Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কলোরাডো নদীর বাটোয়ারা নিয়ে বিপাকে যুক্তরাষ্ট্র

আবহাওয়ার পরিবর্তনে ক্রমশ কমছে পানির স্তর

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে আশঙ্কাজনকহারে কমতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের খরা-পীড়িত কলোরাডো নদীর পানির স্তর। দেশটির পশ্চিমের প্রানশক্তি কলরাডোর সংকোচনের ভয়ানক পরিণতি এড়াতে পানির বাটোয়ারা নিয়ে বিবাদে নেমেছে ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা এবং নেভাদাসহ যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি রাজ্য। ফলে, এটি এখন শক্তিশালী রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের মধ্যে লড়াইয়ের লক্ষ্যতে পরিণত হয়েছে। বৈশি^ক তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট একের পর এক খরা, দাবানল, ঝড় এবং বন্যার আঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যে ধরনের লড়াইয়ের মুখোমুখি হবে, কলরাডো বিরোধটি হল তার প্রাথমিক আভাস। এই বিরোধের মিমাংসায় কোন জনপদগুলিকে সুরক্ষিত করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির পাশাপাশি, দেশের সবচেয়ে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাজ্য এবং শিল্পগুলির জন্য অস্তিত্বের ঝুঁকি তৈরি করেছে।

১৪শ’ ৫০ মাইল দীর্ঘ কলোরাডো নদী পশ্চিমের বেশিরভাগ অঞ্চলকে বসবাসযোগ্য করে তুলেছে এবং এখন ওয়াইওমিং থেকে মেক্সিকো সীমান্ত পর্যন্ত একটি ব্যাপক উৎপাদনশীল কৃষি শিল্প এবং ৪ কোটি মার্কিনীকে পানি সরবরাহ করে। কিন্তু আবহাওয়া পরিবর্তন গত দুই দশকে এর প্রবাহকে ২০ শতাংশ সঙ্কুচিত করে দিয়েছে এবং বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, বিশে^র তাপমাত্রা প্রতি এক ধাপ করে বৃদ্ধির সাথে সাথে নদীটি আরো ৯ শতাংশ করে সঙ্কুচিত হতে থাকবে। কলরাডোর দুটি প্রধান জলাধারে পানির স্তর এত দ্রæত হ্রাস পাচ্ছে যে, মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে, পানি ব্যবহারকারীদের অবশ্যই নদীর প্রবাহের এক তৃতীয়াংশের মতো খরচ কমাতে হবে, নইলে এই বাঁধগুলো থেকে পারি সরবরাহ করার ক্ষমতা অকেজো হয়ে যেতে পারে। এটি ঘটলে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা গ্রিডের স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনও বন্ধ করে হয়ে যাবে।

কলরাডোর পানির বাটোয়ারা নিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের রাজনীতি এখন বাইডেন প্রশাসনের জন্য একটি বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে। এই লড়াইয়ের একদিকে রয়েছে দেশটির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির ক্যালিফোর্নিয়া, যার মূল শক্তি কৃষি খাত। ডেমোক্রেট অধ্যুষিত রাজ্যটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আক্রমনাত্মক জলবায়ু প্রশমন নীতিগুলিও প্রণয়ন করেছে। আরেকদিকে রয়েছে দিকে এরিজোনা, একটি গূরুত্বপূর্ণ রাজ্য, যেখানে ডেমোক্রেটদের জাতীয় নির্বাচনের ভাগ্য নদীর অববাহিকায় থাকা অন্যান্য রাজ্যের ভ্যাগ্যের সাথে যোগ হতে পারে। এবং এই মুহুর্তের লড়াইটি অ্যারিজোনা ও ক্যালিফোর্নিয়াকে কেন্দ্র করে হলেও, ওয়াইওমিং, কলোরাডো, উটাহ্ এবং নিউ মেক্সিকোর উজান রাজ্যগুলি, যারা অ্যারিজোনাকে সমর্থন করে, তাদের শতাব্দী প্রাচীন পানি বন্টনের নিয়মগুলির আরও নমনীয় প্রয়োগের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে।

যেহেতু পশ্চিমাঞ্চলের পানি আইন কেউ প্রথম পানির ভাগ দাবি করলে, তাকে সরবরাহের প্রথম সারিতে থাকার অনুমতি দেয়, তাই ভাটি অঞ্চলের কৃষি ব্যবহারকারীরা শহর এবং শহরতলির তুলনায় প্রায়শই পানির ক্ষেত্রে কিছু শক্তিশালী অধিকার রাখে। এদিকে, নদী অববাহিকায় বসবাসকারী ২৯ জন উপজাতিও রয়েছে, যাদের স্বার্থের প্রতি বাইডেন প্রশাসন বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। প্রায় তিন ডজন বিপন্ন প্রজাতির ঝুলে থাকা ভাগ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্য গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের মধ্য দিয়ে একদিন কোনো নদী প্রবাহিত না হতে পারে এমন আশঙ্কায় পরিবেশবাদীরাও শীঘ্রই এই লড়াইয়ে যোগ দিতে পারেন। এবং এই লড়াই শেষে উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে। নেভাদার শীর্ষ কলোরাডো রিভার আলোচক জন এন্টসমিঙ্গার বলেছেন, ‹যদি ক্যালিফোর্নিয়ার প্রস্তাবের বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ফলাফলটি কেন্দ্রীয় অ্যারিজোনা প্রকল্প এবং প্রধান নগর অঞ্চলগুলিকে শুকিয়ে ফেলবে এবং সমস্ত পানিকে মার্কিন আদিবাসী ও উপজাতিদের থেকে দ‚রে ঠেলে দেবে, আমি মনে করি উপায়গুলি সত্যিই কঠিন হয়ে উঠবে।’

মার্কিন কেন্দ্র সরকার, রাজ্যগুলি এবং স্থানীয় পানি ব্যবস্থাপকদের জন্য আরও বেশি ঝুঁকি হল যে, আদালতের সিদ্ধান্ত বিশেষ করে উচ্চ আদালতে রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের আধিপত্যের কারণে শুধুমাত্র কলোরাডো নদী নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত নদী জুড়ে পানিপ্রবাহগুলি পরিচালনা করার জন্য বাইডেন সরকারের বিস্তৃত কর্তৃত¦কে হ্রাস করা হতে পারে। আবহাওয়া পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাইডেন প্রশাসনকে এমন একটি সময়ে এই লড়াইয়ের মুখোমুখি করেছে, যখন আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর লক্ষ্যে পানি ব্যবস্থাপনাগুলি অভ‚তপ‚র্ব ও অপ্রত্যাশিত উপায়ে বিকশিত হচ্ছে। সূত্র : পলিটিকো।



 

Show all comments
  • Mintuahmed Mintuahmed ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৩ এএম says : 0
    আবহাওয়া পরিবর্তনের পেছনে পরাশক্তিগুলায় মূল দায়ী।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৪ এএম says : 0
    পরিবেশের ওপর অত্যাচার চালালে এমন ফলই ভোগ করতে হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ali Azgor ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৪ এএম says : 0
    দিন দিন আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখে কান্না আসে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ