পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আমরা আমাদের কৃষি পণ্যের উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছি না, বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে উৎপাদন মার খাচ্ছে। আবার ভালো ফসল ফলিয়ে বাজারে তুলতেই মধ্যস্বত্বভোগী, মুনাফালোভী পাইকারদের দাপটে হচ্ছি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা কৃষকরা ভালো নেই। আমাদের খোঁজ কেউ রাখেনা।’ অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে কথাগুলো বললেন যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের কৃষক মো. লিয়াকত আলি।
শুধু তার কথা নয়, শার্শার উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের শালকোনা গ্রামের মো. আলম ও বাবুল আকতারসহ প্রায় সব সাধারণ কৃষকের। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কৃষিক্ষেত্রে বিরাট সম্ভাবনাময়। অথচ যথাযথ উদ্যোগের অভাবে অঞ্চলটি কৃষিক্ষেত্রে পড়েছে নাজুক অবস্থায়। এ অঞ্চলের মাঠে মাঠে বিভিন্ন ফসলের সবুজের অপরূপ সৌন্দর্য তৈরী করার ধারক কৃষককুল ফসল উৎপাদনে বিরাট সফলতা আনতে সক্ষম হলেও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না। লাভবান হচ্ছেন কৃষকের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে উৎপাদিত ফসলে মধ্যস্বত্বভোগীরা।তাছাড়া সরকারের কৃষি উন্নয়ন একেবারেই ঢিলেঢালা। পরিকল্পনা আছে, নেই বাস্তবায়ন। রয়েছে বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব। যার জন্য কৃষক পাচ্ছেন না কৃষি পণ্যের উপযুক্ত মূল্য। দিনে দিনে এগিয়ে যাবার চেয়ে তারা অভাবগ্রস্ত ও দায়দেনায় জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির ভিত।
কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক সূত্র জানায়, অর্থনীতির ভিত দুর্বল হওয়ায় অস্থিরতার সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা এর জন্য ফসলের উপযুক্ত মূল্য প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা, মধ্যস্বত্বভোগীদের বেপরোয়া দাপট ছাড়াও সুদের কারবারি ও ক্রেডিট প্রোগ্রামের এনজিওদের অপতৎপরতাকে দায়ি করেছেন। গ্রামে বাস করা কৃষকসহ অধিকাংশ মানুষ বর্তমানে আর্থিক কষ্টে রয়েছেন। তারা দেখছেন ঘোর অন্ধকার। কৃষি ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষিখাতে সরকারের বহুমুখী পরিকল্পনা আছে। কিন্তু যথাযথ বাস্তবায়নের অভাব রয়েছে। যার জন্য কৃষিতে শতভাগ সাফল্য আসছে না। সরকারের নির্দেশনাও ছিল কৃষিনির্ভর তৃণমূল অর্থনীতির কাঠামো মজবুত করার। কিন্তু বাস্তবে কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের সকল কর্মকর্তা একযোগে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হওয়া এবং সমন্বয়ের অভাবে কৃষকের সার্বিক স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে না বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। গত মৌসুমের ধান, সবজি, পাটের উপযুক্ত মূল্য পাননি কৃষকরা। তাদের কথা, একমণ ধান উৎপাদন করতে জমি চাষ, বীজ, চারা লাগানো, পরিচর্যা, সার, কীটনাশক, সেচ, ধান কাটা ও মাড়াইসহ খরচ পড়ে ন্যুনতম ৭শ’ টাকা। সেই ধান বাজারে বিক্রি হয় ৬৫০ থেকে ৭২০ টাকা। অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। সূত্র মতে, কৃষকরা সাধারণত একটা ফসলের অর্থ দিয়ে পরবর্তী ফসলের আবাদ করে থাকেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে কৃষকরা পড়েন বিপদে।
এ অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। যশোর, খুলনা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ ১০ জেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১৩ লাখ ১৪ হাজার ৬৫ হেক্টর। ভূমিহীন, প্রান্তিক, ক্ষুদ্র, মধ্যম ও বড় চাষির সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। অঞ্চলটির সিংহভাগ ভূমি উঁচু ও বন্যামুক্ত। বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের জন্য মাটি সমৃদ্ধ। সূত্র আরো জানায়, এ অঞ্চলে সাময়িক পতিত ও স্থায়ী পতিতসহ অনাবাদি জমি রয়েছে ১ লাখ হেক্টরেরও বেশি। যার পুরোটা আবাদের আওতায় আনার ক্ষেত্রে কোন পরিকল্পনা নেই কৃষি বিভাগের। অর্থনৈতিক অঞ্চল অথচ অবহেলিত হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষি খাতের উন্নয়নে সরকারকে মাষ্টার প্ল্যান করা দরকার। দরকার কৃষকের উৎপাদিত কৃষি পণ্যে ন্যায্য ও উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করা। পাশাপাশি কোথায় কি সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করে সমাধান করা এবং এনজিও, সুদের কারবারি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগাম টেনে ধরা জরুরি। তা না হলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরো দুর্বল হয়ে চরম নাজুক অবস্থায় পৌঁছুবে বলে আশঙ্কা কৃষি অর্থনীতি সংশ্লিষ্টদদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।