Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হিন্দুত্ববাদী বজরং দলের সমর্থকদের ফেসবুকে পিস্তল বিক্রির অভিযোগ

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী বজরং দলের সমর্থক কয়েকটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করার অভিযোগ ওঠেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বিষয়টি নিয়ে খোঁজ করার পরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির ওই পোস্ট সরিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক একজন সাংবাদিক অস্ত্র বিক্রির ওই বিজ্ঞাপনী ছবির স্ক্রিনশট পাঠিয়েছেন। বজরং দল যে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের যুব শাখা, সেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ জানিয়েছে, তাদের সংগঠন কখনই অবৈধভাবে অস্ত্র বিক্রি বা সংগ্রহের পরামর্শ দেয় না। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের প্রতিবেদনে যে সাংবাদিকের কথা উল্লেখ করেছে, সেই রাকিব হামিদ নায়েক জানিয়েছেন, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে তিনি প্রথম লক্ষ্য করেন যে, বজরং দলের সমর্থক একটি ফেসবুক পেজে পিস্তল আর দেশী পিস্তল, যাকে চলতি কথায় কাট্টা বলা হয়, সেগুলি বিক্রি করতে চেয়ে এক ব্যক্তি পোস্ট করেছেন। এর পর তিনি এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির কাজ করতে শুরু করেন। ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখেন সাংবাদিক রাকিব হামিদ নায়েক। এ সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইটও পরিচালনা করেন তিনি। নায়েক বলেন, ‘প্রথমে আমি ভেবেছিলাম যে ওটা একটা বিচ্ছিন্ন পোস্ট। কিন্তু তারপরে আমি বজরং দলের সমর্থক আরো কয়েকটি পেজে একই ধরনের পোস্ট লক্ষ্য করি। তখনই বিষয়টা নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। বেশিরভাগ পোস্টেই পিস্তল বা কাট্টার ছবিসহ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেয়া হয়েছে, যাতে আগ্রহীরা যোগাযোগ করতে পারেন। একটি পোস্টে আমি দেখেছি যে, পিস্তলের দাম কত সেটাও জানতে চেয়েছেন গ্রুপের অন্য এক সদস্য।’ হিন্দুত্ববাদী বজরং দলের সমর্থক পাঁচটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে তিনি মোট আটটি অস্ত্র বিক্রির পোস্ট দেখতে পান। এই গ্রুপগুলির কোনোটা পাবলিক গ্রুপ, কোনোটা ক্লোজড গ্রুপ। রাকিব হামিদ নায়েক বলেন, ‘একজন অস্ত্র বিক্রেতার সাথে আমি ক্রেতা সেজে হোয়াটসঅ্যাপে আলাপও করেছিলাম, এটা জানতে যে ওই বিজ্ঞাপনগুলো ভুয়া কি না। তাকে যখন আমি জিজ্ঞাসা করি ‘জিনিসটা’ পাওয়ার নিশ্চয়তা আছে কি না, ওই বিক্রেতা জবাব দেন তিনি অনেক জায়গায় ‘জিনিস’ পাঠিয়েছেন, যার মধ্যে রাজস্থান আর হরিয়ানার ফরিদাবাদের কথা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন। এবং এটাও বলেন যে, তিনি বজরং দলকেও ‘জিনিস’ দিয়েছেন।’ নায়েকের ব্যাখ্যা ‘জিনিস’ বলতে ওই পোস্টগুলিতে পিস্তল আর দেশী কাট্টা বোঝানো হয়েছে। একটা দেশী পিস্তলের জন্য তার কাছে ১১ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল। নায়েকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে তিনি কী করে নিশ্চিত হচ্ছেন ওই ফেসবুক গ্রুপগুলো আসলেই বজরং দলের সমর্থক? রাকিব হামিদ নায়েক বলেন, ‘প্রথমত গ্রুপগুলির নামে স্পষ্টই লেখা আছে বজরং দলের কথা। আর সেখানে যা যা পোস্ট হয়, আমি দীর্ঘদিন ধরে সেগুলোর ওপরে নজর রাখি। তাই এটা বুঝতে আমার অসুবিধা হয়নি যে গ্রুপের সদস্যরা বজরং দলের সমর্থক। তবে এটাও স্পষ্ট করে বলা দরকার যে, এগুলোর কোনোটাই কিন্তু বজরং দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ নয়। সেজন্যই বারবার বলছি এরা বজরং দলের সমর্থক, এবং কেউ কেউ বজরং দলের পদাধিকারীও।’নিরাপত্তা বিশ্লেষক দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলছেন, ‘বজরং দল যে তাদের অফিসিয়াল পেজ থেকে এসব করবে না, এটা খুব স্বাভাবিক। তবে ওই পোস্টগুলো দেখে মনে হচ্ছে হিন্দুত্ববাদীরা একটা হাওয়া তুলতে চাইছে যে দেখ, হিন্দুদের হাতেও এখন আগ্নেয়াস্ত্র আছে বা তারাও দরকারে পিস্তল বন্দুক ব্যবহার করবে। ‘মনে হচ্ছে হিন্দুত্বের সপক্ষে প্রচারের জন্যই এসব পোস্ট খুব সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে, না হলে দেশী পিস্তল বা কাট্টার জন্য কেউ ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয় না। ওসব অস্ত্র যাদের দরকার তারা ঠিকই জানে কোথায় গেলে তা পাওয়া যাবে।’ ফেসবুক এর আগেও ভারতে সমালোচনার মুখে পড়েছে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের উস্কানিমূলক এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর পোস্ট এবং ভিডিও না সরানোর অভিযোগে। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ