য ও উদ্ধারকারী দল ইতোমধ্যেই তুরস্কে পৌঁছেছে। ডয়চে ভেলে এ খবর জানায়। অপর দিকে, তুরস্কের দশটি প্রদেশে ভূমিকম্পের ছোবলে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত লাশ উদ্ধার হচ্ছে। গণকবরেও ঠাঁই নেই। লাশের স্তূপ জমেছ বিভিন্ন স্থানে। অপরদিকে ধ্বংসস্তূপ ঘিরে বাড়ছে স্বজনের বিলাপ। অনেকেই টানা ৮ দিন ধরে অপেক্ষা করছেন প্রিয় মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের। সেটা হোক মৃত কিংবা জীবিত। আদিয়ামান শহরের কোনো ভবনই অক্ষত নেই। জুমহুরিয়াত মহল্লার পরপর পাঁচটি ভবন দেবে গেছে। এই ভবনগুলোতে প্রায় তিনশ লোকের বাস ছিল। এ পর্যন্ত এখান থেকে চল্লিশটির মতো লাশ উদ্ধার হয়েছে। অপেক্ষায় আরও অনেকে। অনেকের ভিড়ে বুক চাপড়ে বিলাপ করছিলেন একটি পরিবারের চারজন সদস্য। ওই পরিবারের বিলাপের সঙ্গে শত পরিবারের কান্না একাকার হয়ে গেছে। পরিবারটির কর্তা হাসান হুসেইন বারবার মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ছিলেন। বাবাকে সান্ত¡না দিচ্ছিলেন বড় মেয়ে জয়নব। জয়নব জানালেন, তার মা, এক বোন, তিন ভাইসহ মোট পাঁচজন ওই ভবনের তৃতীয় তলায় ছিলেন। প্রায় ৯ দিন ধরে আমরা বিলাপ করছি, আমাদের পরিবারের সদস্যদের যেন উদ্ধার করা হয়। জানি তারা বেঁচে নেই। কিন্তু লাশ আমরা পেতে চাই। উদ্ধারকর্মীদের ভাষ্য, বহুতল ভবন হওয়ায় উপর থেকে নিচতলা পর্যন্ত যেতে তাদের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে। কিন্তু স্বজনহারা মানুষগুলো দিশেহারা হয়ে এদিক-ওদিক ছুটছিলেন। উদ্ধারকারী দল দেখলেই কাতর আর্তিতে বলছিলেন, আপনারা দ্রুত করুন, প্রিয় মানুষটি পচেগলে যাচ্ছে। লাশ তো বোধহয় আর খুঁজে পাব না, আপনারা দ্রুত করুন।’ উদ্ধারকারী দল জানিয়ে দিচ্ছিল আমরা সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছি, অপেক্ষা করুন। কিন্তু দিশেহারা স্বজনরা একের পর এক আকুতি জানিয়ে যাচ্ছেন। ২২ বছর বয়সি দিলান, তার ভাই আব্দুল্লাহকে জড়িয়ে অনবরত কাঁদছে। বিলাপ করে বলছিলেন-তার মা, দুই ভাই, ভাবি এবং তাদের দুই সন্তান আটকে আছে। আমরা উদ্ধার কর্মীকে ভবনটি দেখিয়ে বলছি তাদের যেন উদ্ধার করা হয়। কিন্তু কেউ শুনছে না। ৯ দিন ধরে অপেক্ষা করছি। আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে জানি না। ভাই আব্দুল্লাহ বলছিল তাদের পাশের ভবনটিতে থাকা এবরো নামের এক মেয়ের সঙ্গে পরের মাসে বিয়ের কথা ছিল। হবুবধূ এবার প্রাণে বেঁচে গেলেও অঙ্গহানি অবস্থায় একটি হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি আছে। এবরোর মা বাবাসহ পরিবারের সাত সদস্য এখনো নিখোঁজ। এই শহরে খানিকক্ষণ পরপরই লাশ উদ্ধার হচ্ছে। কামালপাশা সড়কের বাসিন্দা আলি এরসুত বলছিলেন, ভবন থেকে বহু মানুষের লাশ বের করা হচ্ছে, কিন্তু আমার বাবা-মাসহ পরিবারের চারজনকে এখনো পাচ্ছি না। আতঙ্কে দুচোখের পাতা এক করতে পারছে না দিদেম কায়া। আদিয়ামানের এই কিশোরী থাকেন ইস্তাম্বুলে। সেখানেই পড়াশোনা করেন। তার কথায়, ‘এখনো তো অনেক জায়গায় অনেককে জীবিত উদ্ধার করা হচ্ছে, আমার বাবা-মা, ভাই নিশ্চয়ই এখনো মরেনি, তাদের দ্রুত উদ্ধার করুন।’ এমন আর্তি শুধু দিদেম কায়ারই নয়, শত শত মানুষের। মঙ্গলবার রাতে কামালপাশা সড়ক এলাকায় একসঙ্গে পাঁচ-সাতটি লাশ উদ্ধার হয়েছে। বিশেষ কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা ওই লাশের ওপর আছড়ে পড়ছিলেন স্বজনরা। কিন্তু উদ্ধারকারী দল সেই লাশ কাউকে দেখাচ্ছিলেন না। কারণ এখন উদ্ধার হওয়া কোনো লাশই দেখানোর উপযোগী নয়। বিশ্বের অন্তত সত্তরটি দেশ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়ভাবেও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শোকাহত মানুষরা খাবারের কথা যেন ভুলেই বসেছে। সময় যত এগোচ্ছে, লাশের গন্ধ ততই ভারী হচ্ছে। জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ হচ্ছে। তবে উদ্ধারকারীরা হাল ছাড়েনি। ডিডব্লিউ, বিবিসি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।