পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : বিতর্কিত ধর্মহীন শিক্ষানীতি ও প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন-২০১৬ বাতিল এবং ইসলামবিরোধী স্কুল পাঠ্যবই সংশোধনের দাবিতে আগামী ১৬ মে সোমবার দেশব্যাপী জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম। গতকাল (সোমবার) এক বিবৃতিতে হেফাজত আমীর শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বলেন, হেফাজতের জেলা কমিটিসমূহের নেতৃবৃন্দ সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখিত স্মারকলিপি স্ব স্ব জেলা প্রশাসকের হাতে জমা দিবেন।
তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষানীতি ও প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের ক্ষতিকর দিক এবং স্কুল পাঠ্যবই থেকে ইসলামী ভাবাপন্ন লেখাসমূহ বাদ দিয়ে নাস্তিক্য ও হিন্দুত্ববাদের কোন কোন লেখা যুক্ত করা হয়েছে স্মারকলিপির মাধ্যমে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারকে সেটা জানাব। পাশাপাশি শিক্ষা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদ ও দফতরে এবং পাঠ্যবই রচনা ও সম্পাদনায় সংখ্যালঘুদের একচ্ছত্র প্রাধান্যতা বাতিল করে সেখানে ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক দিয়ে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে নিয়োগদানের বিষয়টিও উল্লেখ থাকবে।
হেফাজত মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে হেফাজত আমীর আরো বলেন, স্মারকলিপি জমাদানের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে জনমত তৈরি করাও আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা চাচ্ছি, প্রতিটি অভিভাবক যেন তাদের প্রিয় সন্তানরা স্কুলে কোন কোন বিষয়ে পড়াশোনা করছে এবং কী ধরনের আদর্শের দীক্ষা পাচ্ছে, সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন। একজন পিতা-মাতার এটা নৈতিক দায়িত্বও বটে। শিক্ষার বিষয়টা হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, শিক্ষার মাধ্যমেই একজন মানুষের চিন্তা-চেতনা, নৈতিকতা ও বিশ্বাস গড়ে ওঠে। আর বাংলাদেশের মুসলিম জাতিসত্তার দুশমনরা এই গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেই হাত দিয়েছে।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম সবসময় নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় যা হচ্ছে, এক কথায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধর্মহীন নাস্তিক্য ও হিন্দুত্ববাদের দীক্ষা দিয়ে গড়ে তোলার এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র। এই ধর্মহীন শিক্ষানীতির বিষয়ে আমরা শুরু থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতিকর ফল এর মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। প্রাইমারি থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ইসলাম ও মুসলিম ঐতিহ্যের লেখাগুলো বাদ দিয়ে তদস্থলে নাস্তিক্য ও হিন্দুত্ববাদের বিষয়াবলী যুক্ত করা নিয়ে উলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতা সোচ্চার প্রতিবাদ জানিয়ে আসলেও স্কুল-কলেজ ও ভার্সিটি পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বর্তমানে এ নিয়ে উল্লেখ করার মতো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এটা জাতির জন্যে অশনি সংকেত।
হেফাজত আমীর বলেন, সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মী নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের অবহিত করার চেষ্টা করবেন যে, বর্তমানে স্কুল পাঠ্যপুস্তকে ইসলামী ভাবধারার লেখা বাদ দিয়ে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের গরুকে মায়ের সম্মান, পাঁঠাবলির নিয়ম, হিন্দুদের তীর্থস্থানের ভ্রমণ কাহিনী এবং হিন্দু রীতিনীতি, পরিভাষা ও দেব-দেবীর নামে প্রার্থনা করার বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে। নামে মাত্র ধর্মশিক্ষার যে বই রাখা হয়েছে, সেখানেও ভুলে ভরা। কোরআনের আয়াত ও হাদীসের ভুল বানান ও ইসলামের ভুল নির্দেশনা। তাছাড়া সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে চলমান উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ইসলামী আক্বীদা-বিশ্বাস এবং দাড়ি-টুপি ও পীর-মাশায়েখ বিরোধী কাল্পনিক কাহিনীর প্রশ্ন জুড়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ মুসলিম ছাত্রছাত্রীকে ইসলাম বিমুখী ও হিন্দুত্ববাদের মহানুভবতা প্রকাশ পায়, এমন উত্তর লিখতে বাধ্য করা হয়েছে। পাশাপাশি স্কুল-কলেজের বর্তমান ইসলামবিরোধী শিক্ষাকে আইনি ভিত্তিদান এবং ক্বওমি মাদ্রাসাসমূহকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে সরকার প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন-২০১৬ নামে একটি বিতর্কিত খসড়া আইন প্রকাশ করে তড়িঘড়ি পাস করার উদ্যোগ নিয়েছে।
হেফাজত আমীর শিক্ষা নিয়ে এসব কর্মকা-কে বৃহৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও নৈতিক আদর্শের বিরোধী উল্লেখ করে সরকারের প্রতি অবিলম্বে এসব বন্ধের দাবি জানান। তিনি বলেন, শিক্ষা বিষয়ে আমাদের বর্তমান প্রতিবাদ কর্মসূচি স্তিমিত হয়ে যাবে, এমন ভাবার সুযোগ নেই। কারণ, শিক্ষার বিষয়টা আমরা গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও স্কুল পাঠ্যবইয়ে যা হচ্ছে, এ বিষয়ে চুপ থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ঈমান-আক্বীদা ও মুসলিম পরিচিতি হারাবে। তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে বক্তৃতা, বিবৃতি, স্মারকলিপি জমাদানসহ নানাভাবে বিষয়টাকে ব্যাপকভাবে আলোচনায় তুলে জনমত গড়ে তুলতে চাচ্ছি। এর মধ্যে সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি ও স্কুল পাঠ্যবই সংশোধনের বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে আমরা প্রতিবাদি আন্দোলনকে তীব্র করে তুলব, ইনশাআল্লাহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।