পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের খাদ্যভান্ডার উত্তরের চাষাবাদে ব্যাপক পরিবর্তন : ধান গম আলু ও মসলা জাতীয় আবাদের পাশাপাশি নীরব বিপ্লব নানা ফল-ফলারীতে
রেজাউল করিম রাজু : মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে ভেতরে ভেতরে দারুণ ভাবে বদলে যাচ্ছে উত্তরের কৃষি অর্থনীতি। বাম্পার ধান চাল হবার কারণে দেশের খাদ্যভান্ডার বলে পরিচিত উত্তরের চাষাবাদে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। দেখে শেখা আর ঠেকে শেখার মধ্যদিয়ে নিজেদের প্রয়োজনে এনেছে চাষাবাদে রকম ফের।
সোনালী ধান, গম, আলু আর মওসুমী শাক-সবজি কিছু মশলা জাতীয় আবাদের পাশাপাশি নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে নানা রকম ফল ফলারীতে। শীত প্রধান দেশের স্ট্রবেরী, আপেল কুল, থাই পেয়ারা, মাল্টা, কমলা, ড্রাগন কি হচ্ছে না এখানকার সোনাফলা মাটিতে। এসব আবাদে ভাগ্য বদলে গেছে অনেকের। কৃষি অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। আগে মূলত আমন ধান নির্ভর ছিল আবাদের একটা বড় অংশ। জমি ছিল এক ফসলা বৃষ্টিনির্ভর। সমন্বিত সেচ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কারণে এক ফসলা জমিতে এখন সারা বছর আবাদ হয়। সনাতন চাষাবাদ পদ্ধতির স্থলে যোগ হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি আর বীজ, কীটনাশক। ফলে উঁচু নিচু পরিত্যক্ত কোন জমি আর খালি থাকছে না। কিছু না কিছু হচ্ছে। ফলে উত্তরের মাঠে সবুজতা আর কৃষকের ব্যস্ততা সারা বছর ধরে। ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষি সংশ্লিষ্ট সরকারী স্বায়ত্ত শাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের। তাদের আর ঘরে বসে থাকার জো নেই। আগে কৃষক পরামর্শের জন্য মাঠ কর্মীদের খুঁজলেও এখন দিন বদলেছে মাঠকর্মী খুঁজে ফিরছে আবাদকারীদের। উপরের চাপটাও এখন অনেক বেশী। উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান গম পাট ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ সার নিয়ে কৃষি বিভাগের লোকজন যাচ্ছে কৃষকের নাগালে। আবার ফল আর উদ্যান গবেষণা বিভাগের লোকজন যাচ্ছে নতুন প্রজাতি আর প্রযুক্তি নিয়ে। আর সব মিলিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কিছু। সরকারী প্রণোদনাও কাজে লাগছে। জৈব সার ব্যবহার ও কীটনাশকের বদলে আলোকফাঁদ, পারচিং পদ্ধতিতে পোকামাকড় দমন করছে।
এই বদলে যাবার গল্পটা খুব বেশী দিনের নয়। উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে ক্রমাগত লোকসানের মুখে ঋণগ্রস্ত হয়ে ধুঁকছিল কৃষক। আর আবাদ করবে না বলে অভিমান করছিল। কিন্তু অভিমান করে বসে থাকতে পারেনি। কারণ, কৃষি যে তাদের রক্তে মিশে আছে কৃষি ধ্যান-জ্ঞান। মাটির ঘ্রাণ তাদের কাছে টানে। সেই টানের কাছে হার মেনে অভিমান ভুলে মাঠে নামে। লাঙ্গল চালায়, ঘাম ঝরিয়ে ফসল ফলায়। অনেক কষ্টের মধ্যে সদ্য ওঠা ফসল সকল মনোকষ্ট ভুলিয়ে দেয়। লাভ-লোকসান যাই হোক তাতে সাফল্য খোঁজে।
রাজশাহী অঞ্চলের আমের খ্যাতি বহু প্রাচীন। চাহিদা ও দাম বেড়ে যাবার সাথে সাথে বেড়েছে বাগান। বাগানের পরিমাণ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এক সময় আমের অফ ইয়ার অন ইয়ার ধারা চালু থাকলেও এখন প্রযুক্তির কল্যাণে সেটি আর নেই। আম উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে চলছে গবেষণা। আম চাষীরা শিখে ফেলেছে নানা কৌশল। ফলে প্রতি বছর আমের মুকুল আসছে গাছ ভরে। উৎপাদনও ভাল। মাঝখানে কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর কারণে আমে ফরমালিন কার্বাইডসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে আমকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেও সরকারী কঠোর পদক্ষেপ ও প্রচারণায় সে অবস্থা আর নেই। বরং প্রযুক্তির ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছে। ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করে ভোক্তাদের কাছে নিরাপদ আম সরবরাহ করে আস্থা ও দাম দুটোই পাচ্ছে। বিদেশে রফতানীর বড় স্বপ্ন দেখছে আম চাষীরা। ধানের থেকে দাম বেশী বলে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোরের শত শত বিঘা জমিতে নতুন আম বাগান গড়ে উঠেছে। এ অঞ্চলে এখন প্রতি আম মওসুমে হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। এর পরিমাণ বাড়ছে। নতুন বাগানগুলোয় আম বাজারে এলে বেড়ে যাবে বাণিজ্যের পরিমাণ। বৃহত্তর রাজশাহী দিনাজপুরের আম, লিচুর পাশাপাশি আসছে রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম। দু’চার বছরের মধ্যে বনেদী হয়ে আম অর্থনীতিতে যোগ হবার ইঙ্গিত দিচ্ছে রংপুর অঞ্চলে হাঁড়িভাঙ্গা আম বাগানের বিস্তৃতি। আমের পাশাপাশি লিচু, বিদেশী জাতের পেয়ারা-কুলসহ নানা জাতের ফলের উৎপাদন বেড়েই চলেছে। দশ বছর আগে স্ট্রবেরী নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মঞ্জুর হোসেন। জাপানে উচ্চতর গবেষণা করতে গিয়ে সেখান থেকে চারা নিয়ে এসে দীর্ঘ গবেষণা করে দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দিয়েছেন স্ট্রবেরী। তিনি স্বপ্ন দেখতেন আমাদের দেশে ভ্যান গাড়িতে ফেরী করে স্ট্রবেরী বিক্রি হবে। তা পূরণ হয়েছে। শীতকালে লেবু জাতীয় দেশীয় ফল থাকে না বললেই চলে। আপেল, কমলা, আঙ্গুর সবই আসে বাইরে থেকে। কৃষি বিভাগের দ্বিতীয় শস্য বহুমুখী করণ প্রকল্পের আওতায় বারি মাল্টা-১ চাষ করে ব্যাপক সাফল্য মিলেছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে মাল্টা চাষের সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে যে মাল্টা হচ্ছে তা দারুণ রসালো এবং বাজারে আমদানী করা যে কোন মাল্টার চেয়ে অনেক বেশী মিষ্টি। পরীক্ষামূলক আবাদে সফলতা পেয়ে দারুণ খুশী কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। খুব শিঘ্রই এর বিস্তৃতি ঘটবে। আমাদের নিজস্ব ফলের তালিকার সাথে বিদেশী ফল যোগ হচ্ছে। আম লিচু পেয়ারা স্ট্রবেরী মাল্টা ড্রাগনসহ নানা ফল নিয়ে হর্টিকালচার বিভাগ বেশ খুশী তাদের সাফল্যে। তবে কৃষি বিভাগের একটি পক্ষ বিভিন্ন জাতের ফলের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় ফসলী জমি কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন। ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে ধান উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে আমসহ বিভিন্ন ফল উৎপাদনে মনোযোগী হয়ে পড়েছে। আবাদ করছে কলাই-মশুর-মটরসহ বিভিন্ন চৈতালী ফসলে। সব হচ্ছে ধানী জামিতে। এতে হুমকীর মুখে পড়েছে বাংলাদেশের শস্যভা-ার নামে খ্যাত উত্তরের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা। যদিও উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ধান দিয়ে ফলন বাড়িয়ে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্বাভাবিক রাখলেও কৃষকের কাছ থেকে কমে যাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমি।
রাজশাহী কৃষি বিভাগের এক তথ্যে দেখা যায় দু’হাজার দশ সালে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল দু’লাখ দু’হাজার হেক্টর জমি। সেখানে চৌদ্দ সালে নেমে আসে একলাখ আশী হাজার হেক্টরে। কয়েক বছরে আমবাগান তৈরীর জমিতে গেছে পনের হাজার বেশী হেক্টর জমি। এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক’জন শিক্ষক আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট ইউনিয়নে গবেষণা করে দেখেছেন খরা মওসুমে ধানের উৎপাদন খরচ বেশী হওয়ায় ধান চাষ বাদ দিয়ে পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ ভাগ জমিতে তারা আমের বাগানে রূপান্তর করেছেন। তাছাড়া আম উৎপাদনে খরচ কম লাভ বেশী। এমন চিত্র বরেন্দ্রের সব জেলায়। কৃষি বিভাগের মতে, শুধু ফলের বাগান নয় ঘরবাড়ি নির্মাণ, রাস্তা, ইটভাটা, পুকুর খননসহ বিভিন্ন ভাবে চলে যাচ্ছে চাষাবাদের জমি। বিশিষ্ট উদ্ভিদ বিজ্ঞানী লেখক প্রফেসর এবনে গোলাম সামাদের ভাষ্য হলোÑ ধানের তিন ফসলী জমি যেভাবে আম বাগান আর ফল বাগানে রূপান্তর হচ্ছে, তা খুব একটা ইতিবাচক খবর নয়। ধান চাষে লোকসানের মুখে পড়ে কৃষক এমনটা করছে। আমের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা যথেষ্ট হওয়ায় মানুষ ঝুঁকছে। তাছাড়া একটা আম বাগান হয়ে ওঠে কয়েক পুরুষের সম্পদ। অন্য চাষাবাদের চেয়ে খাটা খাটুনি কম। ধান চাষের জমি যেভাবে কমছে তাতে খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেবে। মনে রাখতে হবে আম বা অন্য ফল আমাদের প্রধান খাদ্য নয়। প্রধান খাদ্য ফসল হলো ধান। ব্যক্তি মানুষ সবসময় নিজের আর্থিক লাভের কথা ভাবে। আর তার এই ভাবনাই পরিচালিত করে তার অর্থনৈতিক কাজ-কামকে। সে কখনই দেশের কথা ভেবে তার অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করতে পারে না এবং করেও না। তাই ভাবতে হবে রাষ্ট্রকে। জমির মালিক তার জমিতে ধান লাগাবে না আম লাগাবে সেটি তার ইচ্ছের উপর ছেড়ে দেয়া হলে তা বিপর্যয় ডেকে আনবে। কৃষি বিভাগের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা নিজ নিজ গবেষণা আর সাফল্য নিয়ে ব্যস্ত। যেমন ধানের বাম্পার ফলন গমের ভাল আবাদ নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা হচ্ছে। তেমনি ব্যাপক ভাবে ফলের বাগান বেড়ে যাওয়ায় হর্টিকালচার বা ফল গবেষণা কেন্দ্র খুশীতে বাকবাকুম। আমরা ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্তমান সাফল্য নিয়ে উল্লসিত। বাস্তবতা হলো বর্তমানের কথা ভেবে কোন জাতি টিকতে পারে না। বিষয়টা রাষ্ট্রকে ভাবতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।