বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মানুষের জীবনকালকে সাধারণত চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। যেমন (ক) রূহানী জীবন অর্থাৎ দুনিয়াতে আগমন পূর্ব জীবন, (খ) দুনিয়ার জীবন, (গ) মৃত্যু পরবর্তী কবর বা বরযখের জীবন এবং (ঘ) হাশর মাঠে উত্থানের পর জান্নাত বা জাহান্নামের অনন্ত জীবন। কখনো এই শ্রেণি বিন্যাসকে দু’ভাগে বিভক্ত করে বলা হয়েছে দুনিয়ার জীবন এবং আখেরাতের জীবন। এখানে আখেরাতের জীবন বলতে কবরের জীবন ও হাশরের মাঠে উত্থান পরবর্তী জীবন কালকে বুঝানো হয়েছে। তবে, অত্র আলোচনায় আমরা দুনিয়ার জীবনকাল সম্পর্কে কিছু কথা বলার চেষ্টা করব। আসুন, এবার সে দিকে নজর দেয়া যাক।
বস্তুত মানুষের জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত সময়কালকে দুনিয়ার জীবন বলে অভিহিত করা হয়। এই জীবন কাল খুবই স্বল্প এবং ক্ষণস্থায়ী। পক্ষান্তরে আখেরাতের জীবন দীর্ঘ ও চিরস্থায়ী। মহান রাব্বুল আলামীন আল কোরআনে ‘হায়াতুদ্ দুন্ইয়া’ অর্থাৎ দুনিয়ার জীবনকে এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।
(১) ইরশাদ হয়েছে : ‘অথচ দুনিয়ার জীবন তো আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগ মাত্র। (সূরা আর রায়াদ : ২৬)। (২) ইরশাদ হয়েছে : ‘আর দুনিয়ার জীবন ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছু নয়।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৮৫)। (৩) ইরশাদ হয়েছে : ‘আর দুনিয়ার জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখেরাতের আবাসই উত্তম’ অতএব, তোমরা কি অনুধাবন কর না?’ (সূরা আল আনয়াম : ৩২)।
(৪) ইরশাদ হয়েছে :‘আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনে ভোগের উপকরণ তো নগন্য।’(সূরা তাওবাহ : ৩৮)। (৫) ইরশাদ হয়েছে : ‘আর এ দুনিয়ার জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই নয়, আর আখেরাতের জীবনই তো প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত?’ (সূরা আনকাবুত : ৬৪)। (৬) ইরশাদ হয়েছে : ‘হে আমার সম্প্রদায়! এ দুনিয়ার জীবন কেবল অস্থায়ী ভোগের বস্তু, আর নিশ্চয় আখিরাতই হচ্ছে স্থায়ী আবাস’ (সূরা মুমিন : ২৯)।
আলোচ্য আয়াত সমূহে বর্ণনা করা হয়েছে যে, ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জীবন মোটেই ভরসা করার যোগ্য নয়। পার্থিব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা কিছু হয় এবং যাতে দুনিয়াদার ব্যক্তি মগ্ন ও আনন্দিত থাকে, সেগুলো ধারাবাহিকভাবে বলতে গেলে যথাক্রমে এই দাঁড়ায়। প্রথমে ক্রীড়া (লাইবুন্)। প্রত্যেক মানুষের জীবনের প্রথম অংশ ক্রীড়া অর্থাৎ লাইবুন-এর মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়। এরপর শুরু হয় ক্রীড়া কৌতুক (লাহবুন)-এর পালা। লাহবুন এমন খেলাধুলা, যার আসল লক্ষ্য চিত্তবিনোদন।
তারপর শুরু হয় যিনাতুন বা অঙ্গসজ্জা ও পোশাক ইত্যাদির মোহ। এতে মানুষ মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ে। এবং সে অঙ্গসজ্জায় ব্যাপৃত হয়। তারপর শুরু হয় পারস্পারিক গর্ব ও অহঙ্কার। এই অহঙ্কার তাকে মাতাল করে ছাড়ে। তারপর শেষ বয়সে সামসময়িক ও সমবয়সিদের সাথে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততীর প্রতিযোগিতার প্রেরণা সৃষ্টি হয়। এর শেষ কোথায়, তার কুল-কিনারা খুঁজে পাওয়া যায় না।
উল্লেখিত ধারাবাহিকতায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ নিজ নিজ অবস্থা ও পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট ও পরিতুষ্ট থাকে। কিন্তু আল-কোরআন স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে, এগুলো মূলত ক্ষণস্থায়ী ভোগ, ছলনাময় ভোগ, খেল-তামাশা, নগন্য ভোগের উপকরণ, ক্রীড়া কৌতুক, অস্থায়ী ভোগের বস্তু ও অর্থহীন কথাবার্তা, ছাড়া কিছুই নয়। পার্থিব জীবনকে ক্রীড়া-কৌতুক বলা হয়েছে।
এর উদ্দেশ্য এই যে, ক্রীড়া কৌতুকের যেমন কোনো ভিত্তি নেই এবং এর দ্বারা কোনো বড় সমস্যার সমাধান হয় না, কিছুক্ষণের মধ্যেই সব তামাশা খতম হয়ে যায়, পার্থিব জীবনের অবস্থাও তদ্রæপ। পার্থিব জীবনের বাস্তবতা শুধুমাত্র এতটুকুই যেমন ছোট শিশুরা কিছুক্ষণের জন্য নেচে গেয়ে আমোদ করে এবং তারপর যার যার ঘরে চলে যায়। জীবনের কোনো একটি আকৃতি ও এখানে স্থায়ী নয়। যে যে অবস্থায়ই আছে সাময়িকভাবে একটি সীমিত সময়ের জন্যই আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।