গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
অপসংস্কৃতি রুখে দিয়ে সুন্দর ও সৃজনশীল কর্মকা- চর্চার আহ্বান জানিয়ে ‘বসন্ত উৎসব-১৪২৯’ উদযাপন করেছে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়। এই প্রথমবারের মতো জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে নানা বর্ণিল আয়োজেনের মাধ্যমে এ দিনটি উদযাপন করে। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বিশ^বিদ্যালয়ের আয়োজনে রাজধানীর তেজগাঁও কলেজে এই উৎসব শুরু হয়। দিনব্যাপী চলা উৎসবে ছিল বিশিষ্ট শিল্পীদের পরিবেশনায় গান, নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তি। সকালে উৎসবের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করছে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়। এজন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চায় আমাদের নতুন প্রজন্মকে আরও বেশি সৃজনশীল হতে হবে। তারা অপসংস্কৃতি রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে।’ দেশব্যাপী এই ধরনের সুস্থ সংস্কৃতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সমবেত দর্শকদের বসন্তের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বিভিন্ন ঋতু ঘুরে ঘুরে আসে। আমরা বাঙালি। আমাদের সব ঋতুর জন্য গান আছে, কবিতা আছে, বিভিন্ন ঋতুর রঙ আছে। নানা ঋতুর নানা ধাচ আছে। সব মিলিয়ে আমাদের কাছে বার বার একেকটা ঋতু আসে আর জানিয়ে দেয় আমরা বাঙালি। আমাদের সেই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাকে আরও বেগবান করতে হবে। তাহলেই আমাদের বিশ^মানব হবার, বিশ^নাগরিক হবার প্রচেষ্টা সফল হবে।’
উৎসবে শিক্ষামন্ত্রী দর্শকদের কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। তিনি বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যবোই। কারণ আমাদের একজন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আছেন। সব অন্ধকারের অপশক্তিকে রুখে দিয়ে বসন্তের এই রঙ, আরও নানা রঙকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাবো। আমরা বাঙালি, আমরা বিজয়ীর জাতি। নিশ্চয়ই সব অপশক্তিকে আমরা রুখবোই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বই।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘বসন্ত সুন্দর নিয়ে এসেছে, সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে, সৃজনশীলতা নিয়ে এসেছে। বসন্ত আমাদের নতুন সৃষ্টির উল্লাস নিয়ে এসেছে। বসন্তের জন্য যে অপেক্ষা থাকে তা মূলত সুন্দরকে স্বাগত জানানোর জন্য। বসন্তের জন্য যে প্রস্তুতি নেওয়া হয় তা মূলত- যা কিছু অপসংস্কৃতির, জঞ্জালের তা দুই হাত দিয়ে উপড়ে ফেলার। আমার দৃঢ় বিশ^াস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে বসে যে দেশের মানচিত্র এঁকেছেন, তাঁর শিশু সন্তানের মুখশ্রী না দেখে বাংলাদেশের মুখশ্রী এঁকেছেন। সেই বাংলাদেশ অপার সবুজে, সম্ভাবনায়, সৃজনশীলতায় অনন্য হয়ে উঠবে সেটিই ছিল আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন, নির্যাতিত দুই লক্ষ মা-বোনের স্বপ্ন।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘তোমরা সব সুন্দরকে আলিঙ্গন করো। সুস্থ সংস্কৃতিকে ধারণ করে তোমাদের নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। নিয়মিত বই পড়তে হবে। বিজ্ঞানে, চিন্তনে, সৃষ্টিতে আমরা যেন অনন্য হই। তোমরা জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ো। আমি আস্থার সঙ্গে বলতে চাই, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে ‘কটাক্ষ’ শব্দকে চিরতরে মুছে দেয়া হবে। আমার প্রতিটি সন্তান, প্রতিটি শিক্ষার্থী গভীর দেশপ্রেম আর আত্মবিশ^াস নিয়ে দেশকে ভালোবেসে এগিয়ে যাবে। আসো আমরা এ দিনে শপথ করি-নিজেকে গড়ার মধ্য দিয়ে সমাজ এবং প্রিয় দেশমাতৃকাকে গড়ে তুলতে চাই। বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশের সোপান পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। স্মার্ট বাংলাদেশ আর কিছু নয়- ভেতরের সকল সুন্দর এবং শক্তিকে বের করে দেশ মাতৃকার জন্য দেয়াই হচ্ছে স্মার্টনেস।’
অনুষ্ঠানে বসন্তকে স্বাগত জানিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, শামা রহমান। আর আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী শিমুল মুস্তাফা। অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন র্যাচেল প্রিয়াংকা প্যারিস। অনুষ্ঠানে গানের পালায় সুরের ঝরনাধারা বইয়ে দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পীবৃন্দ। দর্শকবৃন্দ তা তন্ময় হয়ে উপভোগ করেছেন। উৎসবে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও তেজগাঁও কলেজের গভর্নিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন। বসন্ত উৎসবে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হারুন-অর-রশিদ।
উৎসবে রবীন্দ্রনাথের ‘বসন্ত’ শীর্ষক গীতিনৃত্য নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। তেজগাঁও কলেজ ও সরকারি সংগীত কলেজের শিক্ষার্থীরা উৎসবে সংগীত পরিবেশন করেন। এই উৎসবে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বাসন্তী ও লাল রঙের শাড়ি, সালোয়ার কামিজ পরে ক্যাম্পাসে আসেন। কলেজ ক্যাম্পাস গোলাপ, গাঁদা, মল্লিকা দিয়ে সাজানো হয়েছে। বসন্ত উৎসব উপলক্ষে কলেজ ক্যাম্পাসে রাজধানীর কয়েকটি কলেজ বসন্ত মেলার আয়োজন করে। সেখানে পিঠাপুলি, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, হস্তশিল্প ও মুক্তিযুদ্ধের বইয়ের স্টল খোলা হয়। শিক্ষার্থী ছাড়াও বিপুল সংখ্যক দর্শন স্টলগুলো পরিদর্শন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।