Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তক তৈরিতে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে

বিক্ষোভ সমাবেশে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নেতৃবৃন্দ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে বিজাতীয় পাঠ্যপুস্তক পড়তে দেয়া হবে না। অনতিবিলম্বে বিজাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম বাতিল করতে হবে। বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তক তৈরির সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। মিথ্যাবাদী শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনিকে জাতির সামনে ক্ষমা চাইতে হবে। বিবর্তনবাদ ইসলামবিরোধী কুফরি মতবাদ যারা পড়াবেন তাদের ঈমান থাকবে না। আগামী প্রজন্মকে নাস্তিক ও ধর্মহীন বানানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ইসলামবিরোধী পাঠ্যপুস্তক তৈরি করা হয়েছে। মুসলিম জাতিসত্তার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে ইনশা আল্লাহ। গতকাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে বিজাতীয় আগ্রাসন বন্ধ, অনৈসলামিক বিষয়গুলো বাতিল এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে বিশেষজ্ঞ আলেমদের যুক্ত করার দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
সংগঠনের উত্তরের সভাপতি মাওলানা মকবুল হোসেন কাসেমির সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে দলের সহ-সভাপতি আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব শাইখুল হাদিস আল্লামা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়া, দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ, মাওলানা জয়নুল আবেদীন, মাওলানা আব্দুল গাফফার ছয়ঘরী ও মাওলানা রেদওয়ান মাজহারী।
সমাবেশে আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, যারা এদেশের কোমলমতি শিশুদের বানরের জাতিতে পরিণত করতে চায় তাদের উচিত আফ্রিকার জঙ্গলে চলে যাওয়া। বিতর্কিত ইসলামবিরোধী পাঠ্যপুস্তক সর্ম্পকে প্রধানমন্ত্রী কিছু জানেন না বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী কি দিল্লি আর মস্কোর ধ্যানে মগ্ন থাকেন তিনি কিছু জানেন না। প্রধানমন্ত্রীতো বিবর্তনবাদের পক্ষে নন। তাহলে কিভাবে এসব বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তক তৈরি হচ্ছে। গোটা জাতি এতে বিক্ষুব্ধ। তিনি অবিলম্বে বিজাতীয় পাঠ্যপুস্তক সম্পূর্ণ বাজেয়াপ্ত করার জোর দাবি জানান। তিনি বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কত লেখিকা এ দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ইসলামের দুশমনরাও বিজাতীয় পাঠ্যপুস্তক তৈরি করে এ দেশে টিকে থাকতে পারবে না। দলের মহাসচিব শাইখুল হাদিস আল্লামা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, বিবর্তনবাদ একটি পরিত্যক্ত কুফরি মতবাদ। যারা এই কুফরি মতবাদ পড়াবে তাদের ঈমান থাকতে পারে না।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে কি করে পাঠ্যপুস্তকে কুফরি মতবাদ চালু করা হলো আর কি করেই মিথ্যাবাদী শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি ক্ষমতায় থাকেন তা প্রশ্নের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, অবিলম্বে বিজাতীয় শিক্ষা সিলেবাস বাতিল করতে হবে। না হয়, কাফনের কাপড় পরে বিজাতীয় শিক্ষা সিলেবাস বাতিলের দাবিতে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মকে নাস্তিক বানানোর ষড়যন্ত্র এদেশে সফল হবে না। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের স্বপ্ন ভুলে যান। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। কারাবন্দি সকল আলেম ওলামাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। জাতিকে নাস্তিক বানানোর ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভ‚মিকম্পে মানবিক বিপর্যয়ে গভীর শোক প্রকাশ করে নিহতদের রূহের মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রæত সুস্থতা কামনা করেন আল্লামা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। পরে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
গোলটেবিল বৈঠকে পীর সাহেব চরমোনাই
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, জাতীয় স্বার্থবিরোধী পাঠ্যপুস্তক সংশোধনে সর্বব্যাপী গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, বিশ্ব যখন ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে প্রবেশ করছে, বেকারত্ব যখন তারুণ্যকে হতাশায় নিমজ্জিত করছে, অর্থনীতি, রাজনীতি যখন অনৈতিকতার চরম খেসারত দিচ্ছে, দেশের পাঠ্যপুস্তকে যখন প্রায়োগিক বিজ্ঞান, কর্মমুখি শিক্ষা ও নৈতিকতার প্রাবল্য থাকার কথা ছিল তখন পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি, বিজ্ঞানের নামে ধর্মবিদ্বেষী দর্শন ও নৈতিকতাবিরোধী বিষয়বস্তু সংযোজন করা হয়েছে।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, পাঠ্যপুস্তকের প্রধান প্রবণতা হওয়ার কথা দেশীয় ঐতিহ্য, বোধ-বিশ্বাস, সেখানে নতুন পাঠ্যপুস্তকের প্রধান প্রবণতাই হলো দেশের হাজার বছরের বোধ-বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক ও ধর্মবিদ্বেষ।
পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, এই পাঠ্যক্রমেই উল্টো বিবাদের বীজ রোপন করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরস্থ একটি রেস্টুরেন্টে ২০২৩-এর মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে জনগণের বোধ-বিশ্বাস, সংস্কৃৃতি ও জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করে সাম্প্রদায়িক উস্কানী, তথ্য ও ইতিহাস বিকৃতি, বিতর্কিত ও অবৈজ্ঞানিক মানব সৃষ্টিতত্তে¡র অনুপ্রবেশ, ট্রান্সজেন্ডার টার্ম, পৌত্তলিক ও ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির আধিপত্য, প্লেজারিজম এবং ধর্ম ও জাতি সত্তাবিরোধী বিষয়বস্তু সংযোজনের মতো নিন্দনীয় ঘটনায় করণীয় সম্পর্কে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে দলের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন।
দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদাানী, মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, এবি পার্টির আহŸায়ক ও সাবেক সচিব সোলায়মান চৌধুরী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের স্থায়ী কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আলী হোসেন ফরাজী, গণআধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ঢাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মাওলানা মো. ইয়াকুব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ, নেজামে ইসলাম পার্টির সহ-সভাপতি মুফতি জিয়াউল হক মজুমদার, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মো. তৈয়্যব হোসাইন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রফেসর ড. এ কে এম ইউনুস, মহাখালী কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা নজরুল ইসলাম মারুফ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন, কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হানিফ খান, দার্শনিক ও কবি মূসা আল হাফিজ, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া।
খেলাফত ছাত্র মজলিস : ছাত্র মজলিসের উদ্যোগে ‘জাতীয় শিক্ষা সঙ্কট ও বিতর্কিত শিক্ষাক্রম ২০২৩ উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে সুস্পষ্টভাবে এ কথা উল্লেখ ছিল যে, ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত চরিত্র গঠনে সহায়তা করা’। কিন্তু ২০২৩ সালের শিক্ষাক্রমে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, শিক্ষানীতিতে উল্লেখিত শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অমান্য এবং অগ্রাহ্য করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রমে সম্পূর্ণভাবে ‘ইসলামী শিক্ষা’ বিষয়টিকে বাদ দেয়া হয়েছে। জাতির জন্য বিষয়টি খুবই উদ্বেগের।
জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ইসলামী শিক্ষাকে বাদ দেয়া একটি অযৌক্তিক ব্যাপার। এটা একদিকে জাতীয় শিক্ষানীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, অন্যদিকে মুসলিম জীবনের কদর্য এক হীনমন্যতার বহিঃপ্রকাশ। পাশাপাশি এটা একটি নির্দিষ্ট ধর্মের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ। দেশের সংবিধানের শুরুতে আল্লহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের কথা লেখা আছে কিন্তু শিক্ষাক্রমে ইসলামী শিক্ষার কোনো বালাই নেই। সিংহভাগ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি এভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন সরকারের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। ইসলামী ছাত্র মজলিসের উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় এসব কথা বলা হয়।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিলাল আহমদ চৌধুরী’র সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদীস মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী। সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ রায়হান আলীর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আদ্বুল কাদের, অ্যাডভোকেট এ কে এম বদরুদ্দোজা, অধ্যাপক মুহাম্মদ খালেকুজ্জামান, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলী, অধ্যাপক এম মুজাহিদুল ইসলাম, শায়খ মূসা আল হাফিজ ও অধ্যাপক আব্দুল জলিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাঠ্যপুস্তক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ